ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

‘দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর’

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
‘দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

আজ  বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব।

গতকাল ফজরের নামাজের পর তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরুব্বি পাকিস্তানের মাওলানা মোহাম্মদ এহসান আম বয়ান (সর্ব সাধারণের জন্য) দিয়ে সভাপতিবিহীন ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। উর্দুতে দেওয়া তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল মতিন। এরপর ভারতের মাওলানা আহমদ লাট উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে ঈমান, আমল ও আখলাক বিষয়ে বয়ান করেন। গতকাল বিশ্বের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমার মাঠে। এতে ইমামতি করেন কাকরাইলের হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। জুমার পর বয়ান করেন মাওলানা শওকত আলী। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। বাদ মাগরিব প্রথমে বয়ান করেন পাকিস্তানের হাজি আবদুল ওয়াহাব। এরপর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সাদ।

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের ইজতেমার দুই পর্বেই উল্লেখিত মুরুব্বিরা ছাড়া মাওলানা ইসমাইল গুজরাটী, মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল, বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা ওমর ফারুক ও মাওলানা মাহবুবুল হকসহ প্রায় ১৫ জন আলেম বিভিন্ন পর্যায়ে বয়ান করবেন।

প্রথম দিনের উদ্বোধনী বয়ানে মাওলানা মোহাম্মদ এহসান বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে।
যুগে যুগে নবী-রাসূলরা (সা.) দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে পাঠিয়েছিলেন। নবী-রাসূলদের (সা.) আল্লাহ নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আজ  তিনি নেই। এ কাজের জিম্মাদারী এখন তার উম্মতের ওপর। শেষ নবীর উম্মত হিসেবে তাই আমাদের দাওয়াতের কাজে বেশি বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে। এ কাজ থেকে মুখ লুকিয়ে রাখার কোনো অবকাশ নেই। আজ  মুসলমানদের মাঝে দাওয়াতের কাজ কমে গেছে বলেই মুসলমানরা পদে পদে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে।

জুমাপূর্ব বয়ানে হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, জুমার দিন, একটি পবিত্র দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এদিনই হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। তাই আমাদেরকে বেশি বেশি প্রচেষ্টা করতে হবে, আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আমরা যা করবো আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য করবো। আল্লাহপাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দ্বীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।

মাগরিবের নামাজের পরের বয়ানে ভারতের মাওলানা সাদ বলেন, আল্লাহতায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহতায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আলাহপাকের এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ তিনি কোরআনে কারিমে বলে দিয়েছেন, পৃথিবীতে যতো কিছু আছে তা সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহপাকের স্বত্ত্বা চিরস্থায়ী, যার কোনো শুরু নেই আর শেষও নেই। আল্লাহপাক পূর্বে ছিলেন যার পূর্বে কোনো কিছু ছিল না এবং তিনি সবকিছুর পরে থেকে যাবেন যার পরে আর কিছুই থাকবে না। সৃষ্টিকূলের শুরু আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কোনো শুরু নেই। প্রকাশ্যে যা কিছু হয় তা তিনি দেখতে পান আর গোপনে যা কিছু হয় তাও তিনি দেখতে পান। আলাহপাকের দৃষ্টির বাইরে একটি অনুও নেই।

তিনি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা মহান শক্তিশালী। তিনি সব কিছু জানেন। তার জ্ঞানের বহির্ভূত কোনো জিনিস নেই। এমন এক সময় ছিলো- তখন পৃথিবীর কোনো বস্তু সম্বন্ধে আলোচনা ছিলো না কিন্তু তখনও আল্লাহপাক ছিলেন। যখন মানুষ ছিলো না, মানুষ সম্পর্কে কোনো আলোচনাও ছিলো না। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি খেজুর গাছ হতে খেজুর বের করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন করতে পারেন।

মাওলানা সাদ বয়ানের শেষ দিকে এসে বলেন, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার জীবন। মানুষকে এই ধোঁকার জীবন থেকে বেঁচে চলতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলছেন, তুমি এসব কিছু হতে ফিরে আমার দিকে আসো, আমাকে পেতে চেষ্টা করো, তুমি যদি আমাকে পেয়ে যাও তা হলে মনে করবে তুমি দুনিয়ার সব কিছু পেয়ে গেছো। আর যদি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলো তাহলে মনে রাখবে তুমি পৃথিবীর সব কিছু হারিয়ে ফেলেছো। তাই একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করাই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। তোমরা কোথায় পলায়ন করছো? তোমরা কোথায় ব্যস্ত হচ্ছো? এসো, সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে এসো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।