ঢাকা: ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। আর এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে আইনজীবীকে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
ওই শিশুর ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রায় দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
শিশু ফাতেমার পরিবারের পক্ষে এক মাসের মধ্যে রিটকারী পক্ষের আইনজীবীকে এ আবেদন করতে বলেছেন আদালত। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের সে টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে প্রয়োজনীয় ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
গত বছরের ১৬ জুলাই ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতে ১৮ জুলাই আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। পরে ১৯ জুলাই ১৫ দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। রুলে ওই শিশুর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, আদালতের নির্দেশে গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রাস্টি বোর্ড পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিল। আর বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন সংস্থা থেকে অনুদানও আসে। সোনালী ব্যাংকে খোলা হিসাবে সে টাকা রাখা ছিল। সেখান থেকে পারিবারিক খরচ নির্বাহের পর এখন ওই ব্যাংক হিসাবে ১৩ লাখ ১১ হাজার টাকা আছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। এ টাকা দিয়েও সঞ্চয়পত্র কিনে প্রয়োজনীয় ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তিনি জানান, সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালার ১৪৯(ক) বিধিতে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকার কথা উল্লেখ আছে। দুর্ঘটনায় শিশু ফাতেমার মা-বাবা ও এক বোন মারা গেছে। তাই সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হবে।
আদালত বলে দিয়েছেন, এ বিধানটি ধরে যেন তাদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়।
শিশুটির আত্মীয় স্বজনরা জানান, গত বছরের ১৬ জুলাই বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা।
পরিকল্পনামতো ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ফিরছিলেন বাড়ির পথে। কিন্তু মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাকচাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।
তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসা। পরে রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত ছোটমণি নিবাসে শিশুটিকে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানেই বেড়ে উঠছে শিশু ফাতেমা আক্তার। তার ভাই মো. এবাদুল্লাহ (৮), বোন মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস, দাদা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও দাদী ত্রিশালে মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামে থাকেন।
আরও পড়ুন>>
>>> গর্ভ ফেটে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতকের বয়স আজ ৩ দিন
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
ইএস/আরআইএস