ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বালক যিশু ও তার কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা

ইমরুল ইউসুফ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩
বালক যিশু ও তার কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা

ধর্মের অন্যতম শিক্ষা মানুষের কল্যাণ। মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ জাগিয়ে তোলা।

তাকে কল্যাণমুখী করা। মহৎ জীবনের অধিকারী যারা তারা সারাজীবন মানবতার মুক্তি ও মানুষের কল্যাণের জন্য সাধনা করে গেছেন। মহৎ সেসব মানুষের মধ্যে যিশু অন্যতম। তোমরা সবাই মহান যিশুর জন্মের ইতিহাস জানো। জানো তিনি কত সালে এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। আজ থেকে ২০১৩ বছর আগে ২৫ ডিসেম্বর প্যালেস্টাইনের বেথেলহামে তার জন্ম। তার বাব‍ার নাম ছিল যোসেফ। মায়ের নাম মারিয়া।

দেখতে দেখতে যিশুর বয়স ১২ বছর হয়ে গেল। বয়স ১২ বছর হলে ইহুদি ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হতো। সেসময় ইহুদিদের ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম ছিল নিস্তার পর্ব। যিশু প্রথমবারের মতো এই উৎসবে যোগ দিতে জেরুজালেম শহরে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা-মা। তিন দিন পর উৎসব শেষ হলো। সবাই ফিরে যেতে লাগল নিজ নিজ বাড়িতে। যোসেফ ও মারিয়া বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলেন। যিশুর বাবা-মা ভাবলেন, তাদের ছেলে লোকজনের মধ্যেই আছে। অথচ যিশু বাড়ির পথে রওয়ানা না হয়ে গির্জায় অর্থাৎ ধর্মধামে থেকে গেলেন।

তিন দিন পর তার বাবা-মা যিশুকে খুঁজে পেলেন। দেখলেন তাদের প্রাণপ্রিয় পুত্র ধর্মীয় শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছেন। কখনো যিশু শিক্ষকদের কথা শুনছেন। আবার কখনো শিক্ষকদের প্রশ্ন করছেন। ওই সময় গির্জায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা যিশুর কথা শুনে অবাক হচ্ছিলেন। কারণ বয়সে তাদের চেয়ে অনেক ছোট হলেও যিশু অনেক জ্ঞানের কথা বলছিলেন।

যিশুকে পেয়ে তার বাবা-মা খুব আনন্দিত হলেন। মা বললেন, বাবা তুমি আমাদের সঙ্গে এমন করলে কেন? তোমার বাবা ও আমি তোমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি। এই কথা শুনে যিশু বললেন, তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে, আমার পিতার ঘরে আমাকে থাকতে হবে। এরপর যিশু তার মা-বাবার সঙ্গে নাসরতে ফিরে গেলেন। বয়সে, জ্ঞানে, ঈশ্বর ও মানুষের ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলেন যিশু। এরপর কেটে গেল আরো ১৮টি বছর। এই ১৮ বছর তিনি কোথায় ছিলেন, কী করেছিলেন তা জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয়, এই বছরগুলোতে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। মানুষের উপকার করে বেড়াতেন। মানুষকে সৎ উপদেশ দিতেন।

তার বয়স যখন ৩০ বছর তখন তিনি নাসরত ত্যাগ করেন। উদ্দেশ্য প্যালেস্টাইনের সব প্রদেশগুলো ঘুরে দেখা। তিনি যখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন তখন তার সঙ্গে থাকতেন ১২ জন শিষ্য। তারা হলেন- পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব, যোহন, ফিলিপ, বর্থলময়, থোমা, মথি, আলফেয়ের পুত্র যাকোব, থদ্দেয়, শিমোন ও যিহুদা। যিশুর মৃত্যুর পর শিষ্যদের মধ্যে যোহন ও মথি যিশুর জীবনের কথা লিখেছিলেন।

যিশুর জীবনীলেখকদের কাছ থেকে জানা যায়- প্রতিদিন নানা ধরনের লোক আসতো যিশুর কাছে। ধর্মের শিক্ষক, ধনী লোক, গরিব লোক, ভিখারি, সবাই আসতো তার কাছে। যিশু ঈশ্বর সম্বন্ধে কী শিক্ষা দিতেন তা শুনত। আর দেখতে আসত যিশু কীভাবে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলেন। নিচে যিশুর এমনই কয়েকটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ করা হলো।

কুষ্ঠ রোগী ভালো হয়ে গেল: একদিন যিশু পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসছিলেন। এমন সময় একটি লোক দৌড়ে যিশুর কাছে এলো। লোকটি কুষ্ঠ রোগে ভুগছিল। সে যিশুর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসল। তারপর বলল, মহামান্য যিশু আপনি দেখতেই পাচ্ছেন আমি একজন কুষ্ঠ রোগী। আপনার যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে আপনি আমাকে ভালো করতে পারেন। এই কথা শুনে যিশু খুব দুঃখ পেলেন। হাত দিয়ে কুষ্ঠ রোগীকে ছুঁয়ে বললেন, আমিও চাই তুমি সুস্থ হও। তখনই লোকটির কুষ্ঠ রোগ ভালো হয়ে গেল। যিশু তখন বললেন, শোনো কাউকে এ কথা বলো না। যাও, তাড়াতাড়ি ইমামের কাছে যাও। তাহলে তার কাছ থেকেই সবাই জানবে যে তুমি ভালো হয়ে গেছ।

ঝড় থামিয়ে দিলেন যিশু: একদিন সন্ধ্যায় যিশু একটি নৌকায় উঠলেন। তারপর তার শিষ্যদের বললেন, চলো আমরা সাগরের ওই পারে যাই। শিষ্যরা তার সঙ্গে নৌকায় উঠলেন। হঠাৎ সাগরে ভীষণ ঝড় উঠল। নৌকার উপর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। যিশু তখন নৌকার পিছন দিকে ঘুমাচ্ছিলেন। শিষ্যরা ছুটে এসে যিশুকে জাগালেন। বললেন, প্রভু আমাদের বাঁচান। এই কথা শুনে যিশু উঠে দাঁড়ালেন। চারদিকে এমন অবস্থা দেখে ঝড়কে আদেশের সুরে বললেন, শান্ত হও। পানির ঢেউকে বললেন, স্থির হও। সঙ্গে সঙ্গে ঝড় থেমে গেল। সাগরের পানি স্থির হয়ে গেল। এতে তার শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। বললেন, ইনি কেমন লোক যে বাতাস ও সাগর তার কথা শোনে!

মৃত মেয়ে জীবন ফিরে পেল: গালীল এলাকায় যায়ীর নামে এক ইহুদি নেতা ছিলেন। তার ছিল ১২ বছর বয়সী একটি মেয়ে। একদিন মেয়েটি মারা গেল। যিশুকে এই সংবাদ দেওয়া হলে যিশু যায়ীরের বাড়িতে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন তার শিষ্য পিতর, যাকোব ও যোহন। তারা যায়ীরের বাড়িতে পৌঁছে দেখলেন- লোকজন চিৎকার করে কাঁদছে। যিশু তখন বললেন, এত কান্নাকাটি হচ্ছে কেন? তোমরা বাইরে যাও। মেয়েটি তো মারা যায়নি, ঘুমাচ্ছে। এই কথা শুনে লোকজন হাসাহাসি করতে লাগল। তখন তিনি সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। শুধু থাকতে বললেন মেয়ের মা-বাবা ও তার তিন শিষ্যকে। লোকজন চলে যাওয়ার পর তিনি ঘরে ঢুকে মেয়েটির হাত ধরলেন। বললেন, ‘টালিথা কুমি’ অর্থাৎ ওগো ছোট মেয়ে জেগে ওঠো। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি জেগে উঠল। তারপর ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল। যিশু বললেন, মেয়েটিকে কিছু খেতে দাও। এই ঘটনার কথা তোমরা কাউকে বলো না।

অন্ধ মানুষের চোখ ভালো হয়ে গেল: যিশু ও তার শিষ্যরা একদিন যিরিহ শহর ছেড়ে অন্য কোনো শহরে যাচ্ছিলেন। পথের ধারে দু’জন অন্ধ লোক বসে ভিক্ষা করছিল। যিশু সেই পথ দিয়ে যাচ্ছেন শুনে একজন চিৎকার করে উঠল। বলল, প্রভু দাউদের বংশধর, আমাদের প্রতি রহম করুন। এই কথা শুনে যিশু দাঁড়ালেন। তাদের কাছে ডেকে বললেন, তোমরা কী চাও? তারা বলল, প্রভু আমাদের চোখ ভালো করে দিন। তখন যিশু অনেক মমতায় একে একে দু’জনের চোখে হাত ছোঁয়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখ ভলো হয়ে গেল। তারা আবার পৃথিবীর আলো দেখতে পেলেন।

এভাবেই যিশু সবসময় মানুষের উপকার করতেন। মানুষের বিপদের সঙ্গী হতেন। সবাইকে সৎ উপদেশ দিতেন। তিনি সবসময় বলতেন, কেউ যদি তোমাকে আঘাত করে তুমি তাকে আঘাত করো না। তোমার এক গালে কেউ চড় মারলে আরেকটি গাল পেতে দাও। এজন্য তার ওপর কখনো প্রতিশোধ নিও না। তোমার যারা শত্রু তাদের ভালোবাস। যারা তোমায় কষ্ট দেয় তাদের জন্য প্রার্থনা করো। তিনি আরও বলতেন, লোক দেখানো প্রার্থনা কোরো না। লোক দেখানো প্রার্থনা যারা করে তারা ঈশ্বরের পুরস্কার পায় না।
        

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।