ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

গল্পে গল্পে অঙ্ক শিখি

মামার ডাব খাওয়া

ইমরুল ইউসুফ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৩
মামার ডাব খাওয়া

হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলেন রতনের ছোট মামা শাহীন। ঘামে তার সমস্ত শরীর ভেজা।

কাঁধ থেকে ব্যাগটা রেখেই তিনি ফ্যানের নিচে এসে বসলেন। বললেন, রতন তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি দাওতো।

ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এলো রতন। শাহীন মামা পানিটুকু ঢক ঢক করে গিলে ফেললেন। কিন্তু পানি খেয়ে ঠিক তৃপ্তি হলো না মামার। রতনকে বলল, ভাগ্নে পানি খেয়ে তো তৃষ্ণা মিটল না। আরও এক গ্লাস পানি দাও। তারপর দেখি আর কী খাওয়া যায়।

পানি আনার পর মামা বললেন, নারে মামা পানি খেয়ে মন ভরল না। আমার এখন খুব ডাবের পানি খেতে ইচ্ছে করছে। যে গরম পড়েছে তাতে ডাবের পানি খেতে পারলে প্রাণটা জুড়িয়ে যেতো। এই কথা শুনে রতন বলল, মামা তুমি জামাকাপড় ছাড়ো। আমি এই ফাঁকে তোমার জন্য ডাব পেড়ে আনছি।

আর এক মুহূর্তও ঘরে দাঁড়াল না রতন। দৌড়ে চলে গেল তাদের ঘরের পিছনে। রতনদের ঘরের পিছনটা খুব সুন্দর। সবুজ আর সবুজে ভরা ঘরের পিছনের অংশটা। আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি আর কলা গাছে ঠাসা। প্রায় সবগুলো গাছ ভরে আছে সবুজ, হলুদ রঙা ফলে।

গাছে এমন থোকা থোকা ফল দেখে রতনের মন ভরে গেল। ইচ্ছে হলো না নারিকেল গাছ ডাব পাড়তে। কিন্তু প্রিয় ছোট মামার ইচ্ছাটাকে পূরণ করতে চাইল রতন। এজন্য সে দৌড়ে নারিকেল গাছতলায় গিয়ে দাঁড়াল। দুই হাত রাখল গাছে। গাছের গায়ে ডান পাটা রাখতেই ছুটে এলো রতনদের পোষা গাভী লালী। লালী বলল, রতন বাবু তুমি গাছে উঠো না, পড়ে যাবে।

‘পড়ব না লালী’। বলল, রতন। কথা শুনল না লালী। বলল, শোনো রতন বাবু, তোমাকে আমি গাছে উঠতে দিতে পারি একটি শর্তে।

শর্তটা হলো, তুমি যে কয়টি ডাব পড়বে তা থেকে আমাকে অর্ধেক ডাব দিতে হবে। সেই সঙ্গে আরো একটি ডাব তোমার ভাগ থেকে দিতে হবে। কারণ আমার ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। মনে হচ্ছে ডাবের পানি খেতে পারলে জানটা ঠান্ডা হয়ে যেত।

শর্তে রাজি হয়ে গাছে ওঠা শুরু করল রতন। সে যখন গাছের মাঝখানে পৌঁছাল তখন গাছের গর্ত থেকে একটি কাঠবিড়ালি বের হলো। বলল, রতন আমি এই গাছে থাকি। আমাকে ডাবের ভাগ না দিয়ে তুমি কিন্তু নিচে নামতে পারবে না। শোনো, তুমি যে কয়টি ডাব পাড়বে তার অর্ধেক আমাকে দিবে। আর তোমার অর্ধেক ভাগ থেকে আরো একটি ডাব আমাকে দিতে হবে। তাহলে আমি তোমাকে ডাব পাড়তে দিব। তা না হলে দিব না। তুমি এই শর্তে রাজি থাকলে ডাব পাড়তে পারো। রতন এই শর্ত মেনে গাছের মাথায় উঠল।

যেই না সে ডাবে হাত রাখল, অমনি ছুটে এলো মোটাসোটা একটি গেছো ইঁদুর। ইঁদুর বলল, রতন ভাইয়া ডাব পাড়বে ঠিক আছে, কিন্তু ডাবের ভাগ দিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরাও ডাব খাই। শোনো ভাইয়া, তুমি যে কয়টি ডাব পাড়বে তার অর্ধেক আমাকে দিবে। সেই সঙ্গে তোমার ভাগ থেকে আরো একটি ডাব আমাকে দিবে। তাহলে ডাব পাড়তে পারবে। ইঁদুরের শর্তেও রাজি হলো রতন।

গাছের মাথায় বসে গালে হাত দিয়ে ভাবল রতন। আঙুল টিপে টিপে এমনভাবে হিসাব করল যেন সে সবাইকে চাহিদা মতো ডাব দিয়ে তার মামার জন্য অন্তত একটি ডাব নিয়ে যেতে পারে। তারপর সেই হিসাব অনুযায়ী রতন ডাব পাড়ল।

বন্ধুরা, তোমাদের এখন মাথা খাটিয়ে বলতে হবে, রতন মোট কয়টি ডাব পাড়লে ইঁদুর, কাঠবিড়ালি ও গরু লালীকে শর্ত অনুযায়ী ডাবের ভাগ দিতে পারবে? আর তার মামার জন্য নিয়ে যেতে পারবে অন্তত একটি ডাব।

উত্তর মিলিয়ে নাও: রতন মোট ডাব পাড়ল ২২টি। এর মধ্যে ইঁদুরকে ১১টি ও তার ভাগ থেকে ১টি এই মোট ১২টি ডাব দিল। হাতে থাকা ১০টি ডাব থেকে কাঠবিড়ালিকে দিল ৫টি ও নিজের ভাগ থেকে দিল একটি এই মোট ৬টি। আর হাতে থাকা বাকি ৪টি ডাব থেকে লালীকে দিল ২টি ও তার ভাগ থেকে ১টি। এই মোট ৩টি। অবশিষ্ট একটি ডাব রতন তার মামার জন্য নিয়ে গেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৩
এএ/আরআইএস-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।