ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্ব ইজতেমা

ঝোপ বুঝেই কোপ!

জেসমিন পাপড়ি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
ঝোপ বুঝেই কোপ! ছবি: রানা / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

উত্তরা থেকে: মাত্র শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত। ভোর থেকে পায়ে হেঁটে যেমন ইজতেমা ময়দানে এসেছিলেন, তেমনি পায়ে হেঁটেই ফিরতি যাত্রা শুরু করেছেন মসুল্লিরা।

তবে রাস্তায় মাঝে মাঝেই দেখা মিলছে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন।

পুলিশের বিধি-নিষেধের কারণে বাস চলাচল সীমিত হলেও পিকআপ, মাইক্রোবাস, ভ্যান, রিকশা চলছে সমান তালে। পণ্যবাহী মিনিট্রাক বা পিকআপ ভ্যানও আজ যাত্রীবাহী।

ঝোপ বুঝেই কোপ মারছে তারা। আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। ১০ টাকার দূরত্ব ৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে এসব গাড়ির চালকরা।

রাস্তায় হাজার হাজার যাত্রী। সেই তুলনায় যানবাহন কম হওয়ায় কেন বেশি ভাড়া আদায় করছে, সেটি জিজ্ঞেস করার সাহসও যেন যাত্রীদের নেই। তাই সময়ক্ষেপণ না করে মুখ বুজে উঠে পড়ছেন অনেকে। কেউবা ভাড়া দিতে না পেরে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘপথ।

বসে নেই বাস চালকরাও। ইজতেমা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে বাসগুলো চলাচল শুরু করে। তবে সেগুলোর ভাড়াও বেশ চড়া। উত্তরা থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লোকাল বাসগুলো সবই যেন এখন সিটিং সার্ভিস।

একটু ফাঁক রেখে বাসের দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের হেলপার। চাহিদা মতো ভাড়া দিতে রাজি থাকা যাত্রীদেরই কেবল বাসের ওঠার সুযোগ হচ্ছে। গণপরবিহনের এমন অরাজকতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মুসুল্লিরা। সাধারণ যাত্রীরাও পড়েছেন বিপাকে।
 
উত্তরা হাউস বিল্ডিং বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ইজতেমা ফেরত মুমিনুল হকের সঙ্গে। তিনি এসেছেন খিলগাঁও থেকে।

বাংলানিউজকে এই মুসুল্লি বলেন, ফজরের নামাজের পর রওয়ানা দিয়ে বাসে খিলক্ষেত পর্যন্ত আসি। এরপর সেখান থেকে হেঁটেই ইজতেমা মাঠের কাছাকাছি গিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিই। এখন মোনাজাত শেষে ফেরার পথে কিছুটা ক্লান্তি বোধ করছি। ভাবলাম বাস বা অন্য কোনো যানবাহনে যাবো। কিন্তু যেন এক মগের মুল্লুকে এসে পড়েছি। ২০ টাকার ভাড়া কেউ চাইছে ৮০ টাকা কেউবা ১শ’ টাকা। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
 
মুমিনুল হকের সঙ্গে আসা তার নাতি ফয়সাল হাসান (১৯) বলেন, মোনাজাত শেষ হতেই দাদুকে নিয়ে কোনো একটা যানবাহনে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে মজা দেখছে। প্রতিবারই মোনাজাতের পর বাস বা পরিবহন ভাড়ার এই নৈরাজ্য চলে। কিন্তু সেটা দেখার কেউই নেই।

এই দাদু-নাতির সঙ্গে কথা বলার প্রায় ৪৫ মিনিট পর দেখা যায়, বেশ কয়েকজন লোকের সঙ্গে একটি ভ্যানে ওঠে পড়েছেন তারা। দূর থেকে জানতে চাইলে জানালেন, জনপ্রতি ৫০ টাকা করে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে পারবেন। এরপর কী হবে জানা নেই। কিছু না পেলে আবারও হাঁটা শুরু করতে হবে।

‘ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলার সময়ে বিভিন্ন বাস চালকদেরও হাত তুলে মোনাজাত করতে দেখেছি। মোনাজাত শেষে তেমনই এক চালকের বাসে ওঠে শুনি আবদুল্লাহপুর থেকে এয়ারপোর্ট ভাড়া দিতে হবে ৩০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া পাঁচ টাকা। যে ব্যক্তি কিছুক্ষণ আগে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন, তিনি কীভাবে মানুষের বিপদ দেখে বেশি ভাড়া আদায় করেন?’ বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই এসব কথা বললেন আরেক পথচারী দবীন ইসলাম (৫৩)।
 
সুপ্রভাত বাসের এক চালকের কাছে এমন অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘প্রতিদিন তো আর চাই না। এসব রাস্তায় বাস আসতেই দেয় না পুলিশ। তবু আমরা আসছি, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আসা মানুষদের সেবা করছি। তার জন্য তো কিছু টাকা বেশি দাবি রাখতেই পারি। ’

রাজলক্ষী মোড়ে বেশ কয়েকজন মহিলার দেখা পাওয়া গেলো। একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন তারা। কিন্তু বিশ্বরোডের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে মাইক্রোবাসটি আটকে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে সকালে হেঁটে এসে রাজলক্ষীতে বসেই মোনাজাতে অংশ নেন তারা। এবার ফিরতে হবে। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে কোনো যানবাহন না পেয়ে ফের হাঁটা শুরু করেন তারা।

অফিস-আদালত বা ব্যক্তিগত জরুরি কাজে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ একই ধরনের বিপাকে পড়েছেন। উত্তরা এলাকার অফিসগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে পৌঁছাতে নানা বিপত্তির মুখে পড়েছেন। বেশিরভাগই অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করেই তবে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।

উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড়ে অবস্থিত এইচএসবিসি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, মিরপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত আসতে চারবার যানবাহন পরিবর্তন করতে হয়েছে। আর প্রত্যেক বারেই দিতে হয়েছে কয়েকগুণ ভাড়া।
 
আখেরি মোনাজাত শেষ হতেই রাস্তার দু’পাশ জুড়ে হাজার হাজার ফিরতি মুসুল্লির ঢল নামে। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ এমনকি শিশুরাও আছেন এই জনস্রোতে।

কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, বিকেল পর্যন্ত থাকবে এই জনস্রোত। থাকবে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণও। শুধু উত্তরার রাস্তা নয়, টঙ্গী, গাজীপুর, আশুলিয়া যাওয়ার রাস্তাতেও হাজার হাজার মানুষের ঢল দেখা যায়।

তবে ঢাকার বাইরে থেকে দলে বেঁধে বাসে করে আসা মুসুল্লিরা মোনাজাত শেষে যার যার বাসের কাছে চলে যান। হেঁটে ফেরা মুসুল্লিদের চাপ কমার পরেই এসব বাস ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
জেপি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।