ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।

বাংলানিউজের ইচ্ছেঘুড়ি বিভাগ ধারাবাহিকভাবে এ কিশোর উপন্যাসটি প্রকাশ করছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার—সপ্তাহের এ তিনদিন উপন্যাসটির একটি করে নতুন পর্ব প্রকাশিত হবে।



পর্ব ১ পড়তে ক্লিক করো

রদিন দ্বিতীয় ছানাটিকে নিতে অন্য একজন আসে। তার নাম মিসেস হিলকস, থাকেন একই গ্রামের ভাটি এলাকায়। জেসি তাকে দেখে খুব খুশি হয়, কারণ মিসেস হিলকস খুবই নরম মনের মহিলা। নিজ বাড়ির পেছন দিকে তিনি একটা হাঁস-মুরগির খামার দিয়েছেন, এবং তার হয়ে পাহারা দেবার জন্য এখন একটা কুকুর চাই। তিনি দুটা ছানাকে খুব ভালো করে দেখেন। একটা মাকে ছেড়ে যাবার ভয়ে জেসির পাশে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে। কিন্তু অন্যটি বেরিয়ে আসে এবং মিসেস হিলকসের গোড়ালিতে থাবা ঘষে দেয়।

‘তুমিই আমার জন্যে!’ বৃদ্ধা মহিলা বলেন। ‘শেয়াল বা ভবঘুরে কাউকেই তুমি আমার হাঁস-মুরগি নিয়ে যেতে দিবে না, দিবে কি? তুমি চমৎকার ছোট্ট একটা কুকুর, তাই না! আমার সঙ্গে চলো। ’



মা, তুমি জানো, আমি ওকে কী নামে ডাকব? আমি ওকে শ্যাডো বলে ডাকব—কারণ ও আমাকে আমার ছায়ার মতো অনুসরণ করে। আহ্, নিজের একটা কুকুর পেয়ে এখন আমি খুব সুখী, শ্যাডো! শ্যাডো! নামটা তোমার কতটা পছন্দ হলো?’
‘হুফ!’ শ্যাডো বলে। এবং গর্বের সঙ্গে লেজ নাড়ে। ওর এখন একটা নাম আছে, একজন প্রভু আছে। তার একটা বাড়ি আছে। এখন সে একটা উপযুক্ত কুকুর—তার লেজ আর গোঁফও আছে, সে এখন সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে পারবে তাকে কতটা আদর যত্নে রাখা হয়েছে



এভাবে দ্বিতীয় কুকুর ছানাটিও চলে গেল। দু-তিনদিনের মাঝে তৃতীয়টির জন্য কেউ আর আসে না। সে খুব ভয়ানকভাবে তার ভাইদের হারিয়েছে। তাদের জন্য সে বিলাপ করে কাঁদে আর খামারের আশপাশের সব জায়গা আতিপাতি করে খুঁজে দেখে। জনিরও ওর জন্য খুব খারাপ লাগে, এবং কাছে আসলেই সে ওকে শিস দিয়ে ডাকে।

খুব তাড়াতাড়ি ছানাটি জনিকে সব জায়গায় অনুসরণ করতে শুরু করে। জনির পায়ের গোড়ালির সঙ্গে এটে থাকে, আর ছেলেটাও ছোট্ট এই জন্তুটার এতসব কাণ্ডকারখানা দেখে হাসে।

‘তুমি দেখছি আমার ছায়ার মতো, যেখানে যাচ্ছি সেখানেই আমাকে অনুসরণ করছো!’ সে বলে। ‘ঠিক আছে, তুমি তাহলে আমার, এখন থেকে আমি তোমাকে শ্যাডো নামে ডাকব। ’

‘জনি! জনি! ওই কুকুর ছানাটিকে ট্রেনে করে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে হবে। ’ ওর বাবা চেঁচিয়ে বলে। ‘একটা বাক্স নিয়ে এসো, আর সেটার ভেতর কিছু খড়ও রেখো, আর বড় একটা বিস্কুটও দিও। চলে যাবার আগে ওকে পানি খাইয়ে নিও। তারপর বাক্সে ভরে ফার্মের মালবাহী গাড়িটার মধ্যে রেখে দিও। আমি ওকে স্টেশনে নিয়ে যাব। ’

কথাটা শোনার পর জনি খানিকটা হোঁচট খায়। শেষ বাচ্চাটাও চলে যাক সেটা সে চায় না। কিন্তু বাবার কথা তাকে শুনতেই হবে, তাই অল্প কিছুক্ষণের মাঝে বাচ্চাটিকে নিরাপদে বাক্সের ভেতর রাখা হয়, তার চারপাশে কিছুটা খড়ও দেয়া হয়, আর চিবানোর জন্য বড় একটা বিস্কুট। ছানাটি একটানা কাঁদে এবং বেরোবার চেষ্টা করতে থাকে। জনি দৌড়ে ওর কাছে যায় এবং ওর সঙ্গে কথা বলে।

‘এবার তোমার পালা। ভালো থেকো, সাহসী হও এবং নতুন মনিবের আদেশ মেনে চলবে, আর মনে রেখো তুমি চমৎকার একটি শিপ-ডগ। বিদায়, ছোট্ট সোনা!’

স্টেশনে যাবার পথে ফার্মের মালবাহী গাড়ির ভেতর থাকা বাক্সটা দুলতে থাকে। এক সময় সেটা একেবারে কিনারায় চলে আসে—এবং হঠাৎ বড় একটা ঝাঁকুনির কারণে বাক্সটা ছিটকে রাস্তার ওপর পড়ে। সেই মুহূর্তে কৃষক কেবল তার ঘোড়াগুলোর দিকে চেয়ে চিৎকার করে ওঠে, এবং এর কিছুই সে জানতে পারে না।

সেই ধাক্কায় ঝাঁকুনি দিয়ে ছানাটির শরীরের সবটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসার অবস্থা—আর এরপরই সে দেখতে পায় পড়ে গিয়ে বাক্সের একটা পাশ ভেঙ্গে গেছে। পলকে সে বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে এবং গুটি গুটি পায়ে হেঁটে হেঁটে বুদ্ধি খাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সে যাত্রায় সে পালিয়ে বাঁচে।

‘হুফ হুফ!’ দৌড়ে উঠানের ওপর আসার পর সে চিৎকার করে তার মাকে ডাকে এবং যেন জনিকে বলছে, ‘আমি ফিরে এসেছি! হুফ! জনি, আমি ফিরে এসেছি!’

‘অবাক কাণ্ড তো! তুমি বাক্স থেকে বের হলে কী করে দুষ্টু?’ আদর করে ছানাটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে জনি বলে, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে—না হয় কালকের ট্রেনেই যাবে। ’

বাক্সটা নিতে গিয়ে কৃষক খুবই অবাক হন এবং তিনি স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই ছানাটা ভাগে—কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় তিনি বাক্সটা ঠিকই খুঁজে পান, তাই কী ঘটেছে তিনি তা বুঝে নেন। পরদিন বাচ্চাটাকে আরেকটা বাক্সে তোলা হয়, এবং এবার তিনি নিরাপদেই স্টেশনে পৌঁছান। গার্ড এসে তাকেসহ বাক্সটা ট্রেনে তুলে দেয়, এবং তীব্র একটা শিস দিয়ে ট্রেনটা স্টেশন ছাড়ে।

কুকুর ছানাটা খুব ভয় পায়। ট্রেনের গম গম শব্দ তার অপছন্দ। ট্রেনের হুইসেলও সে ঘৃণা করে। গার্ড এসবের কিছুই জানতে পারে না। ট্রেনটা পরের স্টেশনে থামে, এবং গার্ড প্ল্যাটফর্মে নামার জন্য তার ভ্যান ছেড়ে বাইরে যায়। ছানাটা গলা উঁচু করে নাকী স্বরে কাঁদতে থাকে।

একটা ছোট্ট মেয়ে তার সেই কান্না শুনতে পায়। সে গার্ডের ভ্যানের ভেতরটা উঁকি দিয়ে দেখে। ‘ওই বাক্সের ভেতর জন্তুটার কী অবস্থা হয়েছে?’ সে ভাবে। ‘ও কি ব্যথা পাচ্ছে? আমি দেখব। ’

সে ঢাকনাটা তোলে—এবং দুটা নাড়া দিতেই হাঁসের লেজওয়ালা ছানাটা বেরিয়ে এসে, লাফিয়ে প্ল্যাটফর্মে নামে, দ্রুত গেটের বাইরে গিয়ে, গ্রামের ধুলোময় পথ ধরে ছুটতে থাকে! তার জানা ছিল না সে কোথায় আছে। কোথায় যাচ্ছে সেটাও জানত না—কিন্তু ভয়ানক সেই বাক্স থেকে বেরোতে পেরে এবং চিৎকার করতে থাকা ট্রেনটা ছেড়ে দূরে সরে আসতে পেরেই সে খুশি!

কিছুক্ষণ পর ও থামে এবং বাতাসে নাক বাড়িয়ে দেয়। শুঁকতে থাকে। বাড়ি যাবার সঠিক পথ কোনটি? মুহূর্তের জন্য দাঁড়ায় এবং তারপর বুঝতে পারে কোন পথে বাড়ি ফেরা যাবে। ওকে অবশ্যই কোণার দিকে ফিরতে হবে এবং মাঠের ওপর দিয়ে যেতে হবে। সে জানে না কেন তাকে এপথ ধরেই যেতে হবে। কেবল জানে বাড়ি ফেরার এটাই সঠিক পথ।

প্রায় আধঘণ্টা পর খুব ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত এবং পায়ে ফোস্কা পড়া একটা কুকুরছানা এসে খামারের গেট স্পর্শ করে। ফিরে আসতে পেরে কতই না ভালো হলো! এখানে কত মুরগী, পুকুরে কত হাঁস, আর আছে প্রিয় জনি! মুহূর্তের মধ্যে বাচ্চাটা দৌড়ে উঠানে গিয়ে আঁছড়ে পড়ে, এবং জনি চরম বিস্ময়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘কী!’ তুমি আবার ফিরে এসেছো! এবার তুমি কেমন করে পালালে? আমি জীবনে কখনো তোমার মতো কুকুরছানার কথা শুনিনি! বাবা! বাবা! শেষের ছানাটা আবারও ফিরে এসেছে। ’

কৃষক তার ছাউনি থেকে বেরিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ‘মনে হচ্ছে আমরা ওর কাছ থেকে মুক্তি পাব না!’ সে বলে। ‘ছোট্ট  হলেও ও কিন্তু সত্যিই সাহসী একটা কুকুর। ’

‘বাবা! আমি কি ওকে রাখতে পারি না!’ কাঁপতে থাকা ছানাটিকে কোলে তুলে নিয়ে, চিৎকার করে জনি বলে ওঠে। ‘আমি ওকে খুব ভালোবাসি, এবং ও নিশ্চয়ই আমার সত্যিকার বন্ধু হবে। প্রতিবারই ও ফিরে আসবে, আমরা ওকে যতবারই ফেলে আসি না কেন, যাই হোক, আমি নিশ্চিত ও ফিরে আসবে। ’

‘ভালো—পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেল ও এখানেই থাকতে চায়,’ কৃষক বলে। ‘ঠিক আছে—তুমি ওকে রাখতে পারো। আমি নিজেও ওকে পছন্দ করি—তবে দেখো তুমি কিন্তু ওকে ভালোমতো ভেড়া দেখাশোনার কাজটা শিখিয়ে নিও, কারণ ওকেও অন্য কুকুরদের মতো ভেড়া রাখার কাজটা শিখে নিতে হবে, জনি!’

‘ওহ, বাবা! ধন্যবাদ। ’ জনি প্রায় চিৎকার করে ওঠে, এবং মাকে কথাটা বলার জন্য ঘরের ভেতরে ঢোকে। সে ছানাটিকে নামিয়ে রাখে, সঙ্গে সঙ্গে আগের মতোই সেটা দৌড়াতে শুরু করে।

‘মা! দেখেছো, ছানাটা আবার ফিরে এসেছে—আর এবার কিন্তু ওকে আমি আমার কাছে রেখে দেব। ’ জনি চেঁচিয়ে বলে। ‘মা, তুমি জানো, আমি ওকে কী নামে ডাকব? আমি ওকে শ্যাডো বলে ডাকব—কারণ ও আমাকে আমার ছায়ার মতো অনুসরণ করে। আহ্, নিজের একটা কুকুর পেয়ে এখন আমি খুব সুখী, শ্যাডো! শ্যাডো! নামটা তোমার কতটা পছন্দ হলো?’

‘হুফ!’ শ্যাডো বলে। এবং গর্বের সঙ্গে লেজ নাড়ে। ওর এখন একটা নাম আছে, একজন প্রভু আছে। তার একটা বাড়ি আছে। এখন সে একটা উপযুক্ত কুকুর—তার লেজ আর গোঁফও আছে, সে এখন সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে পারবে তাকে কতটা আদর যত্নে রাখা হয়েছে।

পর্ব ৪ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।