ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাকুম ও শান্তর পড়ালেখা

মালিহা মমতাজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৩
বাকুম ও শান্তর পড়ালেখা

ছেলেটির নাম শান্ত। সে আসলেই শান্ত।

পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে। পড়াশোনায় খুব মনোযোগ তার। দুষ্টুমি করতে পছন্দ করে না। ক্লাস রোল এক। ওর নিজস্ব একটা ঘর আছে। সেখানে আছে শান্তর পড়ার টেবিল, বিছানা, শো-কেস ও আলমারি। শো-কেস ভরা বিজ্ঞান আর সাধারণ জ্ঞানের বই। রয়েছে খেলনাও।

শান্ত ভালো রেজাল্ট করে বলে ওর বাবা-মা এসব কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু শান্ত খেলতে খুব বেশি পছন্দ করে না। শুধু পড়ে। তাই এগুলো দিয়ে তার ছোট ভাই আবির খেলে। আবির প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। অবশ্য একটা খেলনা শান্তর কাছে এত পছন্দের যে সেটা দিয়ে ছুটির দিনে শান্ত না খেলে থাকতেই পারেনা। সেটা Kobotoকম্পিউটারের মনিটরের মতো ছোট আর চিকন। নিচে তার দিয়ে জড়ানো বাটন বার। বাটন টিপে টিপে খেলতে হয়। তার বাবা তাকে অন্যসব খেলনাও কিনে দিয়েছিল, সেসব সে একবারই খেলেছে।

একদিন শান্ত তার টেবিলে বসে পড়ছিল। তার ঘরেই খেলছিল আবির। আবির শান্তকে তার সঙ্গে খেলতে অনুরোধ করল। এমন সময় তাদের পোষা কবুতর দুটো উড়ে কাছে এলো। শান্তর কবুতরের নাম বাকুম আর আবিরের কবুতরের নাম বুকুম।

তাদের বারান্দায় একটা ছোট্ট খড়কুটোর ঘর আছে। আবির বুকুমকে নিয়ে অন্য ঘরে চলে গেল। বাকুম উড়ে টেবিলে বসে শান্তর বইয়ের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে একবার দেখলো। তারপর হঠাৎ করে উড়ে এসে শান্তর হাতে ধরা কলম নিয়ে আবার বসলো টেবিলে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা খাতা দেখে সেটা নখ দিয়ে খুলে কলমটা পায়ে ধরে কাগজটাতে কি যেন লিখলো। তারপর কলম আর কাগজটা শান্তকে দিলো। শান্ত কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো তাতে লেখা, ‘শান্ত আমি কথা বলতে পারি। কিন্তু কারো সামনে প্রকাশ করিনি। আজ কথা বলার অনুমতি চাচ্ছি। আমি কিছুটা পড়তেও পারি। আমি তোমার সাথে পড়াশোনা করতে চাই। ’

এটা পড়ে শান্ত খুব অবাক হলো। শান্ত বলল, ঠিক আছে, তুমি আমার সাথে পড়াশোনা করবে। শান্ত আরো অবাক হলো কারণ বাকুম বই নিয়ে পড়া শুরু করে দিয়েছে। শান্ত বলল, শোন বাকুম, তুমি কারো সামনেই কথা বলবে না। শুধু আমার সামনে কথা বলবে।   বাকুম বলল, আচ্ছা। এরপর থেকে শান্ত আর বাকুম একসাথে পড়াশোনা করতে থাকে।

একদিন সন্ধ্যায় বাকুম লিখছিল। তার একপায়ে কলম ধরা। তার চোখ পড়ল শান্তর দিকে। ও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। বাকুম বলল,
- শান্ত, শান্ত, এই শান্ত, কথা বলছ না কেন? কি হয়েছে?
শান্ত জবাব দিলো না। এবার বাকুম তার কলমটা শান্তর দিকে ছুড়ে মারলো।
- উহ্
- তুমি ব্যথা পেয়েছে? আমি দুঃখিত।  
- কেন কলম ছুড়ে আমাকে ব্যথা দিলে?
- তুমি পড়ছো না কেন?
- তাতে তোমার কি? তুমি তোমার কাজ করো।
- তুমি আজ এমন ব্যবহার কেন করছ শান্ত?
- তা শুনে তোমার কি লাভ? আমি চিন্তায় আছি। সামনে আমার সমাপনী পরীক্ষা। আমি বৃত্তি পাব তো?
- অবশ্যই। কেন নয়? বৃত্তি পেতে হলে তোমাকে লেখা-পড়া করতে হবে। নাহলে তুমি কিভাবে পাবে?
- আচ্ছা।
- শোন, এখন থেকে আমি তোমাকে পড়াব।
- তুমি?            
- হ্যাঁ
এরপর থেকে বাকুম শান্তকে নিয়মিত পড়াতে লাগল। শান্তও  মন দিয়ে পড়তে থাকলো।
 
একদিন দুপুরবেলা  বাকুম বারান্দায় নিজের ঘরে বসে শুনলো, শান্ত স্কুল থেকে ফিরে হৈ চৈ করছে।

কি হলো? শান্ত এমন হৈ চৈ করছে কেন? তবে কি ও বৃত্তি পেয়েছে?

বাকুম শান্তর ঘরে উড়ে এলো। টেবিলে বসলো।
- কি হয়েছে, শান্ত?
- বাকুম, একটা খুশির খবর শুনবে?
- কি সেই সংবাদ? আমি শুনতে চাই।
- তাহলে শোন, আমাদের পরিশ্রম সফল হয়েছে। আমি বৃত্তি পেয়েছি। আমি বৃত্তি পেয়েছি।

বাকুম বলল, আমিও অনেক আনন্দিত। আমার মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। এরপর দুয়ে মিলে হিঃ হিঃ হিঃ করে হাসতে থাকলো। এবার শান্ত বাকুমকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে বলল, ধন্যবাদ বাকুম। আমাকে পড়ানোর জন্য।
 
মা ও বাবা ওর বৃত্তি পাওয়ার কথা শুনে খুব খুশি হলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি- ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।