ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

শিশুদের নিয়ে টেলিভিশনের দীনতা!

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৩
শিশুদের নিয়ে টেলিভিশনের দীনতা!

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকতায় খুবই আলোচনায় উঠে আসা দুটি মাধ্যম টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিকতা। যদিও এই দুটি মাধ্যমেরই প্রসার বিদেশে অনেক আগেই ঘটেছে।

বাংলাদেশেও এই দুটি মাধ্যমে সাংবাদিকতার প্রসার ঘটছে।

টেলিভিশন সাংবাদিকতা এই মুহূর্তে দেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় একটি বিষয়। কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুততার সঙ্গে একজন তরুণ কিংবা তরুণী সাংবাদিক ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সংবাদ প্রচার করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করলাম কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের কোনো কোনো সাংবাদিক সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গভীর সুড়ঙ্গে চলে গিয়েছেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেকজন চলে গিয়েছেন সুড়ঙ্গের আরো গভীরে। এ যেন গভীরে যাওয়ার অন্যরকম প্রতিযোগিতা। টিভি সাংবাদিকতার কল্যাণে তরুণ-তরুণীরা অনেক প্রচার পাচ্ছেন, বাড়ছে জনপ্রিয়তা।

সংবাদের পেছনে ছোটাই সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের কাজ। এজন্য প্রতিযোগিতা থাকবে, সেটিও স্বাভাবিক। কিন্তু সম্প্রতি সাভার ট্র্যাজেডির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে যাওয়ার প্রতিযোগিতা দেখে মনে হয়েছে এটি সাংবাদিকতা নয়। এক ধরনের অসুস্থতা। সংবাদের গভীরে যেতে হবে। কিন্তু একটি দুঃসাধ্য উদ্ধার অভিযানের ভেতরে ঢুকে উদ্ধারকারীদের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যদি অভিযানের মূল উদ্দেশ্যেই ব্যাহত হয় তবে সেটি কোন ধরনের সাংবাদিকতা?

সরাসরি সংবাদ সংগ্রহের এই নমুনা দেখে ড্রইং রুমে অনেকের মতো আমারও বিষয়টি খটকা লেগেছে। হ্যাঁ, বিদেশেও ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকরা কাজ করেন। লিবিয়া ও সিরিয়া যুদ্ধে এ ধরনের অনেক ঘটনাই টেলিভিশনের বদৌলতে আমাদের দেখার সুযোগ হয়েছে। গোলাগুলির মধ্যেই সংবাদ সংগ্রহ করছেন তারা। কিন্তু কাউকে বিপদে ফেলে নেয়।

টিভি ও অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে আজকের এই আলোচনায় আমার বিষয় বস্তুর বাইরে কিছু কথা বলে ফেললাম। আমার আলোচনার বিষয় শিশু বিষয়ে সাংবাদিকতা ও অনুষ্ঠান নিয়ে। বুধবার ‘শিশুদের নিয়ে সাংবাদিকতায় সাংবাদিকের নীতি-নৈতিকতা’ বিষয়ে একটি আলোচনার আয়োজন করে এমআরডিআই। ওই আলোচনায় দেশের সিনিয়র সাংবাদিকেরা অংশ নেন। যাদের বেশিরভাগই টেলিভিশনের উচ্চ পদে কাজ করছেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত। আর অনলাইন সাংবাদিকতার একমাত্র প্রতিনিধি ছিল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

যেহেতু টেলিভিশনের সাংবাদিকরাই বেশি উপস্থিত ছিলেন তাই সঙ্গত কারণেই আলোচনায় তাদের বক্তব্য বেশি ছিল। তবে এই আলোচনায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে- তাহলো শিশু বিষয়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠানে টেলিভিশন মাধ্যমের দীনতা দেখে। শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচারে টিভি মাধ্যমের প্রচণ্ড রকমের অনীহা। টিভি মাধ্যমের এই অনীহার বিষয়টি আমার বক্তব্য নয়, সংশ্লিষ্ট আয়োজকদেরই।

আলোচনায় উপস্থিত চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহমেদের বক্তব্যে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য অনেক পণ্য রয়েছে। চাইলেই এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় এবং অনুষ্ঠান করা যায়। তারপরেও এই অনুষ্ঠান হচ্ছে না। আসলে এ বিষয়ে আমাদের চিন্তার ঘাটতি রয়েছে। তিনি এও বললেন, শিশু বিষয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আগ্রহ কম।

মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা বললেন, পাঠক বা দর্শক যা চায় এবং গ্রহণ করে সেটিই তারা বেশি প্রকাশ করেন।

ফাহিম আহমেদ ও রেজোয়ানুল হক রাজার বক্তব্য প্রসঙ্গে একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আরেকটি বিষয় যোগ করলেন। সেটি বিজ্ঞাপন। তিনি বলেন, মার্কেটিং বিভাগের চাপে শিশুদের নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান করা কঠিন হয়ে পড়ে।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক বায়েজীদ মিল্কী, চ্যানেল আইর বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান জুয়েল, এনটিভির বার্তা সম্পাদক এসএম আকাশসহ অনেকের কথাতেই এটি স্পষ্ট হয় বেশিরভাগ টেলিভিশনে শিশুদের নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। কেন হয় না, সে কথাও স্পষ্ট হয়েছে টিভি সাংবাদিকতার সিনিয়র সব সাংবাদিকদের কথায়।

কেউ কেউ এ দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের ওপরও। আর তাই তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজক সংস্থা এমআরডিআই’র নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান সমস্যার সমাধানে মালিকদের নিয়ে ভবিষ্যতে একটি গোলটেবিল আলোচনার প্রস্তাব করলেন।

মালিকদের প্রসঙ্গে কয়েকজনের বক্তব্যের বিরোধিতা করে রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, “মালিকদের ডেকে বিষয়টি আরো তিক্ত করার প্রয়োজন নেই। বরং যার যার প্রতিষ্ঠানের গেট কিপার হিসেবে আমরাই উদ্যোগী হতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে নিউজ রুমের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক নিজেই নিজের ওপর সেন্সরশীপ আরোপ করে অনেক বিষয় বাদ দেন। বাস্তবে বিষয়টি নিয়ে মালিকপক্ষ কিছুই জানে না। ”

ওই আলোচনাতেই উঠে এলো বেশিরভাগ পত্রিকায় শিশুদের নিয়ে আলাদা আয়োজন রয়েছে। অনলাইন পত্রিকাতেও এ ধরনের আয়োজন রয়েছে। বাংলানিউজে ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’ নামে একটি আলাদা পাতা রয়েছে। কিন্তু টেলিভিশনে এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান চোখে পড়ে না।

ফাহিম আহমেদের কথা সূত্র ধরেই বলা যায়, শিশুদের নিয়ে এতসব পণ্য, অথচ তাদের অনুষ্ঠানের স্পনসর পাওয়া যাবে না। নাকি আমাদের চিন্তার ঘাটতি।

সত্যি কথা বলতে, শিশুদের অনুষ্ঠানে চিন্তার ঘাটতি অথবা স্পনসর পাওয়া কোনোটাই কঠিন নয়। সচেতনভাবেই টিভি মাধ্যমগুলো শিশু বিষয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে না। নবপ্রসারিত এই মাধ্যমে গ্লামার, নাম, যশের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান হোক। স্পনসরের অভাব হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৩
আইএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।