ঢাকা: মানিকগঞ্জ সদরের মো. রুবেল হত্যা মামলার ‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’র ঘটনা তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পুলিশ সুপারের নিচে নয়, এমন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে এ ঘটনা এবং মামলাটির পুনঃতদন্ত করতে বলা হয়েছে।
কেস ডকেটসহ মাসুদুর রহমান আদালতে হাজির হওয়ার পর সোমবার (০৩ এপ্রিল) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।
‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে ২ মার্চ প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা ৫ মার্চ ওই আবেদন করেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে ভাই–বোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নিপতি।
আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ আগামী ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সে অনুসারে তিনি তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত আদেশ দেন।
আদেশের পর শিশির মনির জানান, আদালতের সামনে মিথ্যা তথ্য ও ত্রুটিযুক্ত তদন্ত করার জন্য মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন তাকে সাসপেন্ড করার জন্য, যতদিন পর্যন্ত পরবর্তী আদেশ না দেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের নিচে নয়, এমন একজন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের মামলাটি পুনঃতদন্ত করতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুনঃতদন্ত করে উচ্চ আদালতে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। পরবর্তী আদেশের জন্য ৫ জুন তারিখ রাখা হয়েছে।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মরদেহ রাত দেড়টায় উদ্ধারের পর সুরতহাল করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। এরপর মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, সাক্ষ্য গ্রহণসহ একে একে অন্তত ৯টি ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ মাত্র ২২ ঘণ্টায়। পরবর্তী ২০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়সহ তদন্তের সব প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অর্থাৎ মরদেহ উদ্ধার থেকে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পুলিশের সময় লেগেছে মাত্র ৪২ ঘণ্টা। একটি খুনের মামলার তদন্তে এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই দিনের কম সময়ে খুনের মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনায় অনেকে প্রশংসা করলেও প্রশ্ন তুলেছেন আইন ও তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে রকেটের চেয়েও দ্রুতগতিতে। এটা ব্যতিক্রমী ও আশ্চর্যজনক ঘটনা। পুলিশের এমন তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন মো. রুবেল (২২)। পরদিন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেল নামের একজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে রুবেল খুন হন। ৪০ মিনিট পর সোহেল ওরফে নুরনবী (৩০) নামের এক তরুণ থানায় গিয়ে নিজে রুবেলকে খুন করেছেন বলে দাবি করেন। পুলিশ সোহেলকে নিয়ে সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। সেখান থেকে একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তখন দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
আরও বলা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেয় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য সংগ্রহ, ঘটনাস্থলের মানচিত্র তৈরি করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রুবেলের স্ত্রী চম্পা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। বিকেলে সোহেল জবানবন্দি দিলে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২৩/আপডেট: ১৬১৭
ইএস/এমজেএফ