ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

জিনের সঙ্গে বসবাস

শাহজাহান মোহাম্মদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৪
জিনের সঙ্গে বসবাস

চলতে ফিরতে কে যেন আমাকে অনুসরণ করে। মনে হয় আমার পিছনে পিছনে আসছে।

পিছন ঘুরে তাকালেই দেখি আমার পিছনে সাধারণ মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই। তবে মানুষ যে নয় তা আমি বুঝতে পারি। কারণ আমি অনুভব করি কে যেন আমায় আগলে ধরে রেখেছে। অনেক সময় আমার শরীরের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। নিজেকে ভারী ভারী লাগে। আবার ভয়ে ভয়ে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে যায়।

বেশির ভাগ রাতের বেলায় আমায় অনুসরণ করে থাকে। আমি বুঝতে পারি। দেখা গেছে আমি হয়তো রুমে শুয়ে শুয়ে পেপার, বই পড়ছি বা বিশ্রাম করছি, ঠিক আমার খাটের পাশ দিয়ে কে যেন হেঁটে চলে গেল। আমি দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু বুঝতে পারছি। মানুষ মানুষকে যখন পাশ কেটে যায় তখন যে হাওয়া বা বাতাস লাগে সেটা সবাই বুঝতে পারে। বুঝতে পারি আরও ছায়ার মতো বিশাল আকৃতির একটা অবয়ব। হাত পা মাথা শরীর এসব আকৃতি বোঝা যায়। কিন্তু চোখ মুখ বা অন্য কিছু বোঝা যায় না।

অনেক সময় ভাবতে ভয় হয় যে একি দেখছি। অন্ধকারে চলতে ভয় পাই না তবে কখনো কখনো চলার সময় ভয় হয়। যদি ভূত না হয়ে মানুষ বা অন্য কেউ ঘরে ঢুকে থাকে থাকলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। যদি হাত পা বেঁধে মার ধর করে ঘরে যা আছে নিয়ে যায়। নিয়ে গেলেও তো বাঁচি। খুন খারাবি করে যদি চলে যায়।

এই ভয়ে ঘরের আনাচে-কানাচে খাটের নিচে ঘুরে ঘুরে দেখি। কিন্তু কোথাও কোনো মানুষের সন্ধান নেই। শুধু দেয়ালের মধ্যে কয়েকটি টিকটিকি ঘুরে বেড়ায় আর ঠিক ঠিক বলে বুঝিয়ে দেয় যা আমি চিন্তা করি। দরজা বন্ধ থাকে। কি করে মানুষ আসবে। মন তো মানে না। মনে হয় মানুষ বুঝি লুকিয়ে আছে।

অফিস থেকে ফিরে এসে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় একটু বিশ্রাম নেই। বুয়া না আসলে নিজেকেই রান্নার কাজ সারতে হয়। মসজিদে নামাজ না পড়তে পারলে সেদিন বাসায় পড়ে নিতে হয়। তারপর খাওয়া শেষ করে শোয়ার জন্য বিছানায় গেলে একটি নোটপ্যাড ও কলম বালিশের পাশে থাকে সব সময়। সেটি নিয়ে হয় তো লেখাজোকা করছি। বাইরের বাতি বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে এই কাজ।

রাত যত বাড়তে থাকে আনাগোনা ততই বাড়তে থাকে। গভীর রাতে শুরু হয়ে যায় চলা ফেরা। মনে হয় কে যেন হাঁটছে বাসার ভেতরে ড্রইংরুমে, পাক ঘরে। মনে হয় রান্না করছে। ডাল তেলানিতে ছাড়ছে। আবার কখনো কখনো ডিম ভাজার শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। থালা-বাসনে শব্দও হচ্ছে। প্রথমে ভয়ে গা ছমছম করে উঠতো। একা বাসায় এসব ঘটনা যদি ঘটে তাহলে মনের অবস্থা কি দাঁড়ায়? অনেক সময় নিজের মনকে বোঝাতাম ধূর ছাই এসব কি চিন্তা করছি। হয়তো এসব পাশের বাসার শব্দ। কিন্তু একদিন দুইদিন তিনদিন উঠে দেখি পাশের বাসার লোকজনও ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনো সাড়া শব্দ নেই।

চারিদিকে নিঝুম রাত। কোনো তিল পরিমাণ শব্দও নেই। তবে বাইরে রাস্তায় মাঝে মাঝে গাড়ির শব্দ কানে এসে মনকে ধাক্কা দেয়। আমিও তো মানুষ। মানুষ মানেই ভয় ভীতি। তবে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতে নেই। এটা যেমন সত্য, তেমনি মানুষের মনে ভয়ডরও বেশি কাজ করে। এরকম প্রতি রাতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে চলে। তারপর মনে হয় তারাও খেয়ে-দেয়ে হাত মুখ মুছে বাথরুম সেরে হয়তো শুয়ে পড়ছে। অনেকে বলে কিছু কিছু বাসাবাড়িতে এই ধরনের উপরি প্রভাব আছে। আসলে কথাটা মিথ্যা হলেও সত্য। উপরি বলতে আমার কাছে স্বাভাবিক জীবনের বাইরে কিছু অবিচ্ছিন্ন ঘটনা।

চোখ বন্ধ করলে বা একটু তন্দ্রা হলেই বুঝি আমার মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আমি কথা বলতে চাইলেও বলতে পারি না। মনে হয় কে যেন আমার কথা রোধ করে ধরেছে। আবার চোখ খুলতে চাইলেও পারছি না। অনেক বার চেষ্টা করেও দেখেছি কিন্তু খুলতে পারি নি। এবার দেখি সে আমার মাথার উপর দিয়ে হাত আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দিচ্ছে। চিৎকার করতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না। দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাও করছি দৌঁড়াতে পারছি না। মনে হয় আমার দুই পা জড়িয়ে আসছে। এভাবেই একসময় আমি ঘুমন্ত অবস্থায় গো গো শব্দ করতে থাকি আর হাত পা কাঁপতে থাকে। যদি কেউ পাশে থাকে তখন আমাকে ঝাঁকিয়ে বা ধাক্কা দিয়ে তোলে। বলে কি হয়েছে? এমন করছেন কেন? সে দোয়া কালাম পড়ে আমার শরীরে ফু দিতে থাকে। আমি আচমকা চমকে উঠে দেখি আমার শরীর ঘেমে গেছে আর পানির পিপাসা লেগেছে। কেউ না থাকলে সব সময় মনে হয় আমার পাশে পাশে ঘুরছে। দাঁড়িয়ে আছে এটা যেন তার একমাত্র কাজ।

এই কথাগুলো আমার গ্রামের বাড়িতে বললে আমার মা বলে তোমার সঙ্গে যে কিছু একটা আছে তা আমরা এখান থেকে বুঝতে পারি। কারণ আমার চাচাতো বোনকে এরকম দুষ্ট জিন ধরেছিল। আমার বোন বলেছে- সে কোথায় আছে? আমি জানি তাকে সাবধান থাকতে বলিস। এই কথাতে বোঝা যায় যে আমার ওপর নজরদারি আছে। যা আজও  আমাকে তাড়া করে। এটা আমার মনের ভুল হলেও সত্যি অনুভূতিটা রোমাঞ্চকর!

বাংলাদেশ সময়:১৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।