ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জাতীয় সংসদকে হাইকোর্টের দেওয়া পরামর্শ স্থগিত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
জাতীয় সংসদকে হাইকোর্টের দেওয়া পরামর্শ স্থগিত

ঢাকা: দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের এক রায়ে জাতীয় সংসদকে দেওয়া পরামর্শ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি দিয়ে) করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।

২০০৭ সালের জুন মাসে একটি কারখানায় গ্যাস মিটার সংযোগে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় তৎকালীন তিতাস গ্যাসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সরকার ও টেকনিশিয়ান আবদুর রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর জেল-জরিমানার রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে উভয়কে ৫ বছর করে কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তারা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। পৃথক আপিল মঞ্জুর করে তাদের দণ্ডাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।  

২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেওয়া ওই রায়ের ৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদকে ১৬টি পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।

পরামর্শগুলো হলো- দুদকের জন্য একটি স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস গঠন করা, অধস্তন আদালতের বিচারক নিয়োগের মতো কর্মকর্তা নিয়োগ, কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীন নিয়োগ বোর্ড গঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদানের সময় সম্পদের বিবরণ দাখিল করা। প্রতিবছর বাধ্যতামূলকভাবে সম্পত্তির হিসাব জনসমক্ষে বা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্য থেকে দুদকের চেয়ারম্যান এবং হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে থেকে দুদকের সদস্য নির্বাচন করা।

সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের জন্য দুদকের পৃথক প্রসিকিউশন প্যানেল গঠন করা। প্রতি তিন বছর পরপর প্যানেল পুনর্গঠন করা। প্রসিকিউশন প্যানেলে আইনজীবী মনোনয়নের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বোর্ড গঠন করা। প্রসিকিউশন প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত আইনজীবীদের জন্য যুগোপযোগী সম্মানীসহ অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা করা।

তদন্তে সত্যতা না পেলে দুর্নীতির অভিযোগকারীকে ৩০ দিনের মধ্যে অবহিত করা, মামলা নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষ জজ নিয়োগ করা, বিশেষ জজ আদালতকে পুনর্গঠন করে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল নামকরণ করা।

দুর্নীতির অভিযোগ, মামলা, তদন্ত অনুসন্ধান ও ফলাফল মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাষিক ও বাৎসরিকভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করা ইত্যাদি।  

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, জাতীয় সংসদ পরামর্শগুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব-দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

রায়ে আরও বলা হয়, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) এর আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা যদি দুর্নীতিমুক্ত হন, তাহলে বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। সুতরাং বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের আওতাভুক্ত ব্যক্তিগণকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের আওতাভুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি দুর্নীতিমুক্ত হলে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য।

রায়ে দুদক সম্পর্কে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন শত শত হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় না করে পাঁচ হাজার/দশ হাজার টাকার অতি নগণ্য সাধারণ দুর্নীতির পেছনে জনগণের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছে প্রতীয়মান।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে ই-মেইলে পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে (সুপ্রিম কোর্টের) নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি অবগতি, পর্যালোচনার জন্য এ রায় ও আদেশের অনুলিপি জাতীয় সংসদের সব সংসদ সদস্যকে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া অবগতি-পর্যালোচনার জন্য এ রায় ও আদেশের অনুলিপি অধস্তন আদালতের সব বিচারককে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতেও রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়।  

এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক পৃথক লিভ টু আপিল করে।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এ মামলা দুদক না করে র‌্যাব করেছে। এ ফাঁদ মামলা পরিচালনা করার এখতিয়ার দুদকের। সুতরাং আইনগতভাবে এটা সিদ্ধ হয়নি মর্মে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ। এ মর্মে হাইকোর্ট দুজনকে খালাস দিয়েছেন। রায়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সংসদকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে এসেছে। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, হাইকোর্ট এ রকম পর্যবেক্ষণ সংসদকে দিতে পারেন কিনা, সেই কারণে পর্যবেক্ষণ স্থগিত করেছেন। একজনের খালাসের রায় বহাল রেখেছেন। তবে অপরজনের বিষয়ে দুদককে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন।

শনিবার (১৩ জুলাই) দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, হাইকোর্ট দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে দুদক পৃথক লিভ টু আপিল করেছিলো। বৃহস্পতিবার লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে একজনের (কামরুজ্জামানের) খালাসের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আর আরেকজনের (এম এ রহিম) বিষয়ে দুদককে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ে সংসদকে দেওয়া পরামর্শ এ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।         

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।