ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রক্তরাঙা একুশ

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
রক্তরাঙা একুশ

একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালির এক ঐতিহাসিক বিজয়ের দিন।

১৯৫২ সালের এই দিনেই বীর বাঙালি মাতৃভাষা বাংলার জন্য রক্ত দিয়েছিল, রক্ষা করেছিল প্রাণের বাংলা ভাষাকে। সেদিনের ভাষাশহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা শহীদ দিবস পালন করি।

ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে হলেও এর ইতিহাসটা কিন্তু আরো আগের। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশকে দুটো দেশে ভাগ করে দিয়েছিল, ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের আবার দুটো অংশ ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব ছিল অনেক, ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি- সব ক্ষেত্রেই অমিল ছিল বেশি।

এসব অমিলের মধ্যে ভাষার অমিলটা বেশ বড় একটা সমস্যা ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন চারটি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলত। আর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা কথা বলত বাংলায়। বাঙালিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তখন পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৯০ লাখ। এরমধ্যে বাঙালি ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলারই হওয়া উচিত ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধু উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পরবর্তীতে অনেকেই তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
  
১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ কার্জন হলে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বলেন, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এ বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে জনতা, শুরু হয় বিক্ষোভ।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে হরতাল ডাকা হয়। সেদিন বেশিরভাগ ছাত্র-নেতাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

আস্তে আস্তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সাধারণ মানুষের মনেও জাগ্রত হয় প্রিয় ভাষার অধিকার রক্ষার প্রতিজ্ঞা।

এসবকিছুর ফলস্বরূপ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। সেদিন ছাত্ররা ঠিক করে তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরবে। কিন্তু সেদিন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য দলবেঁধে বেরিয়ে আসে তারা। আর তখনই তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। নির্বিচারে গুলি চালায় ছাত্র-জনতার উপর। গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাষার জন্য শহিদ হন রফিক-শফিক-সালাম-বরকত-জব্বার।

কিন্তু তাদের এই আত্মদানের বিনিময়ে পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি একটি জাতীয় দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন।

ভাষাশহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাঙালিদের ভাষা আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এখন বাংলাদেশ ছাড়াও আরো অনেক দেশে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালন করা হয়।

রক্তের বিনিময়ে বাঙালি একদিন রক্ষা করেছিল প্রাণের বাংলা ভাষা। সেদিনের সেই বীরদের আমরা কখনো ভুলব না। আমরা কখনো ভুলব না তাদের আত্মত্যাগের কথা, ভাষার জন্য তাদের ভালোবাসার কথা। তাই তো প্রতিবছরই একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে প্রভাতফেরিতে সবার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠি-

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি?’



বাংলাদেশ সময়: ০১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।