দোকানের লোকেরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছিল। প্রথমে জ্যাক তাদের কথা ওতটা মন দিয়ে শোনেনি- কিন্তু হঠাৎ-ই সে এমন কিছু একটা শুনতে পায় যে তখনই কান খাঁড়া করে শুনতে বাধ্য হয়।
সে এসব কথা শুনতে পায়:
আসলেই, বাচ্চাগুলোর জন্য খুব মায়া হচ্ছে, ওদের আর খুঁজে পাওয়া গেলো না, একজন নারী বলে। শুনেছি, শোকে ওদের বাবা-মা একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
হতভাগ্য আর কাকে বলে. দ্বিতীয় নারী বলে। প্লেন নিয়ে জনমানবশূন্য পরিত্যক্ত একটা দ্বীপে গিয়ে পড়ার পর, দু’বছর তাদের কোনো খোঁজই পাওয়া যায়নি। আর তারপর বাচ্চাদের কাছে পাওয়ার জন্য নিরাপদে ফিরে এসে জানতে পারে ওরা সবাই পালিয়েছে!
জ্যাকের চোখ দু’টা বুঝি আরেকটু হলেই তার মাথা থেকে খসে পড়ছিল। এর মানে কী? এর মানে কি এমন হতে পারে হতে পারে, সম্ভবত মাইকের মা-বাবা আবারও ফিরে এসেছে? মুহূর্তেই সতর্ক থাকার সবকিছু ভুলে গিয়ে, জ্যাক প্রথম নারীর হাতটা আঁকড়ে ধরে।
দয়া করে আমাকে বলুন আপনারা যে তিনটে ছেলে-মেয়ের কথা বলছিলেন ওদের নাম কি মাইক, পেগি আর নোরা? এবং ওদেরই কি বাবা-মা ফিরে এসেছে?
দোকানের নারী অবাক হয়ে উত্তেজিত ছেলেটির দিকে তাকায়। হুম, নারীদের প্রথমজন বলে। এই নামের বাচ্চারাই। জুনে ওরা জ্যাক নামে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে গ্রাম থেকে ভেগে গেছে। তারপর থেকে ওদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর আগস্টে ওদের হারানো বাবা-মাকে পাওয়া যায় প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক দূরের একটা দ্বীপে। তাদের নিরাপদে এখানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অ্যারোপ্লেনটা পড়ে গিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, এবং একটা জাহাজ গিয়ে তুলে আনার আগপর্যন্ত তাদের সেখানেই থাকতে হয়।
কিন্তু তাদের বাচ্চারা আর ফিরে আসেনি। আলোচনায় যোগ দিয়ে দোকানি মেয়েটা বলে, এটা তাদের পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে তুলেছে, কারণ মাসের পর মাস ধরে তারা বাচ্চাদের জন্য দুশ্চিন্তা করছে এবং ওদের এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষায় করছেন।
এ ব্যাপারে তুমি কী জানো? হঠাৎ-ই একজন নারী বলে ওঠেন। তুমি তো সেই বাচ্চাদের একজন নও, তাই না? কিছু মনে করবেন না, জ্যাক বলে। আমাকে শুধু একটা কথা বলুন-সেই বাবা-মায়েরা এখন কোথায় আছেন?
তারা এখান থেকে খুব বেশি দূরে নন, দোকানি মেয়েটা বলে। বাচ্চাদের কথা জানতে পারবে এই আশায়, পাশের শহরেই একটা হোটেলে অবস্থান করছেন। কোন হোটেল? অধীর হয়ে জ্যাক বলে।
সোয়ান হোটেল, দোকানি মেয়েটা বলে এবং জ্যাক তখনই দ্রুত বেগে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলে নারীরা তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, ওর চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে, বাদামি চেহারায় টানটান উত্তেজনা!
সে দৌড়ে বাসস্টপে চলে আসে। বাসগুলো শহরে যায় এটা সে জানে। এবং তার মনে শুধু একটাই চিন্তা ঘুরঘুর করছে, কখন সোয়ান হোটেলে যাবে এবং মাইকের বাবা-মাকে খুলে বলবে তাদের ছেলে-মেয়েরা নিরাপদেই আছে! জীবনে আগে কখনই জ্যাক মনে মনে এতোটা উত্তেজনা অনুভব করেনি। এই কথা ভেবে যে সবকিছু ঠিকঠাক মতো ঘটবে কিনা, কারণ তাদের বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলার মতো কেবল একজনই, মানে জ্যাকই এখানে রয়েছে!
সে লাফিয়ে বাসে ওঠে এবং বাসে ওঠার পর চুপচাপ বসে থাকাও তারকাছে খুব কষ্টকর বলে মনে হতে থাকে। বাসটা শহরের ভেতর দিয়ে গুড় গুড় শব্দে পথ চলার সময় সে চটপট বাস থেকে নেমে সোয়ান হোটেলের দিকে ছুটতে শুরু করে। সে হলঘরের দিকে ছুটে যায় এবং সেখানে গিয়ে দারোয়ানকে ধরে।
ক্যাপটেন ও মিসেস আরনল্ড কোথায়? সে জোর গলায় বলে। মাইক প্রায়ই তাকে বলতো তার বাবা একজন ক্যাপটেন, আর বাচ্চাদের পদবি তো তার আগে থেকেই জানা-তাই কাকে কি নামে ডাকতে হবে সেটা সে খুব ভালো করেই জানে।
চলবে…
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
এএ