ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ফাঁদ ও নেংটি

আহমেদ রিয়াজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১১
ফাঁদ ও নেংটি

নেংটিটা ছুটছে। এর আগে কখনও এমন জোরে ছুটে বেড়ায়নি ও।

কারণ এর আগে কেউ এমনভাবে তাড়া করেনি ওকে। ও বেরিয়েছিল ময়লারাখার ঝুড়িটা একবার দেখে আসবে বলে। ওই ঝুড়ির ভেতর থেকে কেমন একটা গন্ধ এসে বার বার ওর নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল। এমন সুড়সুড়িতে চুপ করে বসে থাকা যায় না। ও ভাবতে লাগল কী থাকতে পারে? চট করে এক দৌঁড়ে ও বেরোল ঝুড়ির কাছে। তারপর বেয়ে বেয়ে উঠে ঝুপ করে পড়ল ঝুড়িতে। ঝুড়িতে পড়েই জিনিসটা পেল। ক্রিম মাখানো একটুকরো কেক। চকলেটের সুগন্ধও আছে। এবং খেতে শুরু করল ও। বেশ মজা! কেক এত মজার হতে পারে, ওর জানা ছিল না।

কেকটা শেষ করে ঝুড়ি থেকে বেরিয়ে এল নেংটি। এখন ও যাবে কাগজ কাটতে। একটা ঘরের ভিতর বিশাল কয়েকটা কাগজের স্তুপের খোঁজ পেয়েছে ও। ঘরটা সবসময় লাগানো থাকে। তবে দরজার নিচে যে ফাঁকা জায়গাটা আছে, তা দিয়ে ও অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারে। কাগজ না কাটলে খাবারটা হজম করা কঠিন হয়ে পড়বে। ঝুড়িতে আরো এক টুকরো কেক আছে। কাগজ কেটে আবার ও ঝুড়ির ভিতর ঢুকবে।

দরজার তলার ফাঁকা দিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকতেই হঠাৎ কী যেন একটা তাড়া করল ওকে। ও প্রথমে বুঝতে পারেনি জিনিসটা কী। এই ঘরে মিঁয়াও থাকার কথা নয়। যদি থাকত তবে মিঁয়াও-এর গায়ের গন্ধ পেত। আর মিঁয়াও মিঁয়াও ডাক তো শুনতেই পেত। তাহলে কী তাড়া করল ওকে? পিছন ফিরে দেখবে সে সময়টুকুও পাচ্ছে না। ছুটতে তো ছুটছেই। কাগজের এই তূপ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ওই তূপে যায়, ওই তূপ থেকে সেই তূপে লাফায়, ওর পিছন পিছন সেই কী যেন একটাও ছুটছে। ভাগ্যিস ক্রিম মাখানো কেক খেয়ে এসে ঢুকেছে এই ঘরে। নইলে এতক্ষণ দৌঁড়াতে পারত না।

ছুটতে ছুটতে একসময় ভীষণ হাঁপিয়ে ওঠল ও। পেটও মনে হয় খালি হয়ে গেছে। এবার ছুটতে ছুটতেই চট করে একবার পিছনে ফিরে তাকাল নেংটি, একটা ফাঁদ। মানে নেংটি ধরার কল। কিন্তু নেংটি ধরার কল তো কখনো নেংটি ধরতে পিছন পিছন ছোটে বলে শোনেনি ও। তাছাড়া এখন কেউ নেংটি ধরার কলের ফাঁদ পেতে রাখে না। এখন নেংটি ধরার জন্য লোভনীয় খাবার দিয়ে ফাঁদ পাতে। কী আজব আজম সেসব নাম-ওস্তাদ, বীর, সাবাস, সেনাপতি, বাহাদুর। আরো কত কী! নামগুলো শোনে আর হাসে নেংটিরা।

নেংটিদের সাথে কী বাহাদুরী। তাই বলে একটা ফাঁদ ছুটবে নেংটির পিছন পিছন? ও শুনেছে ওর পূর্বপুরুষদের সময় এমন সব বাহারি নামের নেংটির ধরার খাবার পাওয়া যেত না। তখন কলের ফাঁদ পেতে রাখা হত। নেংটিদের জাদুঘর থাকলে ওই জাদুঘরেই বিশেষ জায়গা করে নিত কলের ফাঁদগুলো। নাহ্! ফাঁদের অত্যাচার আর কত? মিঁয়াওদের অত্যাচারই নেংটিরা এখন সইতে চায় না। দুনিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। সব প্রাণী তাদের নিজেদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার। মানে মানুষরাই সোচ্চার হচ্ছে। কিন্তু নেংটিদের অধিকার নিয়ে কোনো মানুষ সোচ্চার হয়েছে কি না জানা নেই। মনে হয় হয়নি। দিন দিন নেংটিরা কমে যাচ্ছে, সে খবর কে রাখে? অথচ কোনো গবেষণা করার দরকার হলেই নেংটিদের মনে পড়ে আগে। এমনকি মহাকাশেও পাঠানো হয়েছে নেংটিদের। তবু কেন যে মানুষ নেংটিদের শত্রু ভাবে?

এক ঝলক কলের ফাঁদাটকে দেখে আবার ছুটতে শুরু করল নেংটি। হঠাৎ কী মনে করে ঘুরে দাঁড়াল। ঘুরে দাঁড়িয়েই বলল, থাম!

থাম শুনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল কলটা। সাথে সাথে থেমে গেল। নেংটি বলল, ওহ্! আর পারছি না। দৌড়ুনো অনেক কষ্ট।

কল বলল, এত দৌড়াতে বলেছে কে? চটপট আমার ফাঁদে এলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
নেংটি বলল, বললেই হলো। নেংটি আটকানো এত সহজ নয়।
কল বলল, সহজ নয় বলেই তো তোকে ধরার জন্য দৌড়ুচ্ছি।
নেংটি বলল, কী লাভ আমাকে ফাঁদে আটকিয়ে? তুই তো আর মিঁয়াও নস?

সত্যিই তো নেংটি ধরার কলটা মিঁয়াও নয়। নেংটি ধরে তো ওর কোনো লাভ নেই। না পাবে ও মিঁয়াও’র মতো আদর, না পাবে যত্ন। বলা যায় বড্ড অযত্নেই ও পড়েছিল ভাড়ার ঘরে। নেংটি ধরার খাবারের ফাঁদ দিয়ে কাজ হচ্ছে না বলে ওকে আবার ভাঁড়ার ঘর থেকে বের করা হয়েছে। নইলে কী বের করতো? দেখা যাবে নেংটি ধরার পর আবার সেই ভাঁড়ার ঘরেই গিয়ে থাকতে হচ্ছে। তার চেয়ে নেংটির পিছন পিছন ছুটে কাজ নেই। কী দরকার এত ছোটছুটির। বরং নেংটিকে তাড়া করতে গিয়ে কয়েকজায়গা ক্ষয়ে গেছে। ধরতে গেলে আরো কত অসুবিধা হয়, তার ঠিক নেই।

কাজেই নেংটিকে তাড়া করা বাদ দিয়ে এক জায়গায় চুপচাপ বসে রইল নেংটি ধরার কল। ওই যে চুপ করে বসল, আর নড়াচড়া করেনি। আজও করছে না। এই সুযোগে নেংটিরাও ইচ্ছে মতো এটা কাটছে, ওটা কাটছে। এখানে ছুটছে, ওখানে ঝাপ দিচ্ছে। আর মানুষ? বাহদুরী খাবারের লোভ দেখিয়ে ফাঁদ পেতে রাখে নেংটিদের জন্য। ভাগ্যিস নেংটিরা অতো সহজে ওসব ফাঁদে মুখ দেয় না। যদি দিত তাহলে...। তাহলে কী হতো সেটা নিয়ে আর ভেবে লাভ কোনো লাভ আছে?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।