ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাঘমামা ঘাস খেলো (শেষ পর্ব) | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
বাঘমামা ঘাস খেলো (শেষ পর্ব) | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ বাঘমামা ঘাস খেলো

৫.
প্রজাপতি: প্রণাম হই রাজা মশাই!
বাঘ: অ্যাঁ, কে? আরে প্রজাপতি যে! কেমন আছো তুমি?
প্রজাপতি: জ্বি ভালো রাজা মশাই। কিন্তু আপনি এই দুপুর রোদের বেলা, ঝরনার পাশে চুপটি করে বসে আছেন যে?


বাঘ: না ইয়ে মানে- ঝরনার জল গড়িয়ে পড়া দেখতে বেশ লাগছে। ভারি সুন্দর দৃশ্য, তাই না প্রজাপতি?
প্রজাপতি: তা ঠিক, কিন্তু আপনি তো গরমে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

আমি আমার পাখা দিয়ে আপনাকে একটু বাতাস করে দেবো কি?
বাঘ: না না ধন্যবাদ। তা লাগবে না...
প্রজাপতি: সেকি! আপনি বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন যে? কারও আসবার কথা আছে কি?
বাঘ: হ্যাঁ, কয়েকটি মায়া হরিণ আসবে।
প্রজাপতি: ও বুঝতে পেরেছি। আমি তবে যাই। প্রণাম।
বাঘ: হ্যাঁ, ভালো থেকো।
**             **              **
শিয়াল: কার সাথে কথা বলছেন রাজা মশাই?
বাঘ: ও পণ্ডিতজ্বি, আপনার কথাই ভাবছিলাম। কোথায় আপনার হরিণ? সূর্য তো পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লো। আমি আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?
শিয়াল: দুঃসংবাদ আছে রাজা মশাই!
বাঘ: কী দুঃসংবাদ?
শিয়াল: গতকাল একটা হরিণ কুমিরের কাছে ধরা পড়েছে। সে কারণে হরিণরা এখানে পানি খেতে আসবে না বলে ঠিক করেছে।
বাঘ: ও আচ্ছা।
শিয়াল: এখানকার কুমিররা বড়ই ভয়ঙ্কর। যাকে তাকে কামড়ে দেয়।
বাঘ: তাহলে চলুন তবে কেটে পড়ি।

৬.
বাঘ: পণ্ডিতজ্বি, আপনি আমাকে এই ঘন জঙ্গলে নিয়ে এলেন কেন?
শিয়াল: এই পথে গেলে হরিণের দেখা পাওয়া যেতে পারে।
বাঘ: ও আচ্ছা। আপনি সত্যিই খুব ভালো।
শিয়াল: আমার খুব খারাপ লাগছে রাজা মশাই।
বাঘ: কেন?
শিয়াল: না ইয়ে মানে...আপনি রাজা হয়ে এখন পর্যন্ত মুখে কোনো দানাপানি দেননি অথচ আমি সাধারণ একজন পণ্ডিত হয়ে দুপুরে তিনটে বনমুরগি সাবাড় করে এলাম। সেকারণে বড়ই লজ্জা লাগছে।
বাঘ: ও কিছু না পণ্ডিতজ্বি। সবার দিন সব সময় একরকম যায় না।
শিয়াল: আপনার বোধহয় খুব ক্লান্তি লাগছে তাই না?
বাঘ: তা লাগছে বৈকি। একটু জিরিয়ে নেই, কেমন?
শিয়াল: অবশ্যই। আপনি এখানটাতে বসে পড়‍ুন।
বাঘ: এ বনের ঘাসগুলো বড়ই সুন্দর। মনে হচ্ছে, মাঠে সবুজ গালিচা পাতা। পাতাগুলো রেশমের মতো নরম।
শিয়াল: কথিত আছে, পূর্বকালে বনের সব পশুরাই এই ঘাস খেয়ে জীবন নির্বাহ করতো।
বাঘ: তাই নাকি?
শিয়াল: বহুদিন পর এই ঘাস দেখে আমারও খেতে বড় ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি একটু আগে উদরপূর্তি করে এলাম। না হলে এই ঘাস আমি অবশ্যই খেতাম।
বাঘ: তবে আমি খাই, কী বলুন পণ্ডিতজ্বি?
শিয়াল: অবশ্যই অবশ্যই। শুরু করুন। এই পাতাগুলো দারুণ। সূর্যের আলো পেয়ে অদ্ভুত এক রং ধারণ করেছে। এই নিন, প্রথমে এগুলো দিয়েই শুরু করুন।
বাঘ: বাহ! বেশ মজার ঘাস তো। কিন্তু...
শিয়াল: কোনো সমস্যা রাজা মশাই?
বাঘ: গলাটায় হালকা চুলকি করছে!
শিয়াল: খেতে অভ্যাস নেই তো সেজন্য চুলকি করছে। ও কিছু নয়। আপনি নিশ্চিন্তে খেয়ে যান।
বাঘ: কিন্তু চুলকি তো বেড়েই চলেছে! আপনি আমাকে কি খাওয়ালেন পণ্ডিতজ্বি?
শিয়াল: খুব কি বেড়ে যাচ্ছে চুলকি?
বাঘ: হ্যাঁ। শুধু গলা নয়। জিহ্বাতেও চুলকি করছে। সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
শিয়াল: তাহলে আপনি এখানেই থাকুন। আমি আপনার জন্য চুলকি নিরাময়ের ওষুধ নিয়ে আসছি।
বাঘ: বেশি দেরি করবেন না যেন! আমার অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ!
শিয়াল: জ্বি বুঝতে পেরেছি! আমি যাবো আর আসবো।

[কিন্তু শিয়াল পণ্ডিত আর আসেনি]

***বাঘমামা ঘাস খেলো (পর্ব-১) | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ
***
বাঘমামা ঘাস খেলো (পর্ব-২) | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ


ইচ্ছেঘুড়ি 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।