ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলা সাহিত্যে সাইন্স ফিকশনের ইতিকথা

অর্ণব রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৪
বাংলা সাহিত্যে সাইন্স ফিকশনের ইতিকথা

বন্ধুরা তোমরা নিশ্চয় সাইন্স ফিকশন পড়তে খুব ভালোবাস। কিন্তু তোমরা কি জানো বাংলা সাহিত্যে সাইন্স ফিকশনের জন্ম কবে? আজ তোমাদের বাংলা সাহিত্যে সাইন্স ফিকশনের ইতিবৃত্ত জানাবো।



‘আর্থার সি ক্লার্ক’কে বিবেচনা করা হয় সাইন্স ফিকশনের জনক হিসেবে। ‘Two Thousand One Space Odyssey’ কাসিক গ্রন্থসহ প্রায় ১০০টি রহস্যগ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। তার লেখার মূল বিষয়বস্তু পরবর্তীতে বাস্তবে রূপ পেলেও বহির্জাগতিক প্রাণের দেখা পাওয়ার স্বপ্ন তার কাছে স্বপ্নই থেকে গেছে। তবু নাইট উপাধিখ্যাত ৯০ বছর বয়সী আর্থার বিশ্বাস করতে ভালোবাসতেন, কোনো না কোনোদিন পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে বহির্জগতের বুদ্ধিমান প্রাণী সত্যিই পাওয়া যাবে।

সাইন্স ফিকশন রচয়িতা হিসেবে জুল ভার্নের নামও সমানভাবে উচ্চারিত হয়। তিনি তার সাবলীল লেখনির মাধ্যমে একজন প্রসিদ্ধ সাইন্স ফিকশন লেখক হিসেবে পরিচিতি দুনিয়াজুড়ে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষও বিজ্ঞানমুখিতায় সাইন্স ফিকশনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। বাংলা সাহিত্যেও এর ছোঁয়া লক্ষ্যণীয়। সাহিত্যের এক প্রবল অংশ হিসেবে এটি বাংলা সাহিত্যেও পাঠক সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে উনিশ ও বিশ শতকের প্রথমদিকে ব্রিটিশ অধ্যূষিত অবিভক্ত ভারতে বাংলা ভাষার সাহিত্যিকরা বিভিন্ন বিষয়ে সাইন্স ফিকশন রচনা করেছেন। এরই ধারায় ১৮৭৯ সালে বিখ্যাত বাঙালি সাইন্স ফিকশন রচয়িতা জগদানন্দ রায় ‘শুক্রভ্রমণ’ রচনা করেন। জগদানন্দ রায় শান্তিনিকেতনের শিক্ষক ছিলেন। হেমলাল দত্ত ১৮৮২ সালে ‘দর্পণ’ পত্রিকায় ‘রহস্য উপন্যাস’ লিখে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। জগদীশ চন্দ্র বসুকে বাংলা সাইন্স ফিকশনের জনক বলা হয়। জগদীশ চন্দ্র বসু বহির্জাগতিক প্রাণের দেখা পাওয়ার বিশ্বাস থেকে ‘সাইন্স ফিকশন’ নির্ভর সাহিত্য রচনার শুরু। ১৮৯৬ সালে লেখা ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ বাংলা সাইন্স ফিকশনের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। তার ‘পালাতক তুফান’ সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম উপন্যাস ‘কুহকের দেশে’, হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ‘মেঘদুতের মর্তে আগমন’সহ বেশকিছু রহস্য উপন্যাস সে সময় জনপ্রিয় হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্রের উত্তরসুরী অদ্রিশ বর্মনসহ অনেকেই সাইন্স ফিকশন লিখতে শুরু করেন। কিন্তু প্রেমেন্দ্র মিত্র ছাড়া সবাই ‘সাইন্স ফ্যান্টাসি’ লেখক হিসেবে বেশি পরিচিতি পান। ১৯৬০ সালে সত্যজিত রায় ‘দি এলিন’ লেখেন। যেটি মি. অ্যাং নামে ব্যাপক পরিচিত পায়। পরে এটি নিয়ে তিনি একটি ছবিও নির্মাণ করেন। ভারতের অন্যান্য লেখকদের মধ্যে লায়লা মজুমদার, সুনীল গাঙ্গুলী, কিন্নর রায়, শীর্ষেন্দু মুখার্জী, সমরেশ মজুমদার, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ অন্যতম। বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নারীদের অধিকার সচেতনার পক্ষে একটি অনবদ্য সৃষ্টিকর্ম। “সুলতানা’স ড্রিম” ১৯০৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আহমেদের সাইন্স ফিকশনবিষয়ক প্রথম উপন্যাস ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’। এটি বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণ সাইন্স ফিকশন উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত।

হুমায়ুন আহমেদের ‘তারা তিনজন’, ‘ইরিনা’ ‘অনন্ত নক্ষত্র বীথি’, ‘ফিহা সমীকরণ’ বাংলা সাইন্স ফিকশনে এক অনন্য সংযোজন। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা সাইন্স ফিকশনকে উত্তরাধুনিক ঘারানায় উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তার প্রথম গল্প ‘ছেলেমানুষী’ ছাপা হয। ১৯৭৭ সালে তার প্রথম বই ‘কেপেট্রোনিক সুখ দুঃখ’ প্রকাশিত হয়। মুক্তধারা থেকে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর বাংলা সাইন্স ফিকশন বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তার ‘দীপু নাম্বার টু’ চলচ্চিত্র হিসেবে টেলিভিশনে প্রচার হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ‘মহাকাশে মাহাত্রাস’, ‘বিজ্ঞানী সফদার আলীর মহা মহা আবিস্কার’, ‘জলমানব’, ‘একজন অতিমানবী’, ‘প্রজেক্ট নেবুলা’ ‘পরী’, ‘সুহানের স্বপ্ন’, ‘নয় নয় শূন্য তিন’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সাইন্স ফিকশন গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘মৌলিক’ সাইন্স ফিকশনের প্রথম পত্রিকা যার সম্পাদক ছিলেন তারই ভাই প্রখ্যাত কাটুনিস্ট আহসান হাবীব। পত্রিকাটি সাইন্স ফিকশনভিত্তিক সাহিত্য উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখে। তবে বাংলা সাইন্স ফিকশন পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার অবদান যার সবচেয়ে বেশি তিনি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। যার বিশ্বাস, মানুষ যত বড় হোক না কেন তার ভেতরে শৈশব বেঁচে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।