বললো কুলসুম। আফা তাইলে তুমি বাজানরে কও, আমিও তোমার সাথে স্কুলে যামু।
ছোট্ট হাতে ছাগলের খুঁটিটা তুলতে চেষ্টা করেও তুলতে পারছিল না ফুল মিয়া। দাঁড়া আমিও তোর সাথে হাত লাগাই। বলেই বইগুলোকে ঘাসের উপরে রেখে খুঁটিটাতে হাত লাগালো কুলসুম, হেইও বলে দু’জনে মিলে টান দিতেই খুঁটিটা সমেত দু’জনেই ঘাসের উপর চিৎ হয়ে পড়ে গেলো।
হাসতে হাসতে দু’জনেই কুটিকুটি। ল হইছে এইবার চল বাড়িতে যাই। জামার ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বললো কুলসুম। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দু’জনেই বাড়ির পথ ধরলো। কিছুটা এগোতেই দু’এক ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। এবার যতদূর সম্ভব বইগুলোক বুকের সাথে চেপে ধরলো কুলসুম। কারণ বইগুলোকে কোনো মতেই ভিজতে দেয়া চলবে না। দৌড়া ফুল। জোরেশোরে বৃষ্টি নামার আগেই ওরা বাড়িতে পৌঁছে গেলো।
কুলসুম ওর বাড়ির দিকে চলে যেতেই ছাগলগুলোকে বারান্দায় কোণায় বাঁশের খুটির সাথে বাঁধলো ফুল মিয়া। মা, মা জান কি হইছে? কি হইছে রে বাপ? জিজ্ঞেস করলো মা। মা আইজ না কুলসুম আফাগো স্কুলে কি সুন্দর একখান মীনা কার্টুনের বই দিছে। বই এর ভিতরে কি সুন্দর সুন্দর ছেলেমেয়েগো ছবি’!
‘তাই নাকি বাপ, বলল মা। ‘হ মা। আফায় কইছে আমি স্কুলে গেলেও এই রকম বই পামু। মা বাজানরে কইয়া আমারে স্কুলে ভর্তি করাইয়া দেওনা। এই চরের হক্কলেই ত স্কুলে যায়। আর আমিও তো এখন বড় হইয়া গেছি।
কুলসুম আফার লগে আমিও স্কুলে যাইতে পারমু। মা আমারে দাও না স্কুলে ভর্তি করাইয়া’। বেশ একটু কাঁদ কাঁদ গলায় বললো ফুল মিয়া। ‘স্কুলে যাইতে তো মেলা খরচ রে বাজান। আমরা গরিব মানুষ এতো টেকা পামু কই। ’ না মা, তুমি জান না। এইগুলা সরকারি স্কুল। এই স্কুলে যাইতে কোনো টেকা পয়সা খরচ হয় না। কুলসুম আফা আমারে কইছে। ’ একটানে কথাগুলো বলে গেলে ফুল মিয়া। ‘আইচ্ছা, তোর বাজান বাড়িতে আসুক, আমি হেরে বুঝাইয়া কমু নে। যা হাত পা ধুইয়া আয়। আমি তোর খাওন বাড়তাছি। ’ বলল মা।
চলবে....
**
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
এএ