কোরআন-হাদিসে ধৈর্যধারণকে সওয়াবের কাজ কলে অভিহিত করা হয়েছে। তাই মানুষের উচিৎ বালা-মুসিবতের সময় ধৈর্যধারণ করা।
প্রথম ভাগ: অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা। এটি আবার কয়েক প্রকার।
ক. আল্লাহতায়ালা যে বিষয় নির্ধারণ করেছেন, তার কারণে অন্তর দিয়ে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া। এটা হারাম প্রতিক্রিয়া। কারণ এমন অসন্তুষ্টি কখনও কখনও মানুষকে কুফুরির দিকে নিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-সঙ্কোচ নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে ইবাদতের ওপর কায়েম থাকে এবং যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। -সূরা হজ্জ: ১১
খ. কখনও অসন্তুষ্টি কথার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন হতাশা প্রকাশ করা এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দোয়া করা। এটাও হারাম কাজ।
গ. কখনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন গাল চাপড়ানো, জামা-কাপড় ছেঁড়া, মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি। এসবই হারাম এবং ধৈর্য্যধারণের পরিপন্থী কাজ।
দ্বিতীয় ভাগ: বিপদের সময় ধৈর্য্যধারণ করা। যেমনি জনৈক আরব কবি বলেছেন, ‘বিপদের সময় ধৈর্যধারণ করা খুবই কঠিন। কিন্তু এর শেষ পরিণাম খুবই সুমধুর। ’
কেননা ধৈর্যধারণ করাটা তার নিকট খুবই কঠিন তবুও সে ধৈর্যধারণ সবর করে। বিপদগ্রস্ত হওয়াটা যেমন অপছন্দ করে তেমনি তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করাটাও তার নিকট অপছন্দনীয়। কিন্তু তার ঈমান তাকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ থেকে বিরত রাখে।
মোটকথা সে বিপদে আপতিত হওয়া এবং না হওয়াকে এক মনে করে না। এক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহতায়ালা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করার আদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য্যধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ -সূরা আনফাল: ৪৬
তৃতীয় ভাগ: বিপদ আসার পর সন্তুষ্ট থাকা এবং মুসিবত আসা ও না আসা উভয়কেই সমান মনে করা। তাই বিপদ আসলেও তার কাছে বিপদ সহ্য করা বেশি কঠিন মনে হয় না। গ্রহণযোগ্যমতে এ ধরণের ধৈর্যধারণ মোস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। এটা এবং পূর্ববর্তী স্তরের মাঝে পার্থক্য অতি সুস্পষ্ট। বিপদ হওয়া এবং না হওয়া সমান মনে হওয়া সন্তুষ্ট থাকার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এ প্রকারের এবং পূর্বের প্রকারের মাঝে পার্থক্য এই যে, পূর্বের প্রকারে বিপদে আপতিত ব্যক্তি বিপদকে কঠিন মনে এবং ধৈর্য্য ধারণ করে।
চতুর্থ ভাগ: শোকরিয়া আদায় করা। এটা সর্বোচ্চ স্তর। তাহলো- বিপদের সময় আল্লাহর প্রশংসা করা। কারণ তিনি ভালো করেই জানেন যে, এ সব বিপদাপদ গোনাহ মোচন এবং সওয়াব বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম বিপদাপদে পতিত হলে বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার গোনাহ মোচন করেন। এমন কি শরীরে একটি কাঁটা বিধলেও তার বিনিময়ে গোনাহ মাফ করা হয়। ’
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
এমএইউ/