ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সেলামীর ব্যাপার ছিল না

আহসান হাবীব<br>সম্পাদক, উন্মাদ ও শিশু সাহিত্যিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১১
সেলামীর ব্যাপার ছিল না

ছোট বেলায় ঈদ ছিল অন্যরকম। তখন সেলামীর ব্যাপার ছিল না।

নতুন কাপড় কেনার ততো উন্মাদনাও ছিল না। কিছুই ছিল না, তবে নির্ভেজাল আনন্দ ছিল। একটা নতুন শার্ট পেলেই খুশি। তবে ছোট বলে শার্ট, প্যান্ট, জুতো সবই পেতাম।

ঈদের দিন নামাজ পড়ে নতুন শার্ট পড়ে ছুটতাম বন্ধুদের নিয়ে বাসায় বাসায়, সেমাই পায়েস খেতে। এ যেনো এক ডিউটি প্রত্যেকের বাসায় গিয়ে সেমাই পায়েস খেতেই হবে। না খেলে ঈদের আনন্দই মাটি। যে বাসায় হয়তো ভুলে যেতাম না, সে বাসার অভিভাবকরা ধমক লাগাতো...
- কিরে আমার বাসায় তোরা এলি না? এক্ষণ চল
- ওহ ভুলে গেছি

আবার দল বেঁধে ছুট সেই বাসায়। তখন মেনে হয় পেটটাও ছিল রাবারের তৈরি।
যাই খেতাম ঢুকে যেত পেটে। সব এঁটে যেত দিব্যি ।

আমাদের সময় টিভি ছিল না। এখন যেমন শিশুদের খেয়াল থাকে, যতোই বাইরে বাইরে ঘুরি বাসায় গিয়ে টিভির সামনে বসতেই হবে। ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে হবে। ঈদের অর্ধেক আনন্দ যেন এখন টিভির বাক্সে বন্দি।

আমাদের সময় টিভি না থাকলেও আমরা নিজেরা নিজেরা অনুষ্ঠান করতাম। এটা করত আমাদের বড় ভাই-বোন আর তাদের বন্ধুরা। সে অনুষ্ঠানও এখনকার টিভির অনুষ্ঠানের চেয়ে কম আনন্দের ছিল না।

আরেকটা যেটা মজার ব্যাপার... এখনকার ঈদ কিন্তু টানা সপ্তাহ ধরে চলে। টিভির অনুষ্ঠান যেমন সাতদিন ধরে চলে ঈদও যেন টিভির অনুষ্ঠান ধরে ধরে সাত দিন চলে। কিন্তু আমাদের সময় ঈদের দিনই ঈদ শেষ। সব আনন্দ ওই ঈদের দিনেই যেন সীমাবদ্ধ। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই আনন্দ। রাতে ঘুমোতে যেতাম ঈদ শেষ হয়ে যাওয়ার একটা বেদনা নিয়ে।

আমাদের বাসায় খাওয়ার টেবিলের ওপর সবসময় একটা ডেক্স ক্যালেন্ডার থাকতো। ঈদের পরদিন আমার বড় বোন বড় বড় করে লিখে রাখতেন ‘আজ নিরানন্দ দিন...আজ ঈদের পরের দিন’।

তারপরও বলতে হয়, ঈদ সবসময়ই ঈদ। সবসময়ই আনন্দ হয়তো সময় প্রেক্ষাপটের কারণে তার আনন্দের ধরণ বদলে যায়। কিন্তু আনন্দের কোন কমতি নেই...! সবাইকে ঈদ মুবারক!!!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।