ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

একুশের ইতিকথা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
একুশের ইতিকথা

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কী ভুলিতে পারি...
 
একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে প্রভাতফেরিতে চিরচেনা এই গান গেয়ে উঠেছি সবাই। গানের কলিগুলো বারবার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির গল্প, যেদিন মাতৃভাষা বাংলার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিল ছাত্র-জনতা, যেদিন মাতৃভাষা বাংলার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে বাংলার বীর ছেলেরা।


 
বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা, প্রাণের ভাষা। সেজন্যই এই ভাষার যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছিল বাঙালিরা।
 
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়- ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল। আমাদের বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান, আর পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। দুটি অংশের মধ্যে অনেক অনেক দূরত্ব ছিল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের এই দুই অংশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা- কোনো দিকেই কোনো মিল ছিল না।

ভাষার ভিন্নতা ছিল অনেক বড় একটি সমস্যা। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। আর পশ্চিম পাকিস্তানে চারটি ভাষায় কথা বলা হত। তখন বাংলা এবং সেই চারটি ভাষাগোষ্ঠীর মানুষদেরকে নিজেদের ভাষা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে চলে যায় পাকিস্তান সরকার।
 
১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গভর্নার জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হলে ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এতে ক্ষেপে যায় ছাত্র-জনতা। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও বরেণ্য ব্যক্তিরা বাংলার পক্ষে দাঁড়ান।
 
তখন পাকিস্তানের জনসসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে বাঙালি ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ। তাই বাংলারই ন্যায্য অধিকার ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পরবর্তীতে অনেকেই তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।  

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে হরতাল ডাকা হয়। সেদিন বেশিরভাগ ছাত্র-নেতাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
আস্তে আস্তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সাধারণ মানুষের মনেও জাগ্রত হয় প্রিয় ভাষার অধিকার রক্ষার প্রতিজ্ঞা।
 
এসবকিছুর ফলস্বরূপ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। সেদিন ছাত্ররা ঠিক করে তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জোরালো ভাবে তুলে ধরবে। কিন্তু সেদিন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য দলবেঁধে বেরিয়ে আসে তারা। আর তখনই তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। নির্বিচারে গুলি চালায় ছাত্র-জনতার উপর। গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাষার জন্য শহীদ হন রফিক-শফিক-সালাম-বরকত-জব্বার।
 
কিন্তু তাদের এই আত্মদানের বিনিময়ে পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।
ভাষাশহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে নির্মিত হয় শহীদ মিনার।
 
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাঙালিদের ভাষা আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এখন বাংলাদেশ ছাড়াও আরো অনেক দেশে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালন করা হয়।

বাংলা আমাদের গৌরব, আমাদের অহংকার। একুশের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব তাই আমাদেরই।   
 
বাংলাদেশ  সময়: ০৩৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।