ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাবার ভালোবাসা | শাহজাহান মোহাম্মদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
বাবার ভালোবাসা | শাহজাহান মোহাম্মদ

আলীর বাবা একজন সুন্দর মনের মানুষ। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে তার বাবা কম কম কথা বলেন।

বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরতে হয়েছে অনেক জায়গায়। বাবার অনেক গুণ যেমন- চা, পান, বিড়ি-সিগারেট কখনই খান না। এমনকি বাইরের কোনো খাবার খেতে দেখেনি আলী। নামাজ কালাম মসজিদে গিয়ে পড়েন সবসময়। এখনও বাইসাইকেল চালিয়ে বেড়ান। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কিছু ধানি জমি আছে তার। এখনও সেই সাইকেলটি নিয়ে চলাফেরা করেন।

আলীর ছোটচাচা নিজের হাতে তৈরি করে দিয়েছিলেন এ সাইকেলটি। চাচার রিকশার ব্যবসা ছিলো তার। সেই পার্স থেকে এই সাইকেলটা তৈরি করা। একদম হাঙ্গেরি মেইল লক্কড়ঝক্কড় ঠেলেও চলে না এমন সাইকেল।
তবে সাইকেল নিয়ে একটি ঘটনা আছে।

আলীর বাবার একটি এশিয়া বাইসাইকেল ছিল। তখন ৯ম শ্রেণির ছাত্র সে। প্রায় সময় আলীকে হাট-বাজার করতে হতো। এমনি একদিন বাজার ও ওষুধ আনার জন্য আলী সদর হাসপাতালে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নেবে। বাসা থেকে সদর হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৩ মাইল। আলী সাইকেল চালিয়ে হাসপাতালে আসে। কিন্তু সাইকেলটা কোথায় রাখবে? তালা ছিল না। কার কাছে বলে যাবে তার সাইকেলটা দেখার কথা।

এই চিন্তা করতে করতে আলী সাইকেলটা নিয়ে হাসপাতালের বারান্দার সামনে আসে। এদিক সেদিক তাকায়। এমন সময় দেখে হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন এক ভদ্রলোক। দেখে মনে হলো সাদাসিধে। পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। তিনি আলীকে দেখে বললেন, তোমার কি হয়েছে? আলী বললো, আমি ডাক্তার দেখিয়ে কিছু ওষুধ নেবো কিন্তু সাইকেলটা কার কাছে রেখে যাবো।

ভদ্রলোক বললেন, তোমার চিন্তা করতে হবে না, তুমি ডাক্তারের কাছে যাও। আমি তোমার সাইকেল দেখছি। সরল মনের আলী বিশ্বাস করে তার সাইকেলটা হেলান দিয়ে রাখে বারান্দার সিঁড়িতে। আর পিছন দিকে তাকাতে তাকাতে ডাক্তারের রুমে ঢুকে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে যখন আলী বের হয় তখন দেখে তার সাইকেলটা ঠিক জায়গায় আছে। ওই লোকটিও আছেন।
 
আবার আলী বললো, একটু দেখবেন, আমি ওপাশ থেকে ওষুধগুলো নিয়ে আসছি। ভদ্রলোকটি আলীকে বলে ঠিক আছে যাও বাবা, আমি দেখছি। আলীও তাড়াতাড়ি চলে গেলো। ওষুধ নিয়ে দ্রুত চলে এলো। কিন্তু একি?! বারান্দায় সেই ভদ্রলোক নেই! সিঁড়িতে ঠেক দিয়ে রাখা আলীর সাইকেলও নেই! এরপর যা হয় আলীর বুকটা যেন হা-ক্কাত করে ফাঁকা হয়ে গেলো। আর বলতে থাকে আমার সাইকেল! আমার সাইকেল! কে নিয়ে গেলো? একবার গেটের বাইরে আবার একবার ভিতরে যায়। আলী যাকেই দেখে, বলে ভাই এখানে যে একজন সাদা পাঞ্জাবি পরা লোক ছিল দেখেছেন কি কেউ? আমার সাইকেলটা এখানে ছিল।

কে শোনে কার কথা? কেউ বলতে পারে না। কারণ, সাইকেল নিয়ে সেতো নিজের মনে করে নিয়ে গেছে। অন্যরা কি করে বুঝবে যে, সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আলী অনেক ছোটাছুটি করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে তার। কাঁদতে থাকে। এবার বাড়িতে গিয়ে কি বলবে বাবাকে। এই ভয়ে আলী সারাদিন বাড়িতে যায়নি।

এদিকে বাড়ির সবাই চিন্তায় অস্থির। সকাল হয়ে দুপুর গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু আলী গেলো কোথায়? সাইকেল হারানোর ভয়ে সেদিন আলী কাঁচা বাজারও করেনি। বাজারের ব্যাগটা সাইকেলেই ঝুলানো ছিল। ভয়ে ভয়ে বেলা তিনটার দিকে বাসার দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে আলী। এমন সময় আলীর বড় বোন শুনতে পায় আলীর কান্না।
শুনেই দৌড় দিয়ে এসে বলে, কি হয়েছে তোর?
সেই সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথায় ছিলি?!
তোর সাইকেল কোথায়?!
কি কথা বলছিস না কেন?!
আলী আরও জোরে জোরে কাঁদতে থাকে।

বলে সাইকেল চুরি হয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে। এখন বাবাকে কি বলবো? এরপর বাড়ির সাবাই বের হয়ে আসে মা, ছোট বোন, ছোট ভাই সঙ্গে বাবা ও দাদি। এখন হয়তো  অবস্থা আরও খারাপ হবে। মনে মনে ভাবছে আলী। কিন্তু একি? বাবা বলে উঠলো চুরি হয়েছে তো কি হয়েছে। তাই কাঁদতে হবে। আবার একটা সাইকেল কিনে দেবো। চল এখন বাড়িতে। সেদিনের সেই বাবার সহজ সরল মন আর উদারতা আলীর জীবনে পাথেও হয়ে আছে। বর্তমানে বাবার মনটা শিশুর মতো। সন্তানের প্রতি সব বাবাই হতো এমনটি করে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।