ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

জানার আছে অনেক কিছু

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

আসমাউল হোসনা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১০
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

‌স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। একটি অস্থায়ী সম্প্রচার কেন্দ্র, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবার পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‌‌বাংলাদেশ বেতার। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রথমবারের মত সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ বেতার। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে এই বেতার কেন্দ্র অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিল। যুদ্ধের সময়ে প্রতিদিন মানুষ অধীর আগ্রহে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অপেক্ষা করতো।

প্রতিষ্ঠা
প্রথম পর্যায়ে যে ১০জন কর্মীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল তারা হলেন:
১. বেলাল মোহাম্মদ - তৎকালীণ চট্টগ্রাম বেতারের ব্রডকাস্টার
২. আবুল কাসেম সন্দ্বীপ - ফটিকছড়ি কলেজের তৎকালীণ ভাইস প্রিন্সিপাল
৩. সৈয়দ আবদুস শাকের - চট্টগ্রাম বেতারের তৎকালীণ বেতার প্রকৌশলী
৪. আবদুল্লাহ আল ফারুক - তৎকালীণ অনুষ্ঠান প্রযোজক
৫. মোস্তফা আনোয়ার - তৎকালীণ অনুষ্ঠান প্রযোজক
৬. রাশেদুল হোসেন - তৎকালীণ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট
৭. আমিনুর রহমান - তৎকালীণ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট
৮. শারফুজ্জামান - তৎকালীণ টেকনিক্যাল অপারেটর
৯. রেজাউল করিম চৌধুরী - তৎকালীণ টেকনিক্যাল অপারেটর
১০. কাজী হাবিব উদ্দিন আহমেদ মনি - ইনি বেতার কর্মী ছিলেন না

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও বেতারকেন্দ্রের কর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার (৫০ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ) প্রদান করে। এসময় সকল বেতারকর্মীদের ধীরে ধীরে মুজিবনগরে নিয়ে আসা হতে থাকে। ঢাকা হতেও ঢাকা বেতারের শিল্পী ও কুশলীরাও আসতে থাকেন। প্রথম অধিবেশনের দিন ধার্য করা হয় ২৫ মে। কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ৫৭/৮ নং দোতলা বাড়িটিতে রাষ্ট্রপতি ও অন্যান্য মন্ত্রীদের আবাসের কক্ষের সাথের একটি কক্ষে উক্ত ট্রান্সমিটার দিয়ে সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। পরে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীরা অন্য বাড়িতে উঠলে সেই ৫৭/৮ বাড়িটিই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থায়ী কার্যালয় রূপে গড়ে ওঠে। এরপর থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান নিয়মিত ভাবে সম্প্রচারিত হতে থাকে। এই কেন্দ্র দুটি ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

এছাড়া আরো ছিলেন
গীতিকারঃ সিকান্দার আবু জাফর, আবদুল গাফফার চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, আসাদ চৌধুরী, টি এইচ শিকদার প্রমুখ।
শিল্পীঃ সমর দাস, আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, অরুন গোস্বামী, মান্না হক, মাধুরী চ্যটার্জী, এম চান্দ, ইয়ার মোহাম্মদ, প্রবাল চৌধুরী, কল্যানী ঘোষ, উমা খান, নমিতা ঘোষ, স্বপ্না রায়, জয়ন্তী লালা, অজিত রায়, সুবল দাশ, কাদেরী কিবরিয়া, লাকি আখন্দ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহালনবীশ,ফকির আলমগীর, মকসুদ আলী সাই, তিমির নন্দী, মিতালী মূখার্জী, মলয় গাঙ্গুলী, রফিকুল আলম প্রমুখ।
সঙ্গীত কম্পোজঃ প্রনোদিত বড়ুয়া।
যন্ত্র সঙ্গীতঃ শেখ সাদী, সুজেয় শ্যাম, কালাচাঁদ ঘোষ, গোপী বল্লভ বিশ্বাস, হরেন্দ্র চন্দ্র লাহিড়ী, সুবল দত্ত, বাবুল দত্ত, অবীনাশ শীল, সুনীল গোস্বামী, তড়িৎ হোসেন খান, দিলীপ দাশ গুপ্ত, দিলীপ ঘোষ, জুলু খান, রুমু খান, বাসুদেব দাশ, সমীর চন্দ, শতদল সেন প্রমুখ।
ঘোষকঃ শেখ সাদী, শহিদুল ইসলাম, মোতাহের হোসেন, আশরাফুল আলম, অনিল কুমার, আবু ইউনুছ, জাহেদ সিদ্দিকী, মনজুর কাদের।
লাইব্রেরিয়ানঃ রঙ্গলাল দেব চৌধুরী।
স্টুডিও কর্মকর্তাঃ এস এম সাজ্জাদ।

নিয়মিত সম্প্রচারসমূহ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিছু নিয়মিত অনুষ্ঠান হলো পবিত্র কোরআনের বাণী, চরমপত্র, মুক্তিযুদ্ধের গান, যুদ্ধক্ষেত্রের খবরাখবর, রণাঙ্গনের সাফল্যকাহিনী, সংবাদ বুলেটিন, ধর্মীয় কথিকা, বজ্রকণ্ঠ, নাটক, সাহিত্য আসর এবং রক্তের আখরে লিখি। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল অনুষ্ঠান এম.আর. আখতার মুকুল উপস্থাপিত চরমপত্র। এখানে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অসংলগ্ন অবস্থানকে পুরনো ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপে তুলে ধরতেন। চরমপত্রের পরিকল্পনা করেন আবদুল মান্নান। আরেকটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান জল্লাদের দরবার পরিচালনা করতেন কল্যাণ মিত্র। অনুষ্ঠানটিতে ইয়াহিয়া খানকে “কেল্লা ফতে খান হিসেবে হাস্যরসাত্মকভাবে ফুটিয়ে তোলা হত। “বজ্র কণ্ঠ” অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণের অংশবিশেষ সম্প্রচার করা হত। বেতার কেন্দ্রে তরুণ শিল্পীরা দেশাত্মবোধক ও অনুপ্রেরণাদায়ক গান করতেন। সম্প্রচারের জন্য এসময় অনেক গান ও কবিতা লেখা হয়। কেন্দ্রের গায়কেরা পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে তহবিল সংগ্রহ করেন। এছাড়াও বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলা, ইংরেজি ও উর্দুতে সংবাদ সম্প্রচার করা হত।

সহায়ক উৎস: উইকিপিডিয়া

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।