ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

শিয়াল যেভাবে রাজা হলো | সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮
শিয়াল যেভাবে রাজা হলো | সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ প্রতীকী ছবি

এক বনে ছিল এক শিয়াল। তার কেন জানি ইচ্ছা হলো সে রাজা হবে। তাই সে ভাবতে থাকে কীভাবে বনের রাজা হওয়া যায়।

শিয়ালের আছে এক বউ। সে বললো, বউ আমার রাজা হওয়ার খুব ইচ্ছে।

বলো তো আমি এই বনের রাজা হতে পারি কীভাবে।

শিয়ালনী বলে, ইশ্, রাজা হওয়া এতো সোজা না।  

শিয়াল বলে, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি এ বনের রাজা হয়ে গেছি। কিন্তু কীভাবে যে বনের রাজা হবো, সেটাইতো বুঝতে পারছি না। আচ্ছা শিয়ালনী তোমার না সাতছালা বুদ্ধি আছে? আমাকে একছালা বুদ্ধি ধার দাও। আমি কোনোমতে রাজা হয়ে যেতে পারলে পরে তোমার বুদ্ধি তোমাকে ফেরত দিয়ে দেবো। বুঝেছো?

শিয়ালনী তার কথা শুনে মুচকি হাসে। শিয়ালনী বলে, তুমি তো আমাকেই ঠিকমতো খাওয়াতে পারো না। তো বনের রাজা হলে পরে এতো এতো প্রজাদের তুমি চালাবে কীভাবে, হেহ্? 

শিয়াল বলে, একবার রাজা হয়ে গেলে পরে সেটা দেখা যাবে। এখন আমাকে রাজা হওয়ার বুদ্ধি দাও তুমি।
শিয়ালনী বলে, আচ্ছা তোমাকে বুদ্ধি দিয়ে রাজা বানালে পরে তুমি রাজ্যটা চালাতে পারবে কিনা সেটা আমার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তুমি রাজি?

শিয়াল বলে, দেখো, বনের রাজা হওয়ার জন্য আমি অনেক কিছুই করতে পারবো। বলো, কী করতে হবে আমার।  

শিয়ালনী বলে, ওই যে একটা গ্রাম দেখা যায়, ওই গ্রাম থেকে যদি তরতাজা হাঁস আর মুরগি এনে খাওয়াতে পার তবেই বুঝবো যে তুমি রাজা হতে পারবে।  

শিয়াল বলে, শিয়াল ওই গ্রামের দিকে তাকিয়ে বলে, দেখো, যা থাকবে কপালে। আমি আজই হাঁস আর মুরগি নিয়ে আসবো। আচ্ছা?

শিয়াল গেলো গ্রামে। গভীর রাত। সবাই আছে ঘুমিয়ে। চুপি চুপি মুরগির খোপের কাছে গেলো শিয়াল। সে অনেক কায়দা করে খোপের একটা ডালা ফাঁক করে ঢুকে পড়লো। একটা মুরগি খপ করে ধরে দিলো এক দৌড়। অমনি টের পেয়ে গেলো কয়েকটা কুকুর। তারা ঘেউ ঘেউ করে ছুটলো শিয়ালের পিছে। কুকুরের সঙ্গে আর পেরে উঠছে না শিয়াল।
 
কুকুরেরা কামড়ে ধরলো শিয়ালকে। শিয়াল বুদ্ধি করে বললো, দেখো, এভাবে কামড়াকামড়ি করে তোমাদেরও লাভ নেই, আমারও লাভ নেই। এরচেয়ে ভালো তোমাদের একটু মাংস দেই, তাই মজা করে খাও। এ কথা শুনে কুকুরের জিহ্বায় পানি এসে গেলো। কুকুর সুড়ুৎ করে পানি গিলে বলে, আচ্ছা তাই করো, দেও, দেও খাই। শিয়াল বললো, একটু না, পুরোটাই নেও। এই বলে শিয়াল পুরো মুরগিটাই দিয়ে দিলো কুকুরকে।  

কুকুরেরা খুশি হয়ে বলে, তুমি তো পাকা শিকারি। তুমি চুরি করবে আর আমাদের ভাগ দেবে। আমরা তোমাকে বাধা দেবো না। কুকুরেরা টানাটানি করে মুরগিটা খাচ্ছে। এই ফাঁকে শিয়াল চলে গেলো গৃহস্থের বাড়ি। সে এবার একটা মুরগি আর একটা হাঁস চুরি করে নিয়ে সোজা চলে গেলো বনে।  

শিয়ালনী তো মহাখুশি! শিয়ালনী সবকিছু শুনলো। সে বনের সব শিয়ালকে খাওয়ালো দাওয়াত করে। সবাই পেটভরে খেয়ে খুশি হয়ে গেলো।  

শিয়ালনী সবাইকে বললো, আমার স্বামী অনেক সাহসী আর বুদ্ধিমান। আজ তোমরা মজা করে যে তাজা হাঁস-মুরগির মাংস খেলে তা কোথা থেকে এলো আর কে এনেছে, কীভাবে এনেছে, জানো?
সবাই চোখ বড় করে বললো, না, আমরা এর কিছুই জানি না।

শিয়ালনী গর্ব করে শিয়ালকে দেখিয়ে বলে, এগুলো এনেছে আমার স্বামী এই শিয়াল। পাশের যে গ্রামে তোমরা পাগলা কুকুরের ভয়ে ঢুকতেই পারো না, সে সেই গ্রাম থেকে এনেছে এই হাঁস আর মুরগি। শুধু তাই নয়, এ বনে যখন খাদ্য সমস্যা দেখা দেয় তখন তোমাদের খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে এই সাহসী শিয়াল। বুঝেছো তোমরা? 

সবার মুখ তখন আনন্দে চিকচিক করে উঠলো। তারা বললো, আমরা এই সাহসী শিয়ালকে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই।

শিয়ালনী বলে, শুধু ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানালেই তো হবে না। এই সাহসী আর বুদ্ধিমান শিয়ালকে উপযুক্ত সম্মানও দিতে হবে। কি বলো তোমরা?

ওরা বললো, ঠিক বলেছ তুমি, সম্মানও দিতে হবে।  

শিয়ালনী বলে, এই সাহসী আর বুদ্ধিমান শিয়ালকে বানাতে পারি আমাদের রাজা। আর তার নাম শুধু শিয়ালই না। তার নাম হবে, ‘শিয়ালরাজা সুংসাং’। তিনি এ বনের সব শিয়ালের বিপদে কাজে লাগবেন। আর প্রয়োজনে ওই গ্রাম থেকে তাজা হাঁস-মুরগি এনে আমাদের মজা করে খাওয়াতেও পারবেন। কী বলো তোমরা?

সবাই রাজি হয়ে গেলো। তারা বলল, এখন থেকে আমরা তাকে রাজা মানলাম। আর এই রাজার নাম হবে, শিয়ালরাজা বাং বাং।  

শিয়ালেরা আনন্দে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। তারপর ‘আমার রাজা-তোমার রাজা, শিয়াল রাজা সুংসাং’ বলে স্লোগান দিতে দিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো যার যার বাসায়।

ichবাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।