মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন। আরবি ও বাংলা সাহিত্যে বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি নাম।
দীর্ঘদিন মাসিক রাহমানী পয়গাম, মাসিক আল হেরা ও সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানের সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লেখেন সমসাময়িক বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ। অনুবাদ করেছেন অর্ধ শতাধিক গ্রন্থ। তন্মধ্যে সিরাত বিষয়ক- ‘ত্রিভুবনে প্রিয় মুহম্মদ সা.’, ‘প্রিয় নবীজীর মা বিবি কন্যা’, ‘হযরত মুহাম্মদ সা. আমাদের বিপ্লবের নকশা’, ‘হযরত মুহাম্মদ সা. ও আমাদের জীবন’, ‘মুমিনের ভালোবাসা হযরত মুহাম্মদ সা. (অনূদিত)’, মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ সা. (অনূদিত)’ ও হযরত মুহাম্মদ সা. এই পৃথিবীকে কী দিয়েছেন (অনূদিত)’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৬৭ সালে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় জন্ম নেয়া মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন চলতি রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে নবী জীবনের নানাদিক নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। আলাপাচারিতায় ছিলেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ ও আতাউর রহমান খসরু
বাংলানিউজ: একজন মুমিনের জন্য সিরাতচর্চা অপরিহার্য কেন?
যাইনুল আবিদীন: সিরাত অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ জীবন। আজকের ভাষায় যাপিত জীবন। বিশ্বাস থেকে শুরু করে একজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত জীবন পর্যন্ত সবকিছু মহান আল্লাহতায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে নবী জীবনে উত্তম আদর্শের কথা বলেছেন, তা দ্বারা সামগ্রিক সুন্দর আদর্শের কথাই বলেছেন। পৃথিবীতে মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করতে হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করা ব্যতীত সম্ভব নয়। সুতরাং একজন ব্যক্তির মুমিন হওয়া, মুসলিম হওয়া এবং মুমিন হিসেবে জীবনযাপন করা যতোটা তাৎপর্যপূর্ণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাতচর্চাও ঠিক ততোটা তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলানিউজ: সিরাতচর্চার পরিধি কতোটা বিস্তৃত? সিরাতচর্চায় জাগতিক জীবন ও ধর্মীয় জীবনের মাঝে কোনো তারতম্য আছে কী?
যাইনুল আবিদীন: ইসলামের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো, মুমিন জীবনে সিরাতচর্চা ও তার প্রতিফলন হবে সামগ্রিক। মোটা দাগে আমাদের জীবনকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ক. পার্থিব জীবন, খ. পরকালীন জীবন। পরকালীন জীবনের ব্যাপারে সাধারণভাবে কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা জানি ও মানি যে এক্ষেত্রে নবী জীবনের অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও মূলনীতি হলো, পার্থিব জীবনের শুদ্ধাশুদ্ধির ওপর নির্ভর করে পরকালীন জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা।
আপনি লক্ষ্য করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘একজন সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীর হাশর হবে নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও পুণ্যবান ব্যক্তিদের সঙ্গে। ’ এটা নবীর বাণী, হাদিস। এখন একজন সৎ ও সত্যবাদী ব্যবসায়ী কেমন হবে সে চিত্র যদি খুঁজতে হয়- তবে বলতে হবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ব্যবসা করেছেন। সুতরাং কেউ যদি সৎভাবে ব্যবসা করতে চান, তবে সে তার নবীর অনুসরণ করবে। একইভাবে হজরত সাহাবায়ে কেরাম যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির ঘোষণা লাভ করেছেন, তাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনিও ব্যবসা করেছেন। তিনি হলেন ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহু। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান রাজিয়াল্লাহু আনহুও ব্যবসায়ী ছিলেন। পৃথিবীর বিখ্যাত ও প্রধান চার মাজহাবের দুই ইমাম- হজরত আবু হানিফা ও ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি ব্যবসা করেছেন। এভাবেই যুগে যুগে প্রচুর মুসলিম মনীষী তাদের সামগ্রিক জীবন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শচর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
কিন্তু আমাদের দেশে সিরাতের বিষয় উপস্থাপিত হয় খণ্ডিত আকারে। শুধু সিরাত নয়; ধর্মকেই এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা যেনো মসজিদ-মাদরাসার বিষয়। এর সঙ্গে বাজার ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি আসলে এমন নয়। ইসলামে রয়েছে সব বিষয়েরই দিক-নির্দেশনা।
বাংলানিউজ: তাহলে সিরাতচর্চায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিৎ?
যাইনুল আবিদীন: আমি শুরু থেকে বলছি, চর্চা হওয়া উচিৎ সামগ্রিকভাবে। সিরাত বলতে আমরা ধরে নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিজীবন বা জীবনী। আসলে সিরাত কিন্তু এই জিনিস না। হাদিস সিরাতচর্চার একটি প্রধান দিক এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভাণ্ডার। কিন্তু হাদিসকে আমরা সিরাত হিসেবে দেখছি না। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এ বিষয় জানছে না। হাদিসের সামগ্রিক ভাণ্ডারই সিরাত। ব্যাপকভাবে চর্চাটা হচ্ছে না। কিন্তু তার অর্থ এই না যে, পৃথিবীর কোথাও হচ্ছে না। মাদরাসাকেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সিরাতের ব্যাপক চর্চা হচ্ছে। কিন্তু জনগণের স্তরে এসে তা আর হচ্ছে না। তাই আমার মনে হয়, প্রত্যেকের তার নিজ নিজ জায়গা থেকে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক যেনো সামগ্রিকভাবে সিরাতের চর্চা হয়।
বাংলানিউজ: একটি মুসলিম দেশের শিক্ষা কারিকুলামে সিরাতের অংশ কেমন হওয়া উচিৎ? মাদরাসা শিক্ষা সিলেবাসে সিরাতের যথেষ্ট উপস্থিতি আছে বলে মনে করেন কী?
যাইনুল আবিদীন: এখানে দুটি বিষয়। এক. বেদনাদায়ক দিক হলো- আমাদের জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে সামগ্রিক ইসলাম যেভাবে বিন্যস্ত হওয়া দরকার ছিলো তা হয়নি। এর কারণ হলো, যারা এই কারিকুলাম তৈরি করেছেন, আমাদের অনুমান তারা হয়তো পুরো ইসলামকে জানেন না। অথবা সামগ্রিক ইসলাম উপস্থাপনের ব্যাপারে তারা আন্তরিক নন। মুসলিম দেশ হিসেবে এর পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
দুই. আমাদের মাদরাসা শিক্ষার বিষয়। হাদিস পাঠদান সিরাতচর্চার একটি প্রধান উৎস। কিন্তু এটি যে সিরাতের প্রধান উৎস বিষয়টি আরো স্পষ্ট হওয়া উচিৎ। কেননা অনেক সময় শিক্ষার্থীগণও ঠিক জানেন না যে, সে সিরাতের এতো বিশাল একটি ভাণ্ডার অবগাহন করলো। একইভাবে কোরআনের তাফসির হিসেবে যখন জালালাইন শরিফ পড়ানো হয়, তখন এর ভেতর দিয়ে নবী জীবনের বিশাল দিক উঠে আসে। তখন কোরআন, হাদিস ও সমকালীন প্রেক্ষাপটের আলোকে সিরাতের বিশাল অংশ পাঠদান সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট করা হয় না।
একইভাবে মাদরাসা সিলেবাসে সিরাতের স্বতন্ত্র যে একটি গ্রন্থ পাঠদান করা হয় তাকে যথেষ্ট মনে করি না। বরং সিরাতের বিষয়গুলোকে ভাগ ভাগ করে পৃথক পাঠদানের ব্যবস্থা করলে আরো ভালো হতো।
বাংলানিউজ: সিরাতের খণ্ডিত চর্চা, শিক্ষা ব্যবস্থা তথা সিলেবাসে সিরাতের অনুপস্থিতি কিংবা অপর্যাপ্ত উপস্থিতি মুসলিম সমাজে কোনো প্রভাব ফেলছে কী?
যাইনুল আবিদীন: আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে বলবো, বড় প্রভাব যেটা ফেলছে তাহলো- সিরাতের সামগ্রিক ও ব্যাপক চর্চা না থাকায় যে কোনো ব্যক্তি ইসলামের নামে যে কোনো কথা আমাদের তরুণদের মাঝে ঢুকিয়ে ফেলছে। আর তরুণরাও সেটা সহজে গিলছে। তারা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যাপকভাবে জানতো, তাহলো যে কোনো কথা ইসলামের নামে উপস্থাপন করা হলে; তারা যাচাই করে দেখতো এটা আমার নবীর জীবনের সঙ্গে যায় কী না। যদি না মিলতো, তবে বুঝতে পারতো লোকটি প্রতারণা করছে, ধোঁকা দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত আমাদের দেশের যেসব শিক্ষিত লোক দেশ পরিচালনা করছেন, তারা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঠিকভাবে জানতো, তবে ইসলাম সম্পর্কে যেকোনো নেতিবাচক কথা তারা সহজে গিলতো না। কারণ, আমাদের নবীই ইসলাম। তিনি ইসলামের বাস্তবচিত্র। পৃথিবীর যেকোনো সচেতন মানুষ জানে এবং তারা বুঝতে পারছে যে, ইসলাম যদি কোনো ধরনের চরমপন্থাকে সমর্থন করতো, তবে দেঢ় হাজার বছর পর্যন্ত ইসলাম সম্প্রসারমাণ থাকতো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লাখ থেকে সামান্য বেশি কিছু সাহাবা রেখে গেছেন। আর এখন পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা একশো সত্তর কোটি থেকে দুইশো কোটি। অর্থাৎ ক্রমেই মুসলমানের সংখ্যা ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো নেতিবাচক চিন্তা এভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। মুসলমানরা যেখানে নিজেই খেতে পায় না। সুতরাং তারা ডলার দিয়ে ইসলাম ছড়াচ্ছে; এটা বলার সুযোগ নেই। এই সম্প্রসারণের বিষয়টি প্রমাণ করে যে, এখানে কোনো নেতিবাচক চরিত্র নেই। কিন্তু সিরাতের চর্চা না থাকায় এক শ্রেণীর মানুষ সহজেই গিলছে।
বাংলানিউজ: ইসলামের সঙ্গে, সিরাতের সঙ্গে এই দূরত্বের কারণ কী?
যাইনুল আবিদীন: বড় কারণটা ঐতিহাসিক। আমরা যদি, আমাদের ইতিহাসের পেছনের দিকে যাই, তাহলে খুব সরলভাবে দেখলেও দেখবেন; বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক হিন্দু জমিদার বাড়ি ও রাজবাড়ি আছে। প্রতিটি রাজবাড়িই কোনো না কোনো হিন্দু রাজা বা জমিদারের। মুসলিম সাধকরা এ দেশে এসেছেন এবং নানাবিদ সমাজসেবামূলক কাজ করে এ দেশের মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। কিন্তু গোড়া থেকে এ পর্যন্ত এ দেশের মুসলিমরা আর্থিকভাবে এতোটা সামর্থবান হয়ে ওঠেনি যে, তারা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম ও ইসলামি শিক্ষার চর্চা করতে পারে। জনসাধারণকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের এতো বেশি সংগ্রাম করতে হয়েছে যে, তারা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হতে পারেননি। ফলে বড় ধরনের একটি দূরত্ব পূর্ব থেকে চলে আসছে। বিশেষত অত্র অঞ্চলে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা ইসলামের বিপরিতমুখী একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে। যা এ দেশের ইসলাম ও মুসলমানের জন্য বিরাট সঙ্কট হিসেবে দেখা দেয়। এসব সঙ্কট মোকাবেলা করে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা টিকিয়ে যে রাখা হয়েছে তার পুরোটাই করতে হয়েছে খেয়ে না খেয়ে। ফলে এখনো আমরা ইসলামের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কাঠামো দাঁড় করাতে পারিনি। তবে আশার কথা হলো, বিগত এক যুগ বা দুই যুগ পূর্বের তুলনায় আমরা এখন অবস্থানে রয়েছি।
বাংলানিউজ: সাহিত্যভাণ্ডারে সিরাত সাহিত্যের অবদান কতোটুকু?
যাইনুল আবিদীন: তিনটি ভাষা সম্পর্কে আমার কিছু পড়াশোনা আছে। বাংলা, আরবি ও উর্দু। এ তিন ভাষায় সিরাত সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। অবদান বলতে বিষয় বৈচিত্র। একজন মানুষের জীবন যতোটা বৈচিত্রময় হতে পারে, ঠিক ততোটা বৈচিত্র নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী আলোচিত হয়েছে। যেমন, শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতার কলা-কৌশল নিয়ে দীর্ঘ কলেবরের বই বের হয়েছে। ভাষা সাহিত্যের মূল্যায়নে বিষয় বৈচিত্রও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সৌদি আরব থেকে, ‘নদরাতুন-নাইম’ নামে বারো খণ্ডে সিরাতগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যা এ সময়ের মর্যাদাশীল কাজ বলে মনে হয়। বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে সিরাত বিশ্বকোষ প্রকাশিত হয়েছে তার মান নদরাতুন নাইম থেকে ভালো। ভারতেও সিরাত বিষয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে। উর্দু ভাষায় সিরাতের ওপর যে কাজ হয়েছে, তন্মধ্যে বিখ্যাত হলো, সাইয়্যেদ সোলায়মান নদভি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আল্লামা শিবলি নোমানি রহমাতুল্লাহি আলাইহির ‘সিরাতুন-নবী। ’ আমার ধারণা, এর চেয়েও সমৃদ্ধ কাজ হলো- আল্লামা ইদরিস কান্ধলভি রহমাতুল্লাহি আলাইহির সিরাতে মোস্তফা। কারণ ইসলামের মৌলিক নীতিমালা তিনি যতোটা অনুসরণ করেছেন আল্লামা শিবলি নোমানি ও সাইয়েদ সোলাইমান নদভি সেটা অনুসরণ করেননি। ‘তরজমানুস সুন্নাহ’কে হাদিসের কিতাব মনে করা হলেও এটি মূলত একটি সিরাতগ্রন্থ।
এছাড়াও আরবি ভাষায় রচিত সিরাতের মৌলিক গ্রন্থগুলোর চমৎকার অনুবাদ উর্দু সাহিত্যে হয়েছে। বাংলা ভাষায় মনে করা হয়, সিরাতের উল্লেখযোগ্য ও মৌলিক কাজ হয়নি। এ ক্ষেত্রে আমি একটু প্রতিবাদ করেই বলবো, আমার ভাষায় রচিত হলেই যে তা মৌলিক কাজ। বিষয়টি আসলে তা নয়। আমার মতে, যদি অন্য ভাষার কোনো মৌলিক কাজ মান অক্ষুণœ রেখে অনুদিত হয়, তবে তাকেও মৌলিক কাজের মর্যাদা দেয়া উচিৎ। সিরাতচর্চায় আমাদের দেশে মাওলানা মুহিউদ্দিন খান উজ্জ্বল নক্ষত্রতুল্য। তিনি তার মাসিক মদীনার সিরাত সংখ্যা করে এ দেশে সিরাতচর্চা নতুন সংস্কৃতির সংযোজন করেছেন।
বাংলানিউজ: একজন লেখক হিসেবে আপনি আপনার সিরাতচর্চা নিয়ে কতটুকু তৃপ্ত?
যাইনুল আবিদীন: বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক ও কবি সৈয়দ আলী আহসানের সঙ্গে ইরানের বিখ্যাত সুন্নি লেখক যাইনুল আবিদীন রাহনুমার সাক্ষাৎ হয় প্যারিসে। তখন তিনি সৈয়দ আলী আহসানকে তার সিরাত বিষয়ক বিখ্যাত বই ‘পয়গম্বর’ উপহার দেন। তিনি দৈনিক ইরানের সম্পাদক ছিলেন এবং সুন্নিদের মধ্যে সেরা সম্পাদক তাকে বলা যায়। তিনি সেই গ্রন্থে লেখেন, আমি আমার নির্বাসন জীবনে আমার অন্তরের স্বস্তির জন্য একটি কাজ খুঁজছিলাম। অতপর আমি আমার নবীকে নিয়ে লেখলাম। তিনি সৈয়দ আলী আহসানকেও অনুরোধ করেন তিনি যেনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে লেখেন। এতে স্বস্তি পাবেন। তিনি দাবী করেন, আমি অন্তরের স্বস্তির জন্য লিখেছি। সিরাত লেখক সিরাতচর্চা করে অন্তরের স্বস্তি লাভ করেন। খেয়াল করলে দেখা যাবে, কোনো একটি বিষয়ে পাঁচটি বই পাওয়া গেলে সিরাতের একটি বিষয়ে শতাধিক গ্রন্থ পাওয়া যায়। যদি কোনো লাইব্রেরি বা ব্যক্তি উদ্যোগ গ্রহণ করে যে, সারা পৃথিবীতে সিরাতের ওপর রচিত গ্রন্থ দিয়ে একটি পাঠাগার করবে, তবে সম্ভব এবং পৃথিবীতে তা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। চমকে যাওয়ার ঘটনা ঘটবে।
মূলকথায় আসি, একই বিষয়ে পাঁচটি গ্রন্থ থাকার পরও আমি লিখছি কেনো? লিখছি আমার প্রশান্তির জন্য। আমি মনে করি, একজন মুসলিম লেখকের স্বার্থকতা হলো, সে তার লেখার মধ্যে নবীর নাম লেখে এবং নামের সঙ্গে দরূদ শরিফ লেখে। একটি লেখায় দশবার দরূদ থাকলে এবং তা এক লাখ মানুষ পাঠ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কতোবার দরূদ পাঠ করা হলো। একজন লেখক হিসেবে এটা আমার একটি টার্গেটের জায়গা। আমি আমার পরিচিত সম্পাদকদের বলে দেই যে, আমার লেখার যে কোনো অংশ ফেলে দিতে পারেন, কিন্তু লেখায় পুরো দরূদ শরিফটা রাখবেন।
তৃপ্তির ব্যাপারটা হলো, কোনো জীবিত ব্যক্তি তার কাজের ব্যাপারে তৃপ্ত হয় কীভাবে? আমার স্বপ্ন আছে, আমি আমার গদ্য যেখানে নিয়ে যেতে চাই, আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যদি সেখানে নিয়ে যেতে পারি; তবে আমার জীবনের সর্বশেষ সুন্দর কাজটি আমার নবীকে নিয়ে করবো। আমার বিশ্বাস, আমি সে জায়গাতে এখনো যেতে পারিনি। এজন্য সে কাজটিতে এখনো হাত দেইনি।
বাংলানিউজ: দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
যাইনুল আবিদীন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এমএ/
** সিরাত কাকে বলে?
** নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
** ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
** নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস
ইসলাম
বাংলানিউজকে মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন
পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে
... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।