রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তোমরা কিছুতেই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তোমরা ঈমান না আনবে, আর যতক্ষণ তোমরা একে অন্যকে ভালো না বাসবে ততক্ষণ তোমরা (পূর্ণ) ঈমানদারও হতে পারবে না। আমি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলে দিই, যা করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, এতে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। ’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং : ৫৯৪)
উল্লিখিত দুইটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি ১. বেহেশতে যেতে হলে ঈমান আবশ্যক। ঈমান ছাড়া কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। ২. ঈমান যদিও আল্লাহ তায়ালার ওপর এবং নবী-রাসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল ও তকদিরের ওপর বিশ্বাসের নাম; কিন্তু পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে এবং ঈমানের পূর্ণ সুফল পেতে চাইলে এ বিশ্বাসের পাশাপাশি ঈমানদারদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালোবাসাও জরুরি। ৩. পারস্পরিক এ ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য দুই হাদিসে দুটি পথ বলে দেয়া হয়েছে এক. অধিক হারে সালামের প্রচলন ঘটানো, দুই. পারস্পরিক উপহার আদান-প্রদান।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া উপহার দাও। এটি মনের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ২১৩০)
পারস্পরিক উপহার বিনিময় যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়, তখন দূরের মানুষের সঙ্গেও গড়ে ওঠে গভীর-নিটোল সম্পর্ক। অনেক সময় এ সম্পর্ক রক্ত ও আত্মীয়তার বাঁধনকেও ছাড়িয়ে যায়।
উপহার বিনিময় উত্তম গুণ হলেও কাউকে উপহার দিতে চাপে ফেরা কোনোভাবেই উচিত নয়। কেউ যদি কারও অতিথি হয়, তাহলে সাধারণত গৃহকর্তাদের জন্য কিছু একটা নিয়েই যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অতিথিরা সাধ্যানুযায়ী অথবা সুবিধা মতো উপহার নিয়ে যান।
কিন্তু বিভিন্ন আনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ খুব আনন্দের হলেও কারো কারো জন্য বেশ নিরানন্দের। যাদের অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে, তারা অত্যন্ত মিতব্যয়িতার সঙ্গে ও নির্দিষ্ট আয়ের মাধ্যমে সব খরচ বহন করেন। তারা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীর এরকম আনন্দ অনুষ্ঠানের সংবাদে ও আমন্ত্রণে যেমন উল্লসিত হয়, তেমনি পরক্ষণেই আবার দুশ্চিন্তায় মগ্ন হয়।
কারণ সেখানে মানসম্মত হাদিয়া উপহার না দিলে মানরক্ষা হয় না। আর মান রক্ষা করতে গেলে নিজের ক্ষমতায় কুলায় না। এ ধরনের উভয় উভয়সংকটে পড়ে অনেকে। আবার অনেক সময় কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াতের অর্থই হলো আপনাকে উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি মানসম্মত উপহারও নিয়ে যেতে হবে। উপরন্তু উপহার গ্রহণ করার জন্য সেখানে ভিন্ন রকমের আয়োজন রাখা হয়। ‘প্রমাণস্বরূপ’ তা লিখেও রাখা হয়। এরপর কে কত দিল এবং কত খরচ হলো আর কত টাকা উঠে এলো তার হিসাব চলে। এ রকম দৃশ্য আমাদের সমাজের অনেকটা অংশজুড়ে দেখা যায়।
উপহার আদান-প্রদানের পরিপূর্ণ সুফল পেতে সামাজিক বাধ্যবাধকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আন্তরিকতাপূর্ণ উপহার দেওয়া হলে সম্প্রীতি ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর তা ঈমানের পূর্ণতার একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গও বটে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
এমএমইউ/