ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাঘের ভয় | বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
বাঘের ভয় | বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী বাঘের ভয়

বাদার পাশে নদীর ধারে বাস করতো এক জেলে। সারাদিন ঝলমলে রোদে জেলের খুব ভালো লাগতো। কিন্তু রাত হলেই লাগতো ভীষণ ভয়। কারণ সেই বাদায় থাকতো এক মানুষখেকো বাঘ। বাঘটা জেলের দুটো ছেলেকে খেয়ে ফেলেছে। জেলের ঘরের পাশে একটা সুন্দরী গাছের গোড়ায় ছোট ছেলের মুণ্ডু পাওয়া গিয়েছিল। 

বাঘের ভয়ে আর ছেলে হারানোর দুঃখে জেলে যখন অন্য জায়গায় চলে যাবে ভাবছে, ঠিক তখন এক বানর এসে জেলেকে বলল , ' জেলে ভাই, আমিতো গাছে গাছে থাকি, যখন শয়তান বাঘটা আসবে, আমি গাছের ওপর থেকে তা দেখতে পাবো, আর সাথে সাথে শিস দিয়ে তোমাকে জানিয়ে দেবো, তখন তুমি গা ঢাকা দিও। ' বানরের কথা জেলের খুব ভালো লাগলো, সে বানরকে দুটো চকলেট খেতে দিয়ে বলল, ' আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু।

'

একরাতে হয়েছে কি, জেলে খেয়ে-দেয়ে দাঁত মেজে কেবল শুতে যাবে- এমন সময় বানরটা শিস দিয়ে জোরে বলে উঠলো, ' জেলে ভাই সাবধান, মানুষখেকো বাঘটা তোমার ঘরের দিকে আসছে। ' এ কথা শুনে জেলের খুব ভয় লাগলো। সে তাড়াতাড়ি ঘরের আলো নিভিয়ে দিলো।

বাঘের ভয়হঠাৎ চারিদিক থমথমে হয়ে গেলো। মাটিতে বাঘের পা ফেলার দুম দুম শব্দ হতে লাগলো। দূরে জঙ্গলে ক'টা পাখি চেঁচিয়ে উঠে শান্ত হয়ে গেলো। ঘরের অন্ধকারে জেলে আস্তে আস্তে পা ফেলে জানালার কাছে এসে জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরের দিকে দেখতে লাগলো। বাইরে তখন অল্প চাঁদের আলো। সে আলোতে জেলে দেখতে পেলো ইয়া বড় ডোরাকাটা এক বাঘ হেতাল গাছের ঝোপের পাশে দাঁড়িয়ে জেলের ঘরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, বাঘের চোখদুটো টর্চ লাইটের মতো জ্বলছে।  

বাঘটা কিছুক্ষণের মধ্যে দরজা ভেঙে জেলের ঘরে ঢুকবে আর ঘাড় মটকিয়ে জেলেকে খাবে। জেলে ভয়ে কাঁপছে। জেলে তখন করলো কি, আস্তে আস্তে ঘরের চালের কাছে বাঁশের আড়ার উপর উঠে গুঁটিসুটি মেরে বসে থাকলো, যেন ঘরে ঢুকে বাঘ তাকে না দেখতে পায়।

কিছুক্ষণ পর বাঘটা হালুম করে দরজা ভেঙে জেলের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো। ওরে বাপরে! কি বিশাল চেহারা, ধারালো দাঁতগুলো জেলেকে আস্ত চিবানোর জন্য অন্ধকারে চকচক করছে, আর একহাত লম্বা লোভা জিবটা লকলক করছে, হাত-পায়ের থাবা থেকে ছুরির মতো লম্বা লম্বা নখগুলো কিলবিল করে বেরিয়ে আসছে। বাঘ ঘরের চারিকোণায় জেলেকে খুঁজছে, যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকে চোখ থেকে টর্চের মতো আলো পড়ছে। আর জেলেটা উপরের দিকে বাঁশের আড়ার উপর ভয়ে বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আড়াটা শক্ত করে ধরে শুয়ে আছে। জেলে যে উপরে আছে বাঘ তা দেখতে পাচ্ছে না।

বাঘের ভয়বাঘটা জেলেকে না দেখতে পেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বিরাট জোরে ' হালুম হালুম' বলে গর্জন করে উঠলো। সেই বিশাল গর্জনে ঘরদোর কেঁপে উঠলো আর বাঁশের আড়াসহ ভেঙে জেলে বাঘের ঘাড়ের ওপর হুড়মুড় করে পড়ে গেলো। ঘাড়ের ওপর আচমকা কি পড়তে দেখে বাঘটা ঘাবড়িয়ে গেলো আর বলল, 'স্যার, আমাকে মারবেন না । '  একথা শুনে জেলে সাহস পেলো, সে তখন সেই বাঁশটা দিয়ে বাঘের পিঠে ঝুমাঝুম পেটাতে লাগলো। পেটানোর চোটে বাঘ চোখে মুখে অন্ধকার দেখলো। জেলে বাঘটিকে পিটিয়েই চলেছে, পিটিয়েই চলেছে। পিটুনি খেয়ে বাঘটা মাটিতে শুয়ে পড়লো। আর হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল , ' ওরে বাবারে, ওরে মারে, আমার ল্যাজে মারবেন না স্যার, আমার ল্যাজে ব্যথা। ' 

একথা শুনে জেলে মনে মনে বলল, ' দাঁড়া, ব্যাথা জায়গায় ব্যথা দিলে আরাম বুঝবি' বলেই লেজ ধরে দিল হ্যাঁচকা এক টান, আর মহাব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বাঘটা কেঁদে বলল ,' ওরে মারে! লেজ ছিঁড়ে গেলো রে!' কিন্তু কে শোনে কার কথা। জেলে তখন বাঁশ দিয়ে বাঘের লেজের ব্যথা জায়গায় দিল দশাসই এক বাড়ি। আর অমনি ব্যথায় বাঘের মুখে এমন টাস লেগে গেলো যে আধা ঘণ্টা পরে গিয়ে কান্নার শব্দ বেরুলো। হদ্দম মার খেয়ে বাঘ যে সেই ছুট দিলো, একেবারে সেই দেশ পার হয়ে অন্য দেশে গিয়ে তা থামলো। সেই থেকে আর কখনো বাঘটা এদিকে আসেনি।
ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।