ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

কিশোর গল্প (পর্ব-২)

ভৌতিক পাণ্ডুলিপি | শোয়েব হাসান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
ভৌতিক পাণ্ডুলিপি | শোয়েব হাসান

[পূর্ব প্রকাশের পর]

রাতে ঘুম ভাঙে কোনো কিছুর শব্দে। রুমে লাইট জ্বালানো নেই।

কিন্তু আবছা একটা আলোতে রুম আলোকিত হয়ে উঠেছে। অনিন্দ্য উঠে বসে খাটে। তার চেয়ারে একজন লোক বসে টেবিলে উপুড় হয়ে এক মনে কি যেন লিখে যাচ্ছে। অনিন্দ্য ভীত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে-
-কে? কে আপনি?
লোকটা অনিন্দ্যের দিকে ফিরে তাকায়। বিরক্ত হয়েছে কাজে বাঁধা পেয়ে। ভাব-সাবেই বলে দিচ্ছে তা।
-বলুন কে আপনি। আমার রুমে ঢুকলেন কীভাবে?
-আমি নরেন্দ্র রায়।
- নরেন্দ্র রায় তো আমি সেদিন যে বইটি কিনে এনেছি তার লেখকের নাম। আপনি কে?
- আমিই লেখক নরেন্দ্র রায়।
ভয় আর কৌতূহল একসাথেই পেয়ে বসে অনিন্দ্যকে। সে কি জেগে আছে না স্বপ্নে দেখছে এসব! শুনেছে হ্যালুসিনেশন হলে মানুষ আবল-তাবল সব জিনিস দেখে। তার মাথায় কি গণ্ডগোল দেখা দিচ্ছে নাকি ইদানীং।
- নরেন্দ্র রায় তো সেই কবেই মারা গেছে, আপনি নরেন্দ্র রায় হন কীভাবে?
- আমার আত্মা অমর।
- দেখুন আপনি যা তা বলবেন আর আমি বিশ্বাস করছি , সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি জানি আপনি আমার কল্পনার সৃষ্টি। আমার মস্তিষ্ক আপনাকে কল্পনা করে আমার সামনে দাঁড় করিয়েছে, হ্যালুসিনেশন এটা।
ঈষৎ বাঁকা হাসি নরেন্দ্র রায়ের মুখে
- আমি তোমার কল্পনা না অনিন্দ্য,
- তাহলে কি চান আমার ঘরে?
- আমি যখন বেচে ছিলাম, আমার লেখা কেউ বই আকারে বের করতে চায়নি। পড়েই দেখতো না কোনো প্রকাশক।
- আপনার এই বইটা তাহলে তো প্রকাশিত হয়েছে। কীভাবে?
- হ্যাঁ এটা প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু আমি মারা যাওয়ার পর। এক ভক্ত ছিলো। যে আমার লেখাগুলোর পাঠক ছিলো। পরে অনেক চেষ্টা তদবির করে একে ওকে ধরে বই প্রকাশ করতে সে সক্ষম হয়।
- ওহ
- তাই আমি মারা যাওয়ার পর এখন লিখি, প্রচুর লিখি।
- আপনি তো অশরীরী আত্মা, আপনি লেখেন কীভাবে।
- আমার সমস্যা হয় না লিখতে।
- আচ্ছা লেখেন বুঝলাম, কিন্তু প্রকাশ করেন কীভাবে আপনি সেই লেখা?
- এই যে এখন মাত্র একটা পাণ্ডলিপি প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু তুমি বাঁধা দিলে শেষ করতে পারলাম না।

নিজের শরীরে ভয়ের শিহরণ অনুভব করে অনিন্দ্য। গতকাল বিকেলের কথা মনে পড়ে তার।   রাস্তায় দেখা সেই ভয়ংকর লোকটার কথা। তার সাথে হুবহু মিল এই লোকটার। তার মানে গত এই কয়দিন যা যা ঘটেছে, নীলক্ষেত থেকে কিনে আনা  ‘প্রেত’ বইটার সাথে যোগসূত্র আছে। সব গণ্ডগোলের মূলে এই বইটা।

অনিন্দ্য বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালায়। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা উধাও। কোথাও তার টিকিটিও খুঁজে পাওয়া গেলো না। তার মানে এতক্ষণ সে যা দেখেছে সবই তার মনের কল্পনা। সে টেবিল থেকে প্রেত নামক বইটা নামায়। আগুনে একটু একটু করে পুড়ে ফেলে পুরো বই। মনে এক রকম শান্তি পায়।   এই বইটা সে শেষ করতে পারেনি পড়ে। একটু আফশোস থেকে গেলো। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টিকারী কিছু রাখাটাও ঠিক না।

বেশি ভূতের গল্প পড়ে বলে হয়তো তার এই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু ভূতের আর রহস্য গল্পগুলো অদ্ভুতভাবে টানে তাকে। বই কিনতে গেলেই হাতে ভূতের বই উঠে আসে তার। যাইহোক আপদ বিদায় হয়েছে এই বেশি। বিছানায় ওঠে সে। ঘুমাবে এখন সে। কিন্তু চোখের আড়ালে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র রায় তার সেই বাঁকা হাঁসিটা দিয়েছিলো। দেখতে পেলো না অনিন্দ্য...

চলবে...

*** কিশোর গল্প (পর্ব-১): ভৌতিক পাণ্ডুলিপি | শোয়েব হাসান

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।