ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভূতের ডিগবাজি

মাহমুদ মেনন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১১
ভূতের ডিগবাজি

মায়ের মুখে রাতে ভূতের গল্প শোনার ইচ্ছে ছিলো না রুশোর। কিন্তু মা যখন বললো এটি মামদো ভূতের ছানার গল্প তখন লোভ সামলাতে পারলো না... নইলে মাকে বললেই হতো মা ভূতের গল্প বলো না ভয় হয়।

তা না করে মামদো ভূতের ছানার গল্প শুনলো.. আর শুনতে শুনতে ঘুমিয়েও পড়লো রুশো।

কিন্তু বিপত্তি হলো যখন মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো প্রচণ্ড হিসুর চাপে।

বিছানায় শুয়ে শুয়েই রুশো ভাবলো... না রাতে গল্পটি না শুনলেই ভালো হতো এখন এই মধ্যরাতে কিভাবে যে কর্মটি সারা যায়। চোখ খুলতেই ভয় লাগছে। এভাবে পড়ে থাকলো মিনিট তিনেক। মনে মনে সাহস সঞ্চার করছিলো। মনে পড়লো রাতে মায়ের বুকে শুয়েই গল্প শুনছিলো... এখন বিছানায় সে একা। দিন কয়েক হয়েছে রুশোকে বিচ্ছিন্ন (!) করেছে বাবা-মা। রাতে মা তার সঙ্গে শোয় ঠিকই কিন্তু পরের দিকে মাকে আর পাওয়া যায় না। এর আগেও একরাতে রুশো বিষয়টি টের পেয়েছে কিন্তু তা ঘুমের ঘোরে। আজ পাকাপাকি জানা হয়ে গেলে রাতে রুশো এখন একাই ঘুমায়।

ভাবতে ভাবতে নিচের দিকের চাপটাও তীব্রতর হচ্ছিলো। এবার বিছানা না ছাড়লেই নয়। নইলে বিছানাতেই কম্ম-কাবার হয়ে যাবে। সেটা কম লজ্জার হবে না। ভোরে বড় আপা এ নিয়ে হাসাহাসি করবে, কাজের মেয়েটি নাক সিটকাবে। কারণ ধোওয়ার দায়িত্ব তারই হবে।

এক ঝটকায় উঠে বসে আবার হতোদ্যম হয়ে রইলো খানিকটা। এবার নামলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো বাথরুমের দরজার দিকে। অন্তত একটি কাজ মা ঠিক করেছে ভাবলো রুশো। টয়লেটের দরজাটি হালকা খুলে রেখে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। মধ্যরাতে দরজার ফাঁকা দিয়ে বেরিয়ে আসা এক চিলতে আলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভরসার মনে হলো রুশোর। দরজা ধাক্কা দিতেই আলোর ঝলাকানি চোখে লাগলো। এরপর জিপার খোলা কমোডে বসা ও কাজটি শুরু করার জন্য সর্বোচ্চ ৪ সেকেন্ড সময় নিলো সে। পুরোটা শেষ হতে একটু সময় লাগছিলো। সন্ধ্যা রাত থেকে জমে থাকা, সময়তো লাগবেই।

কাজটি যখন মাঝামাঝি তখন আলো চোখ সওয়া হয়ে গেছে। চোখ খুলে প্রথমেই দৃষ্টি টয়লেটের ভেন্টিলেটারে। ছোট্ট একটি শিশুর মতো দেখতে ছেলে দাঁতগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাসছে। রুশো তাকাতেই বললো... বাব্বা ঢের প্রশাব করলে দেখছি.. তাও ভালো বিছানা ভেজাওনি। রুশোর ততক্ষণে ভয়ে আত্মা দেহ ছাড়ে ভাব। সজোরে চিৎকার দিয়ে মাকে ডাকতে চেষ্টা করলো। কিন্তু যতজোরেই ডাকে কণ্ঠ থেকে স্বর আর বেরোয় না। ততক্ষণে ভেন্টিলেটার থেকে ঝুপ করে খালি বাথটাবটির মধ্যে পড়লো শিশুর মতো দেখতে ছেলেটি। বললো ভয় পেয়ো না... আমি মামদো ভূতের ছানা।
 
খেয়াল করে দেখলো এর একটি চোখ কানা। মনে পড়লো রাতে মা গল্পের মাঝেই ছড়া কেটেছিলেন... মামদো ভূতের ছানা... তার একটা চোখ কানা...

রাতে মায়ের দেওয়া মামদো ভূতের বর্ণনা অদ্ভূত মিল রয়েছে এই ভূতটির সঙ্গে। সেই গায়ে হালকা লোম। দেখতে শিশুদের মতো, নাকটা একটু চাপা।

মা বলছিলো ভূতদের নাক একটু চাপা থাকে আর তাই ভূতের কথা নাকি সুরের হয়। মামদো ভূতের ছানাটিও নাকি সুরে বলছিলো.. রুঁশোঁ.. ভঁয় পেঁওনা ভঁয় পেঁওনা... আঁমি তোঁমায় কিঁছু কঁরবো না।

নিজের নামটির অদ্ভূত উচ্চারণ শুনে হাসি পেলো রুশোর। সে ফিক করে হেসে দিলো.. শুনে ফিক করে হেসে উঠলো মামদো ভূতের ছানাটিও। সঙ্গে পটাপট গোটা তিনেক ডিগবাজি খেয়ে নিলো।

রুশো বললো এটা কি হলো? ভূত ছানা বলো খিঁদে পেঁয়েছে তোঁ তাঁই এঁকটুঁ খেঁয়ে নিলাম। ডিগবাজি খেলে তো ক্ষুধা আরও বাড়ে বোকা.. বললো রুশো। ভূত ছানা বললো না.. না.. ডিঁগবাঁজিও তোঁ এঁক ধঁরনের খাঁওয়া। খিঁদে পেঁলে আঁমি ডিঁগবাজি খাঁই।

আবার হেসে ফেললো রুশো। আর হঠাৎ করেই টের পেলো শো শো শব্দে আবারও প্রেশাব বের হচ্ছে। সম্বিত ফিরে পেলো বুঝলো ভয়েই মাঝপথে আটকে ছিলো। এবার ভয় কিছুটা কাটতেই বাকিটা হয়ে গেলো।

প্রেশাব শেষ করতেই ভূত ছানাটি বলে উঠলো... তুঁমি কিঁ এঁখনই ঘুঁমিয়ে পঁড়বে।

রুশো বললো কেনো? ভূত বললো না তোমার মাঁ আঁমার নামে গঁল্পে কঁত কিঁছু যেঁ বঁললো সেঁগুঁলো কঁতঁটা সঁত্যি তাঁ দেঁখঁবে না।  

রুশো বললো মাতো বলেছে এ ভূত শুধু গল্পেই থাকে সত্যিকারে কোনো ভূত নেই। আর তাছাড়া বাবাও বলেছে ভূত বলে কিছু নেই।

তাঁহলে আমি কে? এই যে দেখো আমি নাই হয়ে গেলাম... বলেই সে নাই হয়ে গেলো। আবার পরক্ষণেই এসে বললো.. এইযে দেখো আমি এসে পড়লাম।

এসেই আবার দুটো ডিগবাজি খেলো।

আরে তুমি আবার ডিগবাজি খেলে যে.. কাণ্ডটা কি? বললো রুশো। ভূতছানা বললো.. খিঁদে পেঁলে খাঁবো না বুঁঝি?

এখনই না খেলে এরমধ্যেই আবার ক্ষিদে। বললো রুশো।

ভূতছানা বললো... আমার একটু বেশিই ক্ষিদে পায়। রুশো বললো.. ও..

মা বলেছিলো ভূতেরা অন্ধকার খায়.. তুমিও খাও নাকি? ভূতছানা বললো না.. শহরের ভেজাল অন্ধকার খেতে ভালো লাগে না। রাতে নিকষ কালো আধার না হলে খেয়ে মজা নেই। লোডশেডিং হলে মাঝে মধ্যে পাওয়া যায়। তাও আজকাল কম হচ্ছে। আর তোমরা আবার জেনারেটর চালাও। ঝট করে বাতি জলে ওঠে। এসব চিন্তা করে নিজের বিকল্প খাবার হিসেবে ডিগবাজিই বেছে নিয়েছি।

ঠিক আছে তুমি ডিগবাজি খাও যত পারো.. আমি যাই ঘুমুতে।

না যেও না রুঁশোঁ.. তোমার সঙ্গে গল্প করে খুব মজা পাচ্ছি। আর তা ছাড়া বাথরুম ছেড়ে তুমি গেলে তুমি আর আমাকে দেখতে পাবে না। কারণ আজ আমার বাথরুমেই দর্শনরাত।

এইটা আবার কি জিনিস? হেসে বললো রুশো।

তুমি জানবে না, ভীষণ নিয়মনীতির মধ্যে বড় হতে হয়। নড়চড় হলে মায়ের সে কি শাস্তি? সবচেয়ে বড় শাস্তি খেতে দেবে না।

তোমার তাতে চিন্তা কি? তুমি তো ডিগবাজি দিয়েই খেয়ে নিতে পারো।

আরে তার কি জো থাকে... হাত পায়ে মা এমন কিছু করে দেয় যে তুমি হাঁটতে পাররে হাত নাড়াতে পারবে কিন্তু ডিগবাজি খেতে পারবে না।

তাহলে তোমার মাতো ভীষণ খারাপ? বললো রুশো।

চেচিয়ে উঠলো ভূত ছানা। বললো না... আমার মাকে খারাপ বলবে না। নিয়ম-কানুন তো সবাইকেই মানতে হয়। তা না হলে কী আর ভূতের মতো ভূত হয়ে গড়ে ওঠা যায়।

আবার হাসি পেলো রুশোর। মনে পড়লো সেদিন বাবা বলেছিলো, বাবা মায়ের কথা মতো চলো... মানুষের মতো মানুষ হও।

এভাবে নানা কথা চলতেই থাকলো ভূতছানার সঙ্গে।

হঠাৎ বললো এবার চলি। তোমার সঙ্গে খেলার সময় শেষ।

কেনো থাকোনা... বললো রুশো। ভূত ছানা বললো.. নারে বাবা ... তুমি কি আমার ডিগবাজি খাওয়া বন্ধ করতে চাও? বলেই গোটা তিনেক ডিগবাজি খেয়ে নিলো। লাফিয়ে উঠে গেলো ভেন্টিলেটারের কার্নিসে। কাঁচের ফাকা গলিয়ে বেরিয়ে গেলো মামদো ভূতের ছানা।

সকালে রুশোর যখন ঘুম ভাঙ্গলো দেখলো মা.. বড় আপু ও কাজের মেয়ে রাহিলা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। রুশোর বুঝতে বাকি থাকলো না... প্রশাব করে গোটা বিছানা ভিজিয়ে দেওয়াই সবার এভাবে মুখ টিপে হাসির কারণ।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।