আমেরিকায় মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ করার দাবি জানিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আমেরিকা অভিবাসীদের নিয়ে গড়ে ওঠা একটি দেশ।
ক্যালিফোর্নিয়ার সানবার্নাডিনোতে বন্দুক হামলাসহ পশ্চিমাবিশ্বে সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার দায়ে তীব্র ইসলামবিদ্বেষ থেকেই ট্রাম্পের এই বক্তব্য। এখন প্রশ্ন হলো, ট্রাম্পের এমন মনোভাব কী আমেরিকাবাসীর প্রতিনিধিত্ব করে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, শুধু আমেরিকা নয়- মুসলমানরা গণহারে সন্ত্রাসকে লালন করেন এটা বলা যাবে না।
গত কয়েক বছরে করা বিভিন্ন গবেষণা ও চালানো জরিপ দেখে অন্তত এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ওই সব জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সেখানে বসবাসরত মুসলমান নাগরিকরা। এই অভিবাসী মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে আমেরিকার হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা অন্য সাধারণ মার্কিনিদের মতোই আচরণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের কিছু বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছে সিএনএন। যা তাদের সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণার বিপরীত।
এক. আমেরিকার মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা খুব কম। যেহেতু সেখানে ধর্মভিত্তিক আদমশুমারি করা হয় না, সেহেতু সেখানে বসবাসরত মুসলমানদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ধারণা করা হয়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মুসলমানের হার ১ শতাংশ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ১ শতাংশে।
দুই. অনেক মার্কিনির চেয়ে মুসলনমানরা বেশি শিক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইহুদিরা। এর পরেই মুসলমানদের অবস্থান। সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের চেয়ে সেখানকার মুসলমানদের ডিগ্রি নেয়ার হারও অনেক বেশি।
তিন. মার্কিন মুসলমানদের মধ্যে লিঙ্গসমতা বিদ্যমান। যেখানে অনেক মুসলিম প্রধান দেশে নারীদের ভিন্নচোখে দেখা হয়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের মাঝে এমন মনোভাব নেই বললেই চলে। মার্কিন মুসলিমদের মাঝে প্রায় ৯০ শতাংশই নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ধর্মাবলম্বী নারীদের চেয়ে মুসলমান নারীরা বিভিন্ন পেশায় উৎকর্ষের সঙ্গে কাজ করছেন।
চার. অনেক মুসলমান বহু বছর ধরে অর্থাৎ জন্মের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন। গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সময় আফ্রিকা থেকে দাস আনা হয়েছিল দেশটিতে। সেই দাসদের এক-তৃতীয়াংশই ছিল মুসলমান।
পাচঁ. মুসলমানরা শুধু বড় শহরে একতাবদ্ধ হয়ে বাস করে না। দেশটির ছোট-বড় সব শহরেই মুসলমানদের বসবাস। ১৯২৯ সালে নর্থ ডাকোটার রস শহরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়।
ছয়. তারাও খ্রিস্টানদের মতোই ধার্মিক। মুসলমানদের নিয়ে সাধারণ ধারণা হলো, তারা ভীষণ ধর্মপরায়ণ হয়ে থাকেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানদের অর্ধেক বলছেন, সপ্তাহে শুধু শুক্রবার প্রার্থনার জন্য মসজিদে যান তারা। আর এখানেই খ্রিস্টানদের সঙ্গে দারুণ মিল তাদের।
সাত. উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও মুসলমানরা আসলে তা নয়। ধারণা করা হয়, মুসলমান মাত্রই পবিত্র কোরআনের বাণী মেনে জীবনযাপন করেন। এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশ মার্কিন মুসলামান মনে করেন, ইসলাম ধর্মের বিধান পালনের বহু উপায় আছে।
আট. কিছু মুসলমান সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগে মোট ১০৯ জন মার্কিন মুসলমান নাগরিককে শনাক্ত করা হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে মার্কিন মুসলমানদের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৫০ জন। এর সঙ্গে তুলনা করলে শুধু গত বছরই সাধারণ মানুষের ওপর অন্য ধর্মাবলম্বীদের গুলীবর্ষণের কারণে নিহত হয়েছেন ১৩৬ জন। এই সংখ্যা ১৩ বছর ধরে কথিত মুসলিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহতের সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি।
নয়. মুসলমানরা সব সময়ই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ডিউক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা অনুযায়ী, বেশিরভাগ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও অপরাধীকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করেছেন মার্কিন মুসলমান নাগরিকরা। কিছু জরিপ বলছে, যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার থেকেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানরা। আর সে কারণেই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী খুঁজে বের করতে পুলিশকে সহায়তা করেন তারা।
দশ. মুসলমানরা তুলনামূলকভাবে রাজনীতিবিমূখ। যেখানে ইহুদিরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু মুসলমানদের মাঝে এ মনোভাব নেই বললেই চলে। তবে হ্যাঁ, তারা একতাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে।
-অন ইসলাম অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এমএ/