ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

অদ্ভুত সানগ্লাস | ফজলে রাব্বী দ্বীন

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৬
অদ্ভুত সানগ্লাস | ফজলে রাব্বী দ্বীন

রবিন ক্লাস সিক্সে পড়ে। অন্য সব ছেলেদের মতো সেও খেলাধুলা, পড়ালেখা এমনকি ঘোরাঘুরি করতেও খুব ভালোবাসে।

একবার জন্মদিনে তার বিজ্ঞানী কাকুর কাছ থেকে একটা দামি সানগ্লাস গিফট পেলো। আনন্দে সেটা স্কুলের বন্ধুদের দেখানোর জন্য চোখে পরে চলে এলো স্কুলে।

সবার কাছ থেকে বেশ প্রশংসা পেলেও হঠাৎই কেমন যেন নিজেকে অন্য সবার চেয়ে আলাদাভাবে আবিষ্কার করলো রবিন। যেদিকেই সে তাকাচ্ছে সবকিছুই যেন শূন্যের মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ক্লাসরুমের ভিতরে বসে দেয়ালের ওপাশে কে কি করছে সবকিছুই সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। শীতের সকালেও তার কপাল দিয়ে অঝরে ঘাম ঝরা শুরু করলো। এসব কি হচ্ছে তার সাথে? কোনো কিছুই তার মাথায় আসছে না। ক্লাস টিচার রবিনকে অমনোযোগী দেখে ধমক দিয়ে দাঁড়াতে বললো, কি ব্যাপার রবিন, ক্লাসের ভিতর সেই কখন থেকে আমি বকবক করছি অথচ পড়ার দিকে খেয়াল না করে তুমি অন্য দিকে মনোযোগ দিচ্ছ, এমনটা তো আগে কখনও করনি?

-ইয়ে মানে..হয়েছে কি ম্যাডাম..ইয়ে..
আনমনা রবিনের ইয়ে ইয়ে বাণীতে ম্যাডামের তৃপ্ততা মিটলো না। দারুণভাবে ক্ষেপে গিয়ে বললেন, এতোক্ষণ কি পড়াচ্ছিলাম সেটা যদি আজ বলতে না পার তাহলে কপালে কিন্তু শনি আছে তোমার। কোনো অনুরোধেই কিন্তু কাজ হবে না।
ম্যাডামের কথায় রবিনের মুখে হতাশার ছাপ পড়লো। হঠাৎ তিন দেয়াল ভেদ করে অন্য এক ক্লাসরুমের ব্লাকবোর্ডে তাকিয়ে দেখে ম্যাডামের সব প্রশ্নের উত্তর সেখানে লেখা।

সম্ভবত কিছুক্ষণ আগেই ম্যাডাম সেখানে গিয়ে ক্লাস করিয়ে এসেছেন। ঝরঝর করে সব প্রশ্নের উত্তর বলে দিতেই ম্যাডাম একটু চমকে গেলেন ঠিকই কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না। ছাত্রছাত্রীরাও তাজ্জব হয়ে গেলো রবিনের বলা দেখে। স্কুলের ছুটির শেষে রবিন আজ সবার শেষে ক্লাসরুম থেকে একা একা বের হলো। মনে মনে তার অনেক প্রশ্ন। কি আছে এই সানগ্লাসটায়? যার জন্য সে অস্বাভাবিক জিনিসও স্বাভাবিকভাবে দেখতে পাচ্ছে!

চিন্তিত মনে হাসপাতালের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ হাসপাতালের পিছনে দোতলা একটা বাড়ির ভিতর চোখ পড়লো তার। ভালো করে তাকিয়ে দেখে দোতলায় একটা রুমের ভিতর অনেকগুলো ছেলেমেয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়ে আছে। চোখের সামনে এতগুলো কাঁটার বন, উঁচু উঁচু দেয়াল আর বেশ দূরের দৃশ্য হওয়া সত্ত্বেও কোনোটিই তার দেখার সমস্যায় আটকালো না। রবিন আরও কাছে গিয়ে দেখলো কতকগুলো গুণ্ডা প্রকৃতির লোক সেই রুমের ভিতর ঢুকে কি যেন যুক্তি পরামর্শ করছে। তারপর চিৎ হয়ে পড়ে থাকা ছেলেমেয়েদের এক জায়গায় করে রেখে দু’জন লোক মুখের ভিতর গোফ, দাড়ি লাগিয়ে চলে গেলো শহরের দিকে।

রবিনের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই লোকগুলো আসলে পাচারকারীর দল। ছেলেমেয়েদের পাচার করার জন্য চেষ্টা করছে তারা। রবিন আর এক মুহূর্ত দেরি না করে এক দৌড়ে চলে গেলো সদর থানায়। হাঁপাতে হাঁপাতে সমস্ত ঘটনাই যখন পুলিশকে জানিয়ে দিল সে তখন পুলিশের ফোর্স ঘটনাস্থলে জলদি ছুটে গেলো। তারপর বন্দি সব ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করলো তারা।

এদিকে পাচারকারীরাও পুলিশের হাতে যখন ধরা পড়ে গেলো তখন প্রশাসন দারুণ একটা খবর দেওয়ার জন্য রবিনকে পুরস্কৃত করলো। পুরস্কার পেয়ে রবিনের সুনাম চারদিকে বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। রবিনকে নিয়ে বাবা মায়ের গর্বের আর শেষ থাকলো না। এত সুনামের মধ্য দিয়েও রবিন তার অদ্ভুত সানগ্লাসটা নিয়ে সুখী হতে পারলো না বেশিদিন। লোভী মানুষদের কুনজরে পড়তে লাগলো বারবার। সবাই তার সানগ্লাসটা দেখতে চায়।

একদিন রাতে রবিন তার মামা বাড়ি থেকে ফেরার সময় পড়লো এক ডাকাতের পাল্লায়। অতি কষ্টে কোনমতে সেখান থেকে বেঁচে ফিরে তৎক্ষণাৎ সে ঠিক করলো তার অদ্ভুত সানগ্লাসটা আর নিজের কাছে রাখবে না। তার বিজ্ঞানী কাকুর কাছেই সেটা ফিরিয়ে দেবে। পরদিন সকালে করলো সেটাই। স্বাভাবিক শান্তি ফিরলো তার জীবনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।