ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

কাঠুরিয়া | সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
কাঠুরিয়া | সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ কাঠুরিয়া

এক কাঠুরিয়া গাছ কাটতে গেলো বনে। কিন্তু গাছ না কেটে মন খারাপ করে বসে থাকলো গাছের ছায়ায়। একটি মৌমাছি কাঠুরিয়াকে বললো, তুমি এভাবে বসে আছো কেন? কী হয়েছে তোমার?

কাঠুরিয়া বললো, আমি অতি গরিব মানুষ। এক আঙুল জমি নেই আমার।

এই বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে লাকড়ি করে বাজারে বিক্রি করে সাত মুখের সংসার চালাই। আজ গাছ কাটা শুরু করার আগে বনের গাছের দিকে ভালো করে তাকালাম। দেখলাম, কোনো গাছে ফুল ফুটেছে, কোনোটায় ফল ধরেছে, কোনোটায় পাখিরা বসে মনের সুখে গান করছে আর ওই গাছটার মোটা ডালে মৌমাছিরা মৌচাক বেঁধেছে। এসব দেখে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ভাবছি, কোন গাছটা কাটবো।

কাঠুরিয়ার কথা শুনে মৌমাছির খুব মায়া হলো, সে কাঠুরিয়াকে বলে, ইশ্ তোমার এত কষ্ট! জানো, কত হিংস্র প্রাণী আছে এ বনে? যে কোনো সময় তোমার বিপদ হতে পারে! ভয় পাওনা তুমি?’
কাঠুরিয়া বললো, ক্ষুধার চেয়ে বড় ভয় আর নেই।
 
দুই.
মৌমাছি বললো, তুমি আর গাছ কাটবে না, বুঝেছো? গাছ কাটলে কত বড় ক্ষতি হয় তা তুমি জানো? দেখ না, বন যে উজাড় হয়ে যাচ্ছে! আমরা মধুর চাক বাঁধবো কোথায়? পশু-পাখিরাই বা কোথায় থাকবে? আর তোমাদেরই বা কী অবস্থা হবে?’

কাঠুরিয়া বলে, বা…রে! আমরা তো আর তোমাদের মতো গাছে গাছে থাকি না। আমাদের আবার কী সমস্যা হবে?

মৌমাছি বলে, কী হবে মানে? মারা যাবে একদম, বুঝেছো বোকা কাঠুরিয়া। তুমি কি জানো, গাছ আমাদের কত বড় বন্ধু? এই গাছই তো জীবন বাঁচিয়ে রাখে সবার।

কাঠুরিয়া বললো, তুমি আমাকে এগুলো কী শোনাচ্ছ, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।

মৌমাছি বললো, শোনো, অক্সিজেন নামের এক গ্যাস আছে। এই গ্যাস ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। শ্বাস নেওয়ার সময় প্রতিবারই এই গ্যাস মানুষ গ্রহণ করে। আর এ অক্সিজেন কে দেয় জানো? দেয় এই গাছ। সব গাছ যদি রাগ করে অক্সিজেন দেওয়া বন্ধ করে দেয় তা হলে ধনী-গরিব বলে কোনো কথা নেই; সবাই মারা যাবে। এখন বুঝতে পারছ জীবন বাঁচানোর জন্য গাছের কত প্রয়োজন?

হাত থেকে কুঠারটা ফেলে দিয়ে কাঠুরিয়া রাগ দেখিয়ে বলে, তা বুঝলাম। তবে কীভাবে চলবে আমার এত বড় সংসার, না খেয়ে?

‘কেউ না খেয়ে মরবে না। সারাজীবন ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাকে একটা ভালো কাজ করতে হবে। ’

কাঠুরিয়া বললো, কী কাজ করতে হবে আমাকে?
প্রতিদিন তোমাকে দু’টি করে গাছের চারা এনে এ বনে লাগিয়ে দিতে হবে।

এতে কী লাভ হবে আমার শুনি! বললো কাঠুরিয়া।
এতে সবারই লাভ। তুমি বাঁচবে এবং আমরা সবাই বাঁচবো। তুমি আমার কথা রাখো, তারপরে দেখা যাবে কী করা যায়।
কাঠুরিয়া ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো বাড়ি।
 
তিন.
পরেরদিন কাঠুরিয়া দু’টি চারা এনে লাগিয়ে দিলো বনে। এতে বনের সবাই খুশি হয়ে গেলো। গাছেরা বলল, ধন্যবাদ কাঠুরিয়া বন্ধু তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

ভন্ ভন্ করে চলে এলো সেই মৌমাছিটি। সে কাঠুরিয়ার হাতে পাতার ঝুড়িতে এক কেজি মধু তুলে দিয়ে বললো, এই নাও তোমার পুরস্কার। প্রতিদিন তুমি এভাবে গাছ লাগিয়ে বন বাঁচাবে; আমরা মধু দিয়ে বাঁচাবো তোমাকে। আর এ সবুজ বন বাঁচাবে আমাদের সবাইকে। কাঠুরিয়া খুশিতে টগবগ করতে লাগলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।