ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

জন্মদিনে হাবু মামার কাণ্ড

অর্ণব রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৩
জন্মদিনে হাবু মামার কাণ্ড

আমাদের সবার প্রিয় হাবু মামার জন্মদিন। এ উপলক্ষে খুলনা থেকে আমাদের বড় খালা অর্থাৎ হাবু মামার বড় বোন একটা বিশেষ উপহার পাঠিয়েছেন।

উপহারটা আর কিছুই না, তেল রঙে আঁকা আমাদের হাবু মামার একটি পেইন্টিং। বলাই বাহুল্য পেইন্টিংটা অসাধারণ হয়েছে।

মামা সেটা নিয়ে দারুণ খুশি। ছবিটা খুলনা থেকে ডাকযোগে মামার জন্মদিনের ঠিক আগের দিন সকালে এলো। ছবিটা নিয়ে বিস্তর জল্পনা কল্পনা করার পর ঠিক হলো সেদিনই ছবিটা ড্রয়িংরুমের সদর দরজার উল্টো দিকের দেয়ালে ঝুলানো হবে, যেন দরজা দিয়ে ঢুকতে গেলে সেটা যে কারো চোখে পড়ে।

সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে মামার ভাগ্নে বাহিনী কাজে লেগে গেলাম। আমাদের লিডার যথারীতি আমাদের মামা। উৎসাহদাতা হিসেবে আছেন আমাদের মামি। স্টোররুম থেকে হাতুড়ি, পেরেক আর বহুদিনের পুরোনো একটা নড়বড়ে মই নিয়ে আমরা চলে এলাম ড্রয়িংরুমের নির্ধারিত স্থানে। এরপর মইটা ঠিকমতো বসিয়ে আমরা সরে এলাম।

মই বেয়ে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের মতো উঠে গেলেন মামা। মামার মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো যেন কোনো বীর সেনাপতি যুদ্ধ জয়ের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। মইয়ে উঠে মামা গম্ভীর মুখে হাতুড়ি আর পেরেক চাইলেন। আমরা এমনভাবে তাকে হাতুড়ি আর পেরেক দিলাম যে মনে হলো কোনো রাজাকে উপঢৌকন দেওয়া হচ্ছে। মামা আমাদের দিকে তাকিয়ে বিশ্বজয়ী হাসি দিলেন। আমরা যারা নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম তাদের মধ্য থেকে দুজন মইটা শক্ত করে ধরলাম, যেন সেটা পড়ে না যায়। মামা সন্তুষ্ট হয়ে পেরেক এবং হাতুড়ির দিকে মনোযোগ দিয়ে পেরেকে হাতুড়ির ঘা মারার জন্য হাতুড়িটা উঁচু করে ধরলেন। আমরা নিচে থেকে সবাই তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি।

এরপর দু’মিনিটেরও কম সময়ের ব্যবধানে যে নাটকটা মঞ্চস্থ হলো তা আমরা কখনো ভুলবোনা। আমাদের বীর হাবু মামা হয়তো একটু বেশিই উৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা সবাই দেখলাম তিনি সজোরে হাতুড়ির আঘাত করলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য! সে আঘাত হাতুরিতে না লেগে সেটা সোজা গিয়ে পড়লো মামার আঙুলে।

মামা হাতুড়ি ছুড়ে ফেলে আঙুল চেপে ধরে বসে পড়লেন। মামার ফেলে দেয়া হাতুড়ি আমাদের সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সোজা গিয়ে পড়লো কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা মামির মাথায়। মামি বিকট চিৎকার করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। তার হাতের ফাঁক দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়তে লাগল। আমরা যারা মামার মই ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তারা সহ বাড়ির সবাই মামির কাছে ছুটে গেলাম।

মইটা এমনিতেই নড়বড়ে ছিল, আর সেটার ওপর বসে আহত আঙুল নিয়ে মামা কাতরাচ্ছিলেন, সঙ্গে মইটা নড়ছিল।

ব্যস! আর যায় কোথায়! পাশেই মেঝেতে মামার জন্মদিনের পার্টি উপলক্ষে দই মিষ্টি এনে রাখা হয়েছিলো। মামা কাটা কলাগাছের মতো মইসমেত সোজা তার উপর গিয়ে পড়লেন। দই মিষ্টিতে মাখামাখি হয়ে মইয়ের নিচে চাপা পড়ে গেলেন।

মইয়ের নিচ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তিনি যতই হাঁচড়পাঁচড় করছেন ততই আরও বেশি দই মিষ্টিতে মাখামাখি হচ্ছেন। সে যে কি দৃশ্য! সে যে না দেখেছে সে বুঝতে পারবে না।

একদিকে মামা আর অন্যদিকে আহত মামিকে নিয়ে আমাদের প্রায় দিশেহারা অবস্থা। অবশেষে অনেক কষ্ট করে মইয়ের নিচ থেকে মামাকে বের করে আনা হলো। তাকে তখন দেখাচ্ছিলো ঠিক সার্কাসের ক্লাউনের মতো। এরপর তাকে কোনোরকম সাফসুতরো করে ফার্স্টএইড লাগিয়ে বাসায় রেখে আমরা মামিকে নিয়ে ছুটলাম সোজা হাসপাতালে।

বেচারা মামাকে সেবারের জন্মদিনটা বিছানায় বসেই পালন করতে হয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৩
মীম/এএ/এমজেডআর-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।