ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রোজার বৈশিষ্ট্য ও আমাদের করণীয়

তাযকিরা খাতুন রিনি, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
রোজার বৈশিষ্ট্য ও আমাদের করণীয়

আল্লাহর হুকুম মেনে চলার জন্য বিশেষ ধরনের মানসিক দৃঢ়তা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট ও গুণাবলীর প্রয়োজন। রমজানের রোজা মানুষকে এই চারিত্রিক গুণাবলী সৃষ্টিতে বিশেষ সহায়তা করে।

রমজান একজন মুসলমানের মাঝে যে চারিত্রিক গুণাবলী সৃষ্টি করে তা যেমন চমকপ্রদ তেমনি বিস্ময়কর। রমজানের একমাস রোজা রাখার আগে একজন মুসলমানের যে অবস্থা ছিল একমাস পরে তার আর সে অবস্থা থাকে না। তার মধ্যে যে বিশেষ পরিবর্তনগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-

এক. সে নিজেকে আল্লাহর একজন একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে গণ্য করতে থাকে।

দুই. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া তার জীবনের দ্বিতীয় কোনো লক্ষ্য থাকে না।

তিন. যে কোনো অবস্থায় যে কোনো সময় আল্লাহর হুকুম মেনে চলার জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত রাখে।

চার. আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সব কিছু দেখেন, জানেন ও শুনেন এ অনুভূতি তার মধ্যে বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ফলে আল্লাহর হুকুমের বিরোধী কোনো কাজ করার ক্ষমতাই সে হারিয়ে ফেলে।

পাঁচ. আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুর কর্তৃত্ব সে অস্বীকার করতে শেখে, সারাদিন সে না খেয়ে থাকে। তার সামনে ভালো ভালো খাবার আসে। পরিবেশের চাপ তাকে খেতে উৎসাহিত করে। শরীরের অভ্যন্তরীণ চাপ তাকে খাবার প্রেরণা যোগায়। কিন্তু কারোর সামনে সে মাথানত করে না। বরং পরিবেশ ও বাইরের সমস্ত প্রভাব ও শক্তিকে সে আল্লাহর হুকুমের অনুগত করে। এভাবেই রমজানের একমাসের মধ্যে সে তার নিজের ও আশপাশের সবকিছুর ওপর আল্লাহর হুকমের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

ছয়. রোজা মুসলমানের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে গুণটির সৃষ্টি করে তা হচ্ছে, এর মাধ্যমে বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে একটা একনিষ্ঠ সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। বান্দা একদিকে স্বেচ্ছায় ও সানন্দে আল্লাহর কর্তৃত্ব মেনে নেয়। তার সব হুকুম মেনে চলতে থাকে। আর অপরদিকে আল্লাহ ও বান্দাহর সমস্ত কাজ সুনজরে দেখতেও পছন্দ করতে থাকেন। তাই সারাদিন অভুক্ত থাকার কারণে রোজাদারের মুখে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, তা আল্লাহর কাছে মৃগণাভির চাইতেও সুগন্ধময়। তাই হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান’ রোজাদারের জন্য আল্লাহর ঘোষণা প্রমাণ করে যে, রোজা আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করে।

বলা চলে, রোজা সামগ্রিকভাবে উপরোল্লেখিত গুণগুলোর উৎস। এই গুণগুলো সৃষ্টির জন্য আল্লাহতায়ালা রোজার ব্যবস্থা করেছেন। তবে, রোজা হতে যে সুফল লাভ করা যায় তা রোজাদারের নিয়ত, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহের ওপর নির্ভর করে।

যে ব্যক্তি এর উদ্দেশ্য জানতে ও ভালো করে বুঝতে পারবে এবং তা দ্বারা মূল্য উদ্দেশ্য লাভের চেষ্টা করবে সে তো কম বেশি মোত্তাকি নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু যে এর উদ্দেশ্যই জানবে না এবং তা হাসিলের জন্য চেষ্টা করবে না, রোজা দ্বারা তার কোনো উপকারই হবার আশা নেই।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করবে না, তার শুধু খানাপিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই। ’ অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া তার ভাগ্যে অন্য কিছুই জোটে না। তেমনি রাত্রিতে ইবাদতকারী অনেক মানুষও আছে, যারা রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারে না।

অতএব, এ থেকে বুঝা যায় যে, শুধু ক্ষুধার্ত ও পিপাসায় কাতর থাকাই ইবাদত নয়। এটা আসল ইবাদতের উপায় অবলম্বন মাত্র। আর আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর আইন ভঙ্গের অপরাধ না করা এবং যে কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, আর যতদূর সম্ভব নিজের আমিত্বকে নষ্ট করা যায়; আল্লাহকে ভালোবেসে সে সব কাজ ঐকান্তিক আগ্রহের সঙ্গে পালন করা হলো আসল ইবাদত।

তাই রমজান মাসে আমাদের করণীয় হলো, শুধু অভুক্ত থাকা নয়। শুধু পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গ থেকে বিরত থাকা নয়। রোজা রেখে আত্মপরিশুদ্ধির মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন করা। এ পদ্ধতিতে আমরা আল্লাহর নিকটতম বান্দা হতে পারবো। আল্লাহ সৃষ্ট সব কিছুর ওপর একমাত্র আল্লাহর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে নিজেকে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দাহ্য় পরিণত করে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘন্টা, জুন ২৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।