কিশোরগঞ্জ: ‘তোর বোনের ফাঁসি হইছে, খুশি থাকিস’। আদালতে রায় শেষে বের হয়ে মোবাইল ফোনে ছেলেকে এভাবেই বলছিলেন ফাঁসির আদেশ হওয়া নারীর বাবা।
তিন বছর আগে মোবাইল হেডফোনের তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নিজের ১০ বছর বয়সী মেয়েকে খুন করেন আছমা আক্তার (৩৬) নামে এক নারী।
রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন এ হত্যা মামলার রায় দেন বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ।
মেয়ের ফাঁসির রায় শুনে আদালতের বারান্দায় লুটিয়ে পড়েন আছমার মা মনোয়ারা বেগম। এমন পরিস্থিতিতে আছমার বাবা মো. সুরুজ মিয়া তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে আদালতের বারান্দার একটি বেঞ্চে বসান এবং সান্ত্বনা দিতে থাকেন।
পাশপাশি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে রায়ের সংবাদ জানাচ্ছিলেন সুরুজ মিয়া। এসময় তিনি তার ছেলেকে ফোন করে
বলছিলেন, ‘তোর বোনের ফাঁসি হইছে। খুশি থাকিস। সবাইকে জানিয়ে দিস। ’
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নিজের পছন্দে নাটোরের আশরাফ উদ্দীনকে বিয়ে করেন আছমা আক্তার। বিয়ের দুই বছর পর তাদের জীবনে আসে কন্যাশিশু শিউলি আক্তার। ২০১৩ সালে রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান আছমার স্বামী আশরাফ। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন আছমা।
পরে ২০১৭ সালে গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার আব্দুল কাদের নামে একজনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। একপর্যায়ে সাংসারিক বিষয় নিয়ে কাদের ও আছমার মধ্যে মনোমালিন্য হয়। যে কারণে শ্বশুরবাড়িতে আসা বন্ধ করে দেন কাদের। তবে স্বামী কাদেরের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল আছমার।
২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আছমা তার ১০ বছরের মেয়ে শিউলিকে স্কুল থেকে ডেকে এনে ইঁদুর মারার ট্যাবলেট খাওয়ান। এ ঘটনা দেখতে পেয়ে মা মনোয়ারা বেগম নিজের মেয়ে আছমাকে বাঁধা দেন। কিন্তু মনোয়ারাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মোবাইলের হেডফোনের তার পেঁচিয়ে মেয়ে শিউলিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আছমা।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই নিহত শিউলির নানা সুরুজ মিয়া বাদী হয়ে মেয়ে আছমা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। বিচারকার্য তিন বছর চলার পর আছমাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিচারক।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
এসএএইচ