ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

নাইস নূর-এর গল্প

অন্ধ রাজকন্যা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৩
অন্ধ রাজকন্যা

সে অনেক দিন আগের কথা। এক দয়ালু রাজার একটি মাত্র কন্যা ছিল।

তার নাম ছিল ইফরিতা নাইম। রাজকন্যা রূপে-গুণে ছিল অনন্যা। কিন্তু জন্ম থেকে সে ছিল অন্ধ। তবে এ নিয়ে রাজকন্যার কোনো দুঃখ ছিল না। অন্ধ হলেও মনের চোখ দিয়ে যেন সে সবই দেখতে পেত।

কিন্তু রাজার মনে ছিল অশান্তি। রাজা তার একমাত্র কন্যাকে অনেক দরবেশ, কবিরাজ দেখিয়েছিলেন। তারা সবাই একই কথা বলেছে যে, রাজকন্যা কখনোই চোখে দেখবে না। কিন্তু রাজার মন তবু সায় দেয় না। রাজা কোনো উপায় না পেয়ে জ্যোতিষীকে খবর দিলেন। জ্যোতিষী রাজকন্যার হাত ভালোভাবে দেখে বলল ‘রাজকন্যার ভাগ্য রেখা অনেক ভালো, সে একদিন চোখে দেখতে পাবে,তবে একটা শর্ত আছে। ’
রাজা জানতে চাইলেন,কি শর্ত?
- রাজকন্যাকে বিয়ে দিতে হবে।
-বিবাহ দিলে কী সে দেখতে পাবে?   জানতে চান রাজা।
-না, ঠিক তা নয়।   বলেন জ্যোতিষী।
-তাহলে?

-যদি কোন রাজপুত্র সততার সাথে রাজকন্যাকে ভালোবেসে বিবাহ করতে চায়,তাহলে সে দৃষ্টি পাবে। কিছুদিন পর সব রাজ্যে এ খবর দেয়া হল এবং ঘোষণাও দেয়া হল রাজকন্যাকে যে বিবাহ করবে,সে এই রাজ্যের পরবর্তী রাজা হবে। তারপর ধীরে ধীরে সব রাজ্যের রাজপুত্রদের কানে এই খবর পোঁছে গেল। বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাজপুত্ররা রাজকন্যাকে দেখতে এলো।

কিন্তু কারো কথাতেই রাজকন্যার চোখ ভালো হল না। আসলে সবারই রাজ্য পাওয়ার লোভ ছিল, রাজকন্যাকে নয়। যে রাজপুত্ররা এসেছিল, তারা একে অপরকে বলেছিল, ‘আরে রাজকন্যা তো কোনদিনেই দেখতে পাবে না, কিন্তু তাকে বিয়ে করলে তো রাজপ্রাসাদ পাওয়া যাবে’।

এই ভেবে অন্ধ রাজকন্যাকেও অনেকেই বিয়ে করতে চাইলো। কিন্তু রাজা তার সিদ্ধান্তে অটল। রাজকন্যার দৃষ্টি আগে,তারপর বিয়ে। অনেকদিন পেরিয়ে গেল,তবুও সৎ রাজপুত্রের দেখা নেই। রাজা খুব হতাশ হলেন।

কেটে গেল কয়েক মাস। একদিন গোধূলি বেলায় রাজকন্যা ইফরিতা ফুল বাগানে একা একা ঘুরছিলেন। দূর থেকে এক রাজপুত্র রাজকন্যাকে দেখতে পেলেন। রাজপুত্র ছিলেন অনেক ক্লান্ত। শিকার শেষে তিনি এই পথ দিয়েই রাজ্যে ফিরছিলেন,হঠাৎ রাজকন্যাকে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। ঘোড়া থেকে নেমে ফুল বাগানে এলেন। রাজকন্যা পায়ের আওয়াজ পেয়ে বললেন, কে? কে ওখানে?
- আমি রাজপুত্র আজোয়াদ, এই পথ দিয়েই আসছিলাম। বলল রাজপুত্র।
-আচ্ছা।   কি চাই?
-কিছু না, তোমার চোখ দু’টো অনেক সুন্দর।
-আমি চোখে দেখি না।
-তাতে কি হয়েছে? কী নাম তোমার রাজকন্যা?
-ইফরিতা নাইম।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি রাজকন্যা, তোমাকে বিবাহ করতে চাই।
আচমকা রাজকন্যার চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করতে লাগল। সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত নামছে। বৃষ্টিও পড়ছে টিপ টিপ। রাজপুত্র, রাজকন্যার চোখে হাত বুলিয়ে দিল। তারপর একটু পরেই রাজকন্যা রাজ্যের সবকিছু দেখতে পেল। রাজপুত্র বলল, রাজকন্যা আমি কি তোমাকে ‘আমায়া’ বলে ডাকতে পারি?
- ঠিক আছে, কিন্তু এর অর্থ কি?
- রাতের বৃষ্টি।

তারপর কিছুদিন পর বেশ ধুমধাম আয়োজনে রাজকন্যার বিয়ে হলো। দয়ালু রাজার আর কোন দুঃখই রইলো না। রাজ্য আনন্দ খুশিতে ভরে উঠলো।

ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: ichchheghuri24@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।