আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন তথা ইসলামের প্রতীক। মুসলমানরা আজানের ধ্বনি শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গে নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
যিনি এ আজান দেন তাকে মুয়াজ্জিন বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা অতুলনীয়। সমাজের মানুষ হয়তো মুয়াজ্জিনের গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করে না। তাদের প্রাপ্য সম্মান দেয় না। কিন্তু মুয়াজ্জিনদের জন্য স্বয়ং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ঘোষণা করেছেন, অসামান্য ফজিলত ও মর্যাদার কথা।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কোনো মানুষ, জিন অথবা অন্য কিছু মুয়াজ্জিনের আওয়াজের শেষ রেশটুকুও শুনবে, সে কেয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। –সহিহ বোখারি : ৬১১
হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইমাম হলো (নামাজের) জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হলো- আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন। -সুনানে তিরমিজি ও আবু দাউদ
যিনি নিয়মিত আজান দেন। তিনি কিয়ামতের দিন বিশেষ সম্মানের অধিকারী হবেন। মুয়াজ্জিনরা হাশরের মাঠে দীর্ঘদেহের অধিকারী হবেন। তাদের ঘাড় সবার ঘাড়ের ওপরে থাকবে। ফলে মুয়াজ্জিনদের সহজে চেনা যাবে।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ ঘাড় বিশিষ্ট হবেন। -সহিহ মুসলিম
বলা হয়েছে, মুয়াজ্জিনের বিশেষ একটি সৌভাগ্যে হলো- গাছ-পালা, তরুলতা, পাথর, পাহাড়-পর্বত তাদের জন্য সাক্ষ্য দেবে। মুয়াজ্জিনের আজান শুনে মানুষ মসজিদে যায়, রোজাদার ইফতার করে। এ ছাড়া আরও অনেক নেক আমল করে। এর সওয়াবও মোয়াজ্জিন পাবেন। কিন্তু আমলকারীর কোনো সওয়াব কমবে না।
শয়তান মানুষের প্রকাশ্যে শত্রু। মুয়াজ্জিনের আজান শুনলে শয়তান দূর হয়ে যায়। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শয়তান আজান শুনলে রাওহা নামক স্থানে দৌঁড়ে পালাতে থাকে। রাওহা হলো মদিনা শরিফ থেকে প্রায় ৩৬ মাইল দূরে অবস্থিত একটি জায়গার নাম। -সহিহ মুসলিম
মুয়াজ্জিনের মর্যাদা স্বয়ং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেছেন। এর চেয়ে সৌভাগ্যেবান ব্যক্তি পৃথিবীতে আর কে হতে পারে! অনেক চিন্তাশীল মানুষ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে উচ্চারিত তাওহিদের মর্মবাণী শ্রবণ করে সত্যের অনুসারী হয়েছেন, শান্তির ধর্ম ইসলাম কবুল করে সাফল্যের পথে এগিয়ে এসেছেন, তার হিসাব মেলানো ভার। আর সে জন্যই মুয়াজ্জিনের মর্যাদা মহান আল্লাহর দরবারে অনেক বেশি।
আজানের মাঝে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার পরিচয় নিহিত। যুগ যুগ ধরে ইসলামের নির্যাস ও মূলবার্তা আজানের মাধ্যমে ঘোষিত হয়েছে। মুয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে বান্দার হৃদয়মনে তরঙ্গায়িত হয় অন্য এক ধ্বনি। যার প্রভাবে সে আজানে সাড়া দিয়ে গভীর ঘুম, কনকনে শীত আর ঘরের মায়া ত্যাগ করে নামাজ আদায়ে মশগুল হয়।
যে আকর্ষণের কথা কবি কায়কোবাদ বলেছেন এভাবে-
‘কে ওই শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কী সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনি,
কী মধুর আজানের ধ্বনি। ’
আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আকাঙ্খা করেছেন কবরে শুয়ে শুয়েও আজান শোনার। তিনি বলেছেন-
‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এমএইউ/