ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

দেশে দেশে ক্রিসমাস

ইমরুল ইউসুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১২
দেশে দেশে ক্রিসমাস

খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস ডে বা শুভ বড়দিন। সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর এ উৎসব উদযাপিত হয়।

খ্রিস্টান ধর্মের লোকেরা বিশ্বাস করেন এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক প্রভু যিশু জন্ম নেন।

মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিল যিশুখ্রিস্টের। হিংসা বিদ্বেষপূর্ণ এই পৃথিবীর মানুষকে সুপথে আনার জন্যই তার জন্ম বলে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন। এজন্য দিনটিকে স্মরণ করে সারাবিশ্বে উদযাপিত হয় ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন।

দিনটিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যিশুর শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকে ছুটি। ছুটি থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় ছুটির বিশেষ এই দিনে বাবা মা কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরতে বের হবে। পরবে নতুন ক্রিসমাস পোশাক। উপহার পাবে হরেকরকম। ঘুরে ঘুরে দেখবে ক্রিসমাস ট্রির গায়ে সাজানো লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের টুনি বাল্বের আলো। ছোটো ছোটো করে কাটা আপেল, কমলা, পর্পকর্ন দিয়ে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি। উপহার নেবে নেচে নেচে মজার মজার উপহার বহন করা সান্তাক্লজের কাছ থেকে।

এই দিনে ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিশেষ খাবার। শিশুরা যিশুর প্রশংসায় গান গেয়ে ঘুরে বেড়ায় বাড়ি বাড়ি। ক্রিসমাসের আগের দিন মধ্যরাত থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত গির্জায় গির্জায় বিশেষ করা হয় উপাসনা। খ্রিস্টের জন্মের ২০০ সাল থেকে এমনি করে এ উৎসব উদযাপন শুরু হয়। বন্ধুরা, চলো এখন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে উদযাপিত হয় ক্রিসমাস ডে।

sathaবাংলাদেশ: ১৬ শতকে পর্তুগিজরা বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্ম নিয়ে আসেন। এ দেশে প্রথম গির্জাটি তৈরি হয় ১৫৯৯ সালে পুরাতন যশোরের কালীগঞ্জের কাছে সুন্দরবন এলাকায়। ভারতের কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নকই প্রথম দিবসটি উদযাপন করেন। ১৬৬৮ সালে হিজলির পথে যাওয়ার সময় সুতানুটি গ্রামে বড়দিন উৎসব উদযাপনের জন্য চার্নক যাত্রাবিরতি করেন। এ অঞ্চলে সেটিই ছিল ইংরেজদের প্রথম বড়দিন উদযাপন। দিনটিতে খ্রিস্টানরা আনন্দ ফুর্তি করে এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা কার্ড ও উপহার দেয়। তৈরি হয় মজার মজার খাবার। গির্জায় গির্জায় আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রার্থনা।  

বেলজিয়াম: বেলজিয়ামে বড়দিন পালনের রীতিটি আবার ভিন্ন। তারা ডিসেম্বরের ৬ তারিখ সিন্টারক্লজ বা সেইন্ট নিকোলাস নামের একটি অনুষ্ঠান উদযাপন করে। এটি ক্রিসমাস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অনুষ্ঠান। সান্তা ক্লজকে বেলজিয়ামে বলা হয় কেরস্টম্যান বা লি পেরে নোয়েল। এদিন বেলজিয়ামে সান্তা তোমাদের মতো ছোটদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন। এছাড়াও বড়দিন উপলক্ষে বাবা মায়েরা বাচ্চাদের দেন নানা ধরনের উপহার। ক্রিসমাস ট্রির নিচে, স্টকিং বা মোজায় তারা এই উপহার দিয়ে থাকেন।

রাশিয়া: পৃথিবীতে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস পালন করা হলেও রাশিয়ায় ক্রিসমাস পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। এর কারণ হলো রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরোনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। কেউ চাইলে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করতে পারে। তবে সবাই বড়দিন উদযাপন করে মূলত ৭ জানুয়ারিতেই। রাশিয়ায় ক্রিসমাসের চাইতে নববর্ষকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

sathaব্রাজিল: ব্রাজিলে সান্তাক্লজকে পাপাই নোয়েল বলে ডাকা হয়। এই দেশে যারা একটু বেশি ধনী, তারা ক্রিসমাসে খাবারের তালিকায় মুরগি, টার্কিসহ নানা সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে। এছাড়াও চকোলেট আর কনডেন্সড মিল্কের মিশ্রণে তৈরি মিষ্টিও থাকে। এর নাম ব্রিগেডেইরো। ব্রাজিলের সব অধিবাসীই ক্রিসমাস উপলক্ষে সাজ‍ায় ক্রিসমাস ট্রি।

ফ্রান্স: ফ্রান্সে ক্রিসমাসকে বলা হয় নোয়েল। আর ক্রিসমাস ফাদার বা সান্তা ক্লজকে বলা হয় পেরি নোয়েল। ফ্রান্সের সবাই ক্রিসমাস ট্রিকে পুরোনো ধাঁচের সাজে সাজাতেই বেশি ভালোবাসে। তারা তাদের ট্রির উপরে লাল রঙের রিবন মুড়িয়ে তার সঙ্গে সাদা মোমবাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজায়।

নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডে ক্রিসমাসের দিনটি শুরু হয় ক্রিসমাস ট্রির নিচে রাখা উপহারের প্যাকেট খোলার মধ্য দিয়ে। এরপর ক্রিসমাসের দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই একসঙ্গেই খান। টার্কি আর মুরগির মাংস দিয়েই চলে খাওয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় চা পানের আসর। আর রাতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে চলে বার-বি-কিউ পার্টি।

sathaপর্তুগাল: পর্তুগালেও ক্রিসমাসের অন্যতম আকর্ষণ হলো ক্রিসমাস ফাদারের আনা উপহার। ক্রিসমাসের আগের দিন সন্ধ্যায় অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভ এ ক্রিসমাস ট্রির নিচে বা চিমনির সামনে ঝোলানো মোজার মধ্যে ক্রিসমাস ফাদার উপহার দিয়ে যান। আর ক্রিসমাস ইভ মধ্য রাতে সিদ্ধ আলু আর নোনতা শুকনো কড মাছ দিয়ে ক্রিসমাসের ভোজ সারেন।

জার্মানি: জার্মানরা ক্রিসমাস উপলক্ষে তাদের ঘর সাজাতেই বেশি ভালোবাসে। তারা তাদের ঘরের জানালায় কাঠের ফ্রেমে ইলেকট্রিক মোমবাতি জ্বালিয়ে তার সামনে কাগজের বা প্লাস্টিকের রংবেরঙের ছবি টাঙিয়ে দেয় যা রাতের বেলা বাইরে থেকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। এছাড়াও জার্মানরা তৈরি করে যিশুর জন্মস্থান সেই গোশালার মতো ঘর।
 
সুইডেন: সুইডেনে ক্রিসমাস আয়োজনে অন্যতম দিন হলো ক্রিসমাস ইভ। ক্রিসমাসে সুইডেনবাসীরা একে অপরকে উপহার দিয়ে আর ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানিয়েই উদযাপন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১২
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি,ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।