ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আমেরিকান রূপকথা অবলম্বনে

রংধনুর গল্প

ইচ্ছেঘুড়ি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২২
রংধনুর গল্প

পৃথিবীটা যখন একেবারে নতুন তখনকার কথা।  নানবোজোদের বাড়ির পাশে ছিল বিশাল এক ঝরনা।

আর ঝরনাটির কাছেই ছিল বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। ঘাস ও লতাপাতায় ছাওয়া সবুজ ওই তৃণভূমিতে অনেক ফুল ফুটতো। কিন্তু সবগুলো ফুলই ছিল ফ্যাকাসে সাদা রঙের। কারণ, তখন ফুলদের কোনো রংই ছিল না।

নানবোজো একদিন ঘরের জানালা দিয়ে তৃণভূমির দিকে তাকিয়ে ভাবলো, ইশ! ফুলগুলো যদি রঙিন হতো। যেই ভাবা সেই কাজ।
ঘর থেকে সব রঙের পাত্র আর তুলি নিয়ে সোজা তৃণভূমিতে চলে গেলো সে।
নানবোজো নরম লম্বা ঘাসের উপর বসে রঙের বাটিগুলো সাজিয়ে নিলো। প্রথমে রাখলো লাল, তারপর কমলা, তারপর হলুদ, সবুজ, নীল এবং বেগুনি। এবার ফুলগুলো রং করবার পালা।  
ছোট ছোট ভায়োলেট ফুলগুলোতে সে দিল গাঢ় নীল রং আর লিলিগুলোর গায়ে আঁকিয়ে দিল বাঘের চামড়ার মতো ডোরাকাটা দাগ। ড্যাফোডিলগুলো পেলো উজ্জ্বল হলদে রং। কিন্তু গোলাপগুলোকে সে তিনটি ভিন্ন রঙে রাঙায়। কোনোটা লাল, কোনোটা হাল্কা লাল, কোনোটা আবার ময়ূরের পেখমের মতো রক্তবেগুনি। দিনের ঝলমলে রোদে কাজ করতে করতে মনের সুখে গুনগুন করে গান ধরে নানবোজো।  
এসময় নানবোজোর মাথার উপরে খেলা করতে শুরু করে দু’টি নীলকণ্ঠ পাখি। প্রথম পাখিটা দ্বিতীয় পাখিটাকে ধাওয়া করে নিয়ে যায় তৃণভূমির শেষ প্রান্তে। দ্বিতীয় পাখিটা আবার প্রথম পাখিটাকে ধাওয়া করে নিয়ে আসে তৃণভূমির শুরুর মাথায়। পাখি দু’টির নাম জিপ আর জিং।  
কাজের ফাঁকে ফাঁকে সীমাহীন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ওদের খেলা দেখছিল নানবোজো। সে যখন ডেইজি ফুলগুলোতে হলদে রং মাখাচ্ছিল, জিপ আর জিং তখন নতুন আরেকটা খেলা শুরু করে। কে কত দ্রুত আকাশ থেকে মাটির সবুজ ঘাসের কাছে নেমে আসতে পারে।  
প্রথমে নামলো জিপ। ঘাসের কাছাকাছি নেমে ও যখন আবার উড়াল দিতে যাবে, তখনই ওর একটা ডানা ডুবে গেলো লাল রঙের বাটিতে। আর জিং যখন মাটির কাছে নেমে আসছিল ওর একটা ডানাও তলিয়ে গেলো কমলা রঙের বাটিতে।
 
ওহ! যা শুরু করেছো তোমরা, পাখি দু’টির উপর খুব বিরক্ত হয়ে বললো, নানবোজো।  
কিন্তু কে শোনে কার কথা। জিপ আর জিং তবু খেলতেই থাকলো। ওরা একবার নেমে আসে মাটিতে রঙের বাটিগুলোর কাছে, আবার সাঁই সাঁই করে উড়াল দিয়ে হারিয়ে যায় দূর আকাশে। এভাবে খেলতে খেলতে ওদের পা আর পালকগুলো একে একে সবক’টি রঙে ভরে গেলো।  
অবশেষে নানবোজো উঠে দাঁড়ালো। হিস্‌ হিস্‌ শব্দ করে হাত নাড়িয়ে পাখিদু’টিকে তাড়িয়ে দিলো সে।
নানবোজোর কাছ থেকে উড়ে চলে গেলো নীলকণ্ঠ পাখি দু’টি। এবার ওরা চলে গেলো নানবোজোদের বাড়ির পাশে ঝরনার কাছে। ওখানে গিয়ে আবার আগের মতো ধাওয়া-ধাওয়ি খেলায় মেতে উঠলো।  
ঝরনার আশপাশের হাওয়ায় তখন মেঘ আর কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছিল। প্রথমবার জিপ যখন তার সঙ্গী জিংকে কুয়াশার ভেতর দিয়ে ধাওয়া করলো, কুয়াশার গায়ে তখন লালরঙা একটি আঁকাবাঁকা দাগ বসে যায়।  
জিং আবার যখন জিপকে উল্টো দিকে ধাওয়া করলো, তখন সেও এঁকে দেয় কমলা রঙের একটি আঁকাবাঁকা দাগ। এভাবে খেলতে খেলতে সাতটি রঙের আঁকাবাঁকা ডোরা পড়ে রইলো মেঘ আর কুয়াশার গায়ে।  
ধীরে ধীরে রংগুলো আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। সূর্যের আলোয় রঙিন দাগগুলো জ্বলজ্বল করতে থাকল।  
ঝরনার দিকে তাকিয়ে ভারি আনন্দ হয় নানবোজোর। সাতটি রঙের উজ্জ্বল আভা যেন পুরো তৃণভূমিটায় ছড়িয়ে পড়ে। লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি ও আসমানি রং ধনুকের মতো আকাশের নিচে চক্‌মক্‌ করতে থাকে। দুষ্টু নীলকণ্ঠ পাখি দু'টির কথা ভেবে মনে মনে হাসে নানবোজো। সে বলে, তোমরা তো দেখছি আস্ত একটা রংধনুই বানিয়ে ফেলেছ! 
তারপর থেকে রংধনুটা ভাসতে থাকে আকাশের নিচে, সেই ঝরনাটির উপরে। সেদিন থেকে বৃষ্টির পর সূর্য যখন পূর্ণ আলো ছড়ায়, আকাশের কোলে হেসে ওঠে সুন্দর একটি রংধনু।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।