ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

নামটি তার দুধরাজ

মীম নোশিন নাওয়াল খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৩
নামটি তার দুধরাজ

পাখিটির নাম দুধরাজ। নামের মতোই রূপ তার।

গায়ের রং শুধু সাদা আর কালো। আর এই সাদামাটা রঙেই প্রকৃতি তাকে দিয়েছে অপরিসীম সৌন্দর্য। তাই দুধরাজকে সৌন্দর্যের প্রতীক বলাই যায়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দুধরাজ পাখি। তবে তার দেখা পাওয়া মোটেই সহজ নয়। কিন্তু কোনোভাবে চোখে পড়ে গেলে আর দৃষ্টি ফেরানো কঠিন।

অনেকের কাছে দুধরাজ পাখি শাহ বুলবুল নামেও পরিচিত। এর ইংরেজি নাম  Paradise Flycatcher । বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone Paradisi।

দুধরাজ মূলত এশিয়ার অধিবাসী। এজন্য তাদের Asian Paradise flycatcher ও বলা হয়। শীতের সময়  এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উড়ে যায় দুধরাজ। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশগুলোতে দুধরাজ পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও মালদ্বীপ, কোরিয়াসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রয়েছে তার উপস্থিতি।

দুধরাজের গলার নিচ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দুগ্ধবর্ণ রং। ধবধবে সাদা। পেটও সাদা। পাখার নিচে কালো রেখা, শেষদিকে অল্প কালো ছোপ। বুক, গলা, মাথা কুচকুচে কালো। মাথায় রয়েছে মুকুট সদৃশ চূড়া। হালকা বাঁকানো নীলচে কালো রঙের ঠোঁট। চোখের মণি নীল। পায়ের রং হালকা লালচে। দুধরাজের মূল আকর্ষণ লেজের লম্বা লম্বা দু’টি পালক। পালক দুটি শ্বেতবর্ণ।

ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত একটি দুধরাজ ১৯ থেকে ২১ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। লেজের শেষ প্রান্ত থেকে লম্বা পালক দুটির দৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। শরীরের চেয়েও লেজটা বেশি লম্বা দুধরাজের। ওড়ার সময় তার লেজের লম্বা পালক দুটি বাতাসে দোলে। আর ডালে বসে থাকার সময় বেঁকে থাকে।

মেয়ে দুধরাজ পুরুষ দুধরাজের মত সুদর্শন নয়। তাদের লেজে বাড়তি পালক দুটি থাকে না। নবীন দুধরাজের রং মরিচা লাল হয়। তাদের লেজ খাটো থাকে। বয়স দুই কী তিন হলে লম্বা লেজের অধিকারী হয় পুরুষ দুধরাজ।

দুধরাজ পাখি জোড়া বেঁধে থাকে। উড়ন্ত পোকা-মাকড় ধরায় এদের জুড়ি নেই। সেগুলোই এদের প্রধান খাদ্য। উঁচু গাছের শাখায় বাসা বাঁধে দুধরাজ। ডিম দেয় তিন থেকে পাঁচটি। সব ডিম ফোটে না। আর ফোটেও যদি, সব ছানা বাঁচে না। সেজন্য দুধরাজের সংখ্যা অন্যান্য পাখিদের চেয়ে তুলনামূলক কম।

মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দুধরাজের প্রজননের সময়। দুধরাজ বেশ কর্মঠ। পুরুষ এবং মেয়ে- উভয় পাখিই বাসা তৈরি, ডিমে তা দেওয়া, ছানাকে খাওয়ানোর মতো কাজগুলোতে অংশ নেয়। ডিম পাড়ার ২১ থেকে ২৩ দিনের মধ্যে ছানা ফোটে।  

দুধরাজ শান্ত পাখি। কিন্তু হলে কী হবে, সাহসী ও বুদ্ধিমান হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি আছে পাখিটির। অনেক নিরীহ পাখি এদের বাসার কাছে বাসা তৈরি করে। কারণ, শত্রু ভাবাপন্ন কেউ বাসার কাছে এলে দুধরাজ তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না ঈগল, বাজের মতো পাখিরাও।

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই দুধরাজ পাখি আছে। সুন্দরবনে প্রচুর দুধরাজ পাওয়া যায়। কিন্তু পাখিটিকে দেখা যায় কম।

দুধরাজ পাখি গড়ে ১০-১২ বছর বাঁচে। তারপর তার স্বর্গীয় রূপ নিয়ে উড়াল দেয় স্বর্গের উদ্দেশ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।