ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

পাচার হচ্ছে গরিলা শিশুরা

ফজলুল বারী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১১
পাচার হচ্ছে গরিলা শিশুরা

আফ্রিকার জঙ্গল এলাকা থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে গরিলা শিশুরা! পাচারকারীদের কাছে এমন একটি গরিলা শিশুর দাম কমপক্ষে চল্লিশ হাজার ডলার! কিন্তু এই পাচারকে কেন্দ্র করে পাচারকারীরা মা গরিলাকেও হত্যা করছে। কারণ মাকে হত্যা ছাড়া শিশু গরিলাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া কঠিন।



সম্প্রতি কঙ্গোর জঙ্গল থেকে পাচারের সময় উদ্ধার করা এক গরিলা শিশুর কেস স্টাডি থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর কাহিনী! প্রানী বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের শুমারি অনুসারে এখন দুনিয়া জুড়ে পাহাড়ি গরিলা প্রজাতির মধ্যে এখন ৭৯০টির মত বেঁচে আছে। এর ৪৮০টি-ই আছে কঙ্গো, রুয়ান্ডা আর উগান্ডার গভীর জঙ্গল এলাকায়। বিশেষ করে ভিরুঙ্গা আগ্নেয়গিরির আশপাশের গভীর জঙ্গল এলাকাটি এদের পছন্দ। নিরাপদ বেঁচে থাকার খাবার, আশ্রয়ের জন্যে গুহা এলাকাটিতে যথেষ্ট আছে। কিন্তু পাচারকারিদের চোখ পড়াতে পছন্দের এলাকাটিতেও এরা এর নিরাপদে থাকতে পারছে না। বাচ্চার জন্য মারা পড়ছে মা আর পরিবারের বয়সী গরিলারা।
 
৬ অক্টোবর কঙ্গোর কিরুম্বা শহর থেকে বিশেষভাবে তৈরি পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় এক গরিলা শিশু উদ্ধার করা হয়। সবশেষ এই উদ্ধারকে কেন্দ্র করে বন্য প্রাণী প্রেমিক বিশারদদের মনে বিশেষ ভয় ঢুকেছে। কারণ গত এপ্রিলের পর থেকে এমন উদ্ধারের এটি চতুর্থ ঘটনা। ক্যামরুন, নাইজেরিয়া হয়ে শিশু গরিলাটিকে মিশরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

গত এপ্রিল থেকে এমন ঘটনা ধরা পড়া শুরু করলেও কারা এই পাচারের নেপথ্যে, এগুলোর ক্রেতাই বা কারা এসবের বিশদ কিছুই এখনও যায়নি। ইন্টারন্যাশনাল কনজারভেশন গ্রুপ এপে এলায়েন্সের চেয়ারম্যান ইয়ান রেডমন্ডের ধারণা মধ্যপ্রাচ্যে ধনকুবের অথবা রাশিয়ার ধনী সৌখিন ব্যক্তিরাই সম্ভবত এদের ক্রেতা। বাড়িতে পাখি, হরিণ পোষার মতো এমন একটি বিরল প্রজাতির প্রাণী শিশু ঘেরাটোপের ভিতর রেখে তারা আলাদা সংগ্রহ বৈশিষ্ট্যের অধিকারি আভিজাত্যের জন্যে এমন নিষিদ্ধ নেশায় আসক্ত হতে পারেন।

ধারণা করা হচ্ছে গরিলা পাচারকারীরা কঙ্গোর সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তৎপরতার সুযোগ নিচ্ছে। কারণ সবশেষ যে চারটি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, এর সবকটিই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত গভীর অরণ্য এলাকা থেকে পাচারকৃত। কিন্তু এই পাচারের সঙ্গে বিদ্রোহীরা জড়িত কী না সে রকম কোন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

বণ্য প্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলন এপে এ্যালায়েন্স মনে করছে কঙ্গোর আইনগত ত্রুটি, ফাঁকফোকরও দুর্লভ এরকম পাচার প্রতিরোধের বড় সমস্যা। কঙ্গো দেশটি দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ, সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর পরষ্পরের হানাহানি সামাল দিতে ব্যতিব্যস্ত। গরিলা শিশু সহ দেশটির বিরল বন্য প্রাণী সম্পদ রক্ষা নিয়ে ভাবাভাবির তাদের ফুরসত কোথায়।

এখন শিশু গরিলা পাচারকে কেন্দ্র করে মা ও পরিবারের সদস্য অন্য বয়সী গরিলা হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের ডিরেক্টর ইমানুয়েল ডি মোরডে। তাদের রেঞ্জাররা উদ্ধার সংগ্রহ করেছেন এমন বেশকিছু নিহত গরিলার দেহাবশেষ। সবশেষ উদ্ধারকৃত গরিলা শিশুটিকে সংস্থার শামাভু নামের এক বনরক্ষীর হেফাজতে রেখে পরিচর্যা করা হচ্ছে। সেখানে অন্যদের কাছে এই গরিলা শিশুটির নামও হয়ে গেছে শামাভু ।

ডিরেক্টর ইমানুয়েল বলেছেন, উদ্ধারের পর শামাভু’র অবস্থা বেশ নাজুক ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-শুশ্রুষা দেবার পর তার অবস্থা এখন বেশ ভাল। সবকিছুতে সাড়া দিচ্ছে বেশ। আরও কিছুদিন দেখেশুনে শামাভু’কে তার আবাস জঙ্গলেই ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। গার্ডিয়ান অবলম্বনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।