একবার মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এক সাহাবির কাছে ছাগলের একটা মাথা উপহার আসে। তিনি ভাবলেন, আমার পড়শি মুসলিম ভাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক অভাবে আছে।
প্রত্যেকেই পড়শির অভাবকে নিজের অভাবের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। নিজ স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অপরকে প্রাধান্য দানের এ বিরল দৃশ্য মহান আল্লাহর কাছে এত বেশি ভালো লেগেছে যে, তাদের এ কাজের প্রশংসা করে প্রিয় নবী (সা.)-এর ওপর সূরায়ে হাশরের নবম আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। ওই আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘তারা নিজেদের কঠিন প্রয়োজন সত্ত্বেও অপরের প্রয়োজনকে নিজের ওপর প্রাধান্য দেয়। ’
একদিন মহানবী (সা.) আনসারদের ডেকে বললেন, ‘আমি তোমাদের কিছু ভূমি জায়গির দেব। ’ আনসার সাহাবারা উত্তরে জানালেন, ‘যদি আপনি আমাদের তা দেন তাহলে আমাদের মুহাজির ভাইদেরও অনুরূপ দেবেন। ’ সবাইকে দেওয়ার মতো সুযোগ না থাকায় তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সিদ্ধান্ত মুলতবি করেন।
সাহাবি আবু জাহাম (রা.) বলেন, ‘ইয়ারমুক রণাঙ্গনে আমি আমার আহত চাচাতো ভাইয়ের জন্য পানি ঢাললাম। কাছেই আরেক আহত ‘আহ’ করল। ভাইয়া তার কাছে যেতে ইশারা দিলেন। গিয়ে দেখি, সে হিশাম ইবনুল আস। তাকে পানি দেওয়ামাত্র আরেক আহত ব্যক্তি ‘আহ’ করল। হিশাম ওই লোকের কাছে আমাকে যেতে ইশারা করল। সেখানে গিয়ে দেখি, সে মারা গেছে। দৌড়ে হিশামের কাছে গিয়ে দেখি, সেও ইন্তেকাল করেছে। দৌড়ে আমার ভাইয়ের কাছে এসে দেখি, তিনিও পরপারে চলে গেছেন। ’
প্রিয় নবী (সা.)-এর সাহাবিদের এই যে আত্মত্যাগ ও অপরকে প্রাধান্য দানের মানসিকতা, এটা কীভাবে গঠন করেছিলেন। চিন্তা, চেতনা, বৈশিষ্ট্যের কী অপূর্ব মিল তাদের সবার মাঝে। কতটুকু নির্মোহ হলে, মানুষের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা পোষণ করলে একজন মানুষ নিজেকে অভাবে রেখে, নিজেকে পিপাসায় মরণাপন্ন রেখে অপরের অভাব আগে পূরণে উদ্যোগী হতে পারে!
আজকের অশান্ত, অস্থির দুনিয়ার অনেক সমস্যা ও জটিলতা নির্মূল করতে পারবে সাহাবিদের জীবনী চর্চা ও অনুসরণ। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এমএইউ/