উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সবচেয়ে প্রিয় আমলের অন্যতম- ১. সময়মতো নামাজ আদায় করা।
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি অনুরূপ আরেকটি আল্লাহর প্রিয় আমল জানতে চাইলে নবী (সা.) বললেন- ২. মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ করা।
নবী করিম (সা.)-এর জবান থেকে উচ্চারিত প্রতিটি কথা, তার জীবনের প্রতিটি কাজ ও আমল এবং কোনো কাজে তার মতামত ও সমর্থনকে হাদিস ও সুন্নাহর মধ্যে শামিল করা হয়েছে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ নেক আমল সম্পর্কে বলেছেন তার ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেন, বান্দার সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ও নেক আমল সম্পর্কে জানতে চাইলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ৩টি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে অবহিত করেন। মানুষের উচিৎ এসব আমল সম্পর্কে অবহিত তা পালনে মনোযোগী হওয়া।
১. সময়মতো নামাজ আদায় করা: ‘নামাজ’ হচ্ছে ঈমানের পর আল্লাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। যে বিষয়ে কোরআনে কারিমে প্রায় ৮৩ বারের বেশি তাগাদা রয়েছে। অথচ কোরআনে কোনো বিষয়ে একবার নির্দেশ এলে তা ফরজ হয়ে যায়।
নামাজ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা সকল নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগের সব উম্মতের জন্য নামাজের বিধান ছিলো। মুমিন-মুসলমানদের জান্নাতে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো- একনিষ্ঠ ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।
কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সে সব মুমিন সফল হবে, যারা বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। ’ সূরা মুমিনুন: ১-২
যারা নামাজের বিষয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারবে, তাদের জন্য পরবর্তী বিষয় সহজ হবে। বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমেও স্পষ্ট যে, সমস্ত ইবাদতের মধ্যে নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামাজ তরককারী বান্দার সঙ্গে আল্লাহ সম্পর্ক ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন।
২. মাতাপিতার সঙ্গে সদাচরণ করা: দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন তা হলো-‘মাতাপিতার সঙ্গে সদাচরণ করা।
সন্তানের জন্য তার নিজ মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা সবচে’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও পুণ্যময় আমল। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমের একাধিক স্থানে তাকিদের সঙ্গে বর্ণনা রয়েছে।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ ফরজের অন্তর্ভুক্ত। যা অমান্য করা কবিরা গোনাহ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর ফয়সালা এই যে, তিনি ছাড়া আর কারও দাসত্ব করা যাবে না এবং তোমাদের পিতামাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে, তাদের দু’জন বা একজন যখন বার্ধক্যে পৌঁছে যায়; তবে তোমাদের আচরণের কারণে তারা যেন উহ্ না বলে, তাদের সঙ্গে ধমকের সুরে কথা বলবে না বরং তাদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলবে। ’ –সূরা বনী ইসরাইল: ২৩
জীবনের কঠিন ও উত্তপ্ত মুহূর্তেও মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণের সীমা লংঘন করার সামান্যতম অনুমতি আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
নবী করিম (সা.) সাহাবি হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-কে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘মুয়াজ সাবধান! তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করবে না যাতে তাদের হৃদয়ে আঘাত লাগে। তারা যদি তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেয় অথবা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে তারপরও প্রতিবাদী হওয়া যাবে না। ’ -মুসনাদে আহমদ
মাতা-পিতার সন্তুষ্টিতে সন্তানের জন্য জান্নাত আর তাদের অসন্তুষ্টির মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে সন্তানের ওপর তার মাতা-পিতা রাজি রয়েছে তার ওপর আল্লাহতায়ালাও রাজি রয়েছে। ’
৩. আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা: তৃতীয় নেক আমল সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা। হাদিসে বর্ণিত শব্দ জেহাদ এর অর্থ কোনো লক্ষ্য হাসিলের জন্য কঠোর চেষ্টা ও প্রচেষ্টা করা। আর যখন এ চেষ্টা আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য হয়- তখন তা হয় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। ’ এর উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তারই দ্বীনের বিজয়। ইসলামের সঠিক দাওয়াত মানুষের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা আর আল্লাহর আইন বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো এমন বিষয় নয় যা করলে ভালো না করলে তেমন কিছু ক্ষতি নেই। বরং উল্লিখিত দায়িত্ব পালন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। যে দায়িত্ব পালন না করলে জবাব দিতে হবে হাশরের কঠিন দিবসে।
আলোচ্য হাদিসে নবী করিম (সা.) যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল সম্পর্কে বলেছেন, তা সমস্ত উম্মতকে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্তের জন্য বলেছেন। নারী-পুরুষ সবার জন্য এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে চলতে হবে। তবেই মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এমএইউ/