ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

প্রেতাত্মার নিশ্বাস

এমরুল হোসাইন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
প্রেতাত্মার নিশ্বাস

হরের প্রাণকেন্দ্রে বসবাস। তবু ভূত ভূত খেলায় বেশ উৎসাহ নিশার।

রাতের আধারে ভূতের গল্পটাও বেশ জমে। বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে অকৃত্রিম তৃপ্তি পায়। ভাই-বোনদের মধ্যে ওই সবার বড়। কিন্তু ছেলেমানুষির বিবেচনায় সবার ছোটটিকেও হার মানায়।

অসুস্থ দাদুকে দেখতে বাবা-মা গিয়েছে গ্রামের বাড়িতে। হঠাৎ পাশের রুম থেকে গোঙানির আওয়াজ এলো। ভাবলো ছোট ভাইটি হয়তো দুষ্টামি করছে। একটু ঝিমুনি চলে এলো। গরম নিশ্বাসে জেগে উঠলো। আহ! চিৎকার দিয়ে উঠলো নিশা। চিৎকারে ছোট বোনটি জেগে গেলো। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। দ্রুত লাইট জ্বালালো, সারা রুমে কেউ নেই। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। নিশা কেমন যেন অনুভব করলো, তার পিছু পিছু ছায়ার মত কে যেন ঘুরছে।

ডানা ভাবলো আপু হয়তো দুষ্টামি করছে। আপু ঘুমিয়ে পড়োতো, অনেক রাত হয়েছে। আজ আর ভয় দেখাতে হবে না। এই বলে ডানা শুয়ে পড়লো। নারে সত্যি সত্যি কে যেন আমার পিছু পিছু হাঁটছে, বিশ্বাস কর। হয়েছে হয়েছে বিশ্বাস করেছি, অনেক ভয় পেয়েছি এবার খুশিতো? এবার ঘুমাও।

নিশা পাশের রুম থেকে আস্ত খাসির চামড়া ছিললে যেমন শোনায় ঠিক তেমনি আর্তনাদ ভেসে এলো। ভাইয়াও দিন দিন তোমার মতো হয়ে উঠছে। এই ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়তো, এই বলে ডানা চোখ বুজলো। বিদ্যুৎ নেই। হাতের কাছে কোনো মোববাতিও নেই।

মোবাইলের আলোয় নিশা ছুটে গেলো জিহানের রুমের দিকে। ততক্ষণে ওর শরীরের এক টুকরা মাংসও অবশিষ্ট নেই। শুধু রক্তাক্ত কঙ্কালটি বিছানায় পড়ে আছে। ডানা! ডানা! চিৎকার করেও কোনো লাভ হলো না। আপু! চিৎকার করে উঠলো ডানা। ছুটে গেলো নিশা। কিন্তু ততক্ষণে ঘাড় মটকে নিয়েছে, রক্ত শুষে খাচ্ছে নর পিশাচটি।

নিশা হাতে লাঠি নিয়ে ছুটে গেলো। মেয়ে হলেও নিশার শরীরে অশুরের শক্তি আর আজ তা কয়েকগুণ হয়ে গিয়েছে। ছোট দুই ভাই-বোনের এরূপ পরিণতিতে যেনো পাগল হয়ে গেছে। পিশাচটিও তেড়ে এলো। চললো ধ্বস্তাধ্বস্তি। কিন্তু অশরীরীটি নিশাকে কোনো আক্রমণ না করে শুধু আত্মরক্ষা করলো।

এভাবে কতক্ষণ চললো ঠিক জানা নেই। ফজরের আজান ভেসে এলো, পিশাচটি প্রচণ্ড শক্তিতে নিশাকে ছুড়ে ফেলে ভৌতিক হাসি দিয়ে আবার আসবো বলতে বলতে চলে গেলো। নিশা জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। যখন জ্ঞান ফিরলো ততক্ষণে পরের দিন সন্ধ্যা।

নিশা দ্রুত মোবাইল বের করলো। মাকে কল দিলো। মাকে খুলে বললো সব। মা বললো বেশ ভালো গল্প বানিয়েছিস তো? ওসব ফাজলামো রাখ। আমরা কাল ভোরের ট্রেনেই রওয়ানা দিচ্ছি। ডানা কি করছে? ওর কিন্তু এক্সাম! খেয়াল রাখিস। প্লিজ আম্মু আমাকে বিলিভ করো, আমি এতটুকুও মিথ্যা বলছি না।

আমরা কাল আসি তারপর দেখা যাবে। ঘাড়ে পিশাচের নিশ্বাস পড়লো! চিৎকার করে উঠলো নিশা। আর কোনো দুষ্টামি না, রাখছি বাই বলে মা লাইন কেটে দিলো। বাবার কাছে নালিশ করলো দিন দিন ওর ছেলেমানুষি বেড়েই চলেছে। ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, বাবা বললো।

দূর হয়ে যা! দূর হয়ে যা! না, যাবো না! পিশাচ বললো। কী চাস? আবার কেন এসেছিস? গত রাতে আমার ছোট দুই ভাই বোনকে শেষ করে দিয়েছিস, তাতেও মন ভরেনি? এবার আমাকে শেষ করতে এসেছিস? নে শেষ করে দে! কী জবাব দেবো আব্বু-আম্মুর কাছে। আমি তোমাকে মারবো না। তবে? তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ভূত ভূত খেলতে তোমার খুব ভালো লাগে। আমি তোমাকে সত্যিকারের ভূত বানিয়ে আমাদের দেশে নিয়ে যাবো।

না আমি কখনোই তোর সাথে যাবো না। দূর হয়ে যা নয়তো আমাকে শেষ করে দিয়ে যা। না ওকথা বলো না। চলো..। ছাড় বলছি! ছাড়! খবরদার আমার কাছে আসবি না। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। চলো...। হঠাৎ নিশাকে পিছন দিক থেকে কে যেন জাপটে ধরলো। চিৎকার করে উঠলো নিশা। ছাড় ওকে! না ছাড়বো না, জবাব দিলো পিশাচ গিন্নি। ছেড়ে দে আমি ওকে ভালোবাসি। পিশাচ আর মানুষে কখনো ভালোবাসা হয় না। আমাদের চাই ওদের রক্ত! পিশাচ গিন্নি জবাব দিলো।
না ওকে ছেড়ে দে।
আর যদি না দেই? তবে তোর রক্ত পান করে আজ রাতের পিপাসা মিটাবো।
তবুও আমি ছাড়বো না।
তবে রে!

শুরু হয়ে যায় ধ্বস্তাধস্তি। গিন্নির রক্ত দিয়ে পিশাচ রাতের পিপাসা মিটালো। নিশা ততক্ষণে মোমবাতি জ্বালিয়ে নেয়। নিভিয়ে ফেলো বলছি। না! দূর হয়ে যা! এবার নিশা ছুটছে পিশাচকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সমস্ত দরজা জানালা বন্ধ। নিশা আজ পিশাচটাকে পুড়িয়ে মারবে। হঠাৎ নিশার হাত চেপে ধরলো পিশাচটি। নিশা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না। চলছে ধ্বস্তাধ্বস্তি।

খাটের কাছে গিয়ে নিশা বিছানায় মোমবাতি ফেলে গিলো, অমনি আগুন লেগে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। কী করলে এ তুমি! এখন তুমি আমি দুজনকেই মরতে হবে। নিশা বিজয়োল্লাসে ফেটে পড়লো। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আজ ওর কোনো কষ্ট লাগছে না, উল্টো যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। আস্তে আস্তে সমস্ত ঘরে আগুনে ছড়িয়ে পড়লো, পিশাচটি আগুনে ঝলসে গিয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগলো। আর বাতাসে ভাসতে লাগলো নিশার বিজয়োল্লাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।