মৌলভীবাজার: অগণন খাদ্যপ্রিয় বাঙালির কেউ কেউ কিছুটা বিস্মিত হবেন এ শিরোনাম! কেননা, মাছ হিসেবে চিংড়ির ব্যাপক পরিচিতির মাঝে এই বিজ্ঞানভিত্তিক উক্তি অনেকাংশেই বিরক্তিকর।
বলতে দ্বিধা নেই, বাঙালির মাছের তালিকায় বেশ ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে চিংড়ি।
‘চিংড়ি মাছ’ ‘চিংড়ি মাছ’ শব্দটি বহুভাবে বহুবার উচ্চারণ করে করে অমেরুদণ্ডী প্রাণীকে মাছে রূপান্তরিত করার নিরন্তর প্রচেষ্ট চলছে। বিশেষ কোনো শব্দ-বাক্যের পুনরাবৃত্তি শীর্ষক উপস্থাপনে এ প্রাণীটি আজ মাছে উপনীত।
স্থানীয় মাছের বাজারে মাঝে মাঝে দেখা যায় ‘লোকাল চিংড়ি’। স্থানীয়রাই এমন ইংলিশ-বাংলা নামে এ প্রাণীটির পরিচিতি তুলে ধরেন।
মাছ ব্যবসায়ী উস্তার মিয়া বলেন, লোকাল চিংড়ি সব সময় পাওয়া যায় না। আর দামও বেশি। একদম ছোট সাইজের চিংড়ি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। একটু বড় সাইজের চিংড়ি ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।
সবাই বলে থাকেন – ‘চিংড়ি মাছ’। কেউ কখনোই বলেন না- চিংড়ি প্রাণী! তবে মৎস্য গবেষক এ ব্যাপারে উনার বিজ্ঞাননির্ভর মতামতে নিয়ত দ্বিধাহীন।
কথা প্রসঙ্গে ‘চিংড়ি প্রাণী’ শব্দটি পুনোচ্চারিত করে গুরুত্বের জানান দিলেন তিনি।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, চিংড়ি আর্থ্রোপোডা পর্বের এক ধরনের জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা নিচাশরভোজী এবং সর্বভুক শ্রেণীর হয়ে থাকে। হাওর, বিল অঞ্চলে প্রাপ্ত চিংড়িগুলো Palaemonidae গোত্রভুক্ত। চিংড়ি কিন্তু মাছ নয়, এক ধরনের জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী। কেউ কেউ আবার জলজ কীট বলে থাকেন। এদের পায়ের সংখ্যা ১০।
তিনি আরও বলেন, ছবিতে প্রদর্শিত এই চিংড়ির নাম গুড়া চিংড়ি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Macrobrachium lamarrei। এগুলো আমাদের মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বিল-হাওরে বা ডোবায় পাওয়া যায়।
চিংড়ি মাছ না হলেও আমাদের মৎস্য বিভাগের জাতীয় অর্থনীতিতে কিন্তু বাগদা ও গলদা চিংড়ি নামের দুটি প্রজাতির চিংড়ি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। এজন্য চিংড়িকে ‘বাংলাদেশের সাদা সোনা’ বলা হয়।
উপকারিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিংড়ি আমাদের হার্টের সুস্থতা রক্ষা করে, শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে, হাড়ের গঠনকে উন্নত করে, শরীরে ভিটামিন-১২ এর অভাবজনিত সমস্যা দূর করে, খনিজ উপদানের চাহিদা মেটায়, ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং চিংড়ি বিভিন্ন পুষ্টির উপাদান ভাণ্ডার।
চিংড়ির বৈশিষ্টসমূহ উল্লেক করে ফারাজুল বলেন, চিংড়ির দেহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত এবং উপঅঙ্গসমূহ সন্ধিযুক্ত। তাদের নরম দেহে কাইটিন সমৃদ্ধ শক্ত আবরণী দ্বারা বেষ্টিত থাকে। এদের মাথায় একজোড়া পুঞ্জাক্ষি অর্থাৎ গুচ্ছচোখ এবং অ্যান্টেনা অর্থাৎ সুক্ষ্ম অনুভূতিশীল অঙ্গ যুক্ত থাকে। এদের দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বর হিমোসিল নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের নদ-নদী, হাওর-বিল, মোহনাঞ্চল এবং সমুদ্রসীমায় মোট ৬২ প্রজাতির চিংড়ির রেকর্ড রয়েছে। এদের বেশিভাগ প্রজাতিরই অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। সামগ্রিক গণসচেতনতা, বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ এবং গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের এই মূল্যবান জলজ সম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব বলে জানান সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
বিবিবি/এএটি