ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প

ইমরুল ইউসুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১২
মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প

আমার নানাভাই ‘সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে ফিরলেন। রোজ যেমন বাড়িতে আসেন আজকের ফেরাটা তেমন নয়।

রোজ সন্ধেবেলা বাড়িতে ফিরে নানাভাই তামিমদের খোঁজ নেন। ওরা সবাই দল বেঁধে নানাভাইয়ের ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হয়। নানাভাই ওদের বিস্কুট, চকলেট, চানাচুর ভাগ করে দেন। আজ নানাভাই ফিরেছেন খালি হাতে। মুখে সেই চেনা হাসি নেই। মুখটা গম্ভীর। ’

আমার বড় চাচার মুখটাও আজ কেন জানি খুব গম্ভীর। আজ সকাল থেকেই তিনি কীযেন ভাবছেন। কারণ চাচার পাশাপাশি আমাদেরও ‘পঁচিশে মার্চ দুপুর থেকেই ধারণা হলো কিছু একটা হয়েছে। হয়তো ভুট্টো আর ইয়াহিয়া ঠিক করে ফেলেছেন এ দেশের মানুষদের কোনো কথা শোনা হবে না। চারদিক থমথম করতে লাগল। খোকনের বড় চাচা দুপুর একটায় অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে ঘরে ফিরলেন। ফিরেই বললেন, আর যেন কেউ ঘর থেকে না বের হয়। সবাই যেন ঘরে থাকে। কবীর কোথায়, কবীরকে ডাক। কবীরকে কোথাও পাওয়া গেল না। বড় চাচা থমথমে গলায় বললেন, ও কোথায় গিয়েছে? কেউ জবাব দিতে পারল না। ’

ছোট্ট বন্ধু রতন একদিন আমাকে একটি প্রশ্ন করলো। সে জানতে চাইলো ভাইয়া আমি কি যুদ্ধে যাব? আমি এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারলাম না। আমি জবাব না দিলে কী হবেÑ ‘এক চমৎকার সকালে রতন ঘুম থেকে জেগে ভাবল সেও যুদ্ধে যাবে। কিন্তু কোথায় যাবে, কেমন করে যাবে, তা কিচ্ছু জানে না। শুধু মনে হলো তাকে যেতে হবে। এবং এখনই। কদিন থেকে ভারি মন খারাপ হয়ে আছে রতনের। স্কুল নেই। পড়া নেই। শুধু শুয়ে বসে সময় কাটানো। মাঝে মাঝে বিলু, ঝিলু আর টুকুদের নিয়ে বিরক্তিকর ক্যারাম খেলে। ¯্রফে লুডু নিয়েও কাটিয়ে দেয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

ছোটকাকুর আলমারি হাতড়ে জুলভার্ন সমগ্র গোগ্রাসে গিলেও তিয়াস মিটছে না। মন তার পড়ে আছে অন্যত্র। সুযোগ পেলেই বড়দের সঙ্গে বিবিসি শুনেছে। কখনো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। বাবা-মার চোখে উত্তেজনা দেখে ভয়ে বুক শুকিয়ে যায়। শহর থেকে নিত্য খারাপ খবর আসছে। বহু লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। কী যে হবে বোঝা যাচ্ছে না। শুধু আতঙ্কের জাল মাকড়সার মতো বাসা বাঁধছে বুকের ভেতর। ’
 
বন্ধুরা, গল্পের খণ্ড খণ্ড এই অংশগুলো পড়ার পর তোমাদের মনের ভেতর নিশ্চয় এ প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে যে, নানাভাইয়ের মুখে সেই চেনা হাসি নেই কেন? বড় চাচা এত মন খারাপ করে কবীরকে খুঁজছিলেন কেন। রতন কী যুদ্ধে গিয়েছিল? আর কেনই বা শহর ও গ্রামের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন।

এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে তোমাদের একটি বই পড়তে হবে। বইটির নাম মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প। তোমাদের জন্য বইটি সম্পাদনা করেছেন লেখক বন্ধু হাসান হাফিজ। বইটির নাম দেখেই বুঝতে পারছো বইটি সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প দিয়ে। বইটির সম্পাদক আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয় ২০ জন লেখকের ২০টি গল্প দিয়ে সাজিয়েছেন এ বইটি। চলো বন্ধুরা এবার লেখক তালিকায় চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।

লেখক সূচিতে আছেন- আনিসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হক, আবু কায়সার, আমীরুল ইসলাম, আলী ইমাম, আলী হাবীব, আহমাদ মাযহার, আহসান হাবীব, ইমদাদুল হক মিলন, এনায়েত রসুল, জাফর তালুকদার, ধ্রুব এষ, ফরিদুর রেজা সাগর, ফারুক নওয়াজ, মঈনুল আহসান সাবের, মঞ্জু সরকার, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, রাবেয়া খাতুন, সেলিনা হোসেন ও হুমায়ূন আহমেদ।

বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আঁকিয়ে বন্ধু ধ্রুব এষ। বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার তেপখানা রোডস্থ সিঁড়ি প্রকাশন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২-এ প্রকাশিত ১২৮ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য ২৫০.০০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা।


বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১২

সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।