ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যে কারণে তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
যে কারণে তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত সব আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন। কি কারণে সব আসামি খালাস পেয়েছেন সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।

রোববার (১ ডিসেম্বর) আদালত রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ২০০৮ সালে এই মামলার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ১৬ বছর আমি এটির সঙ্গে আছি। আজকে হাইকোর্টে মামলাটি নিষ্পত্তি হলো। আমরা আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। সাক্ষ্য এবং আইন, কোনো দিক থেকেই বিচারিক আদালতে মামলা প্রমাণিত হয়নি।

আদালত তার রায়ে বলেছেন, শুধুমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিদের সাজা দেওয়া যায় না। একই সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে ষড়যন্ত্র প্রমাণ করা যায় না।

আইনজীবী শাহজাহান বলেন, মুফতি হান্নানের প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে প্রথম চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও জবানবন্দির বাইরে আর কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় চার্জশিটে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, কাজী কায়কোবাদসহ অন্যান্য যাদের আনা হয়েছিল তাদের বিষয়েও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া আর কোনো এভিডেন্স নাই।

এই দুই জবানবন্দিই মুফতি হান্নান জীবদ্দশায় প্রত্যাহার করে গেছেন। ফলে প্রত্যাহার করা জবানবন্দি ও পরবর্তীতে যদি আর কোনো এভিডেন্স না থাকে, তাহলে সাজা দেওয়া যায় না। যে আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকলে তাকেও সাজা দেওয়া যেত না।

দ্বিতীয় চার্জশিট নিয়ে আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, যেটা রয়েছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সাধারণত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি নতুন কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়, তাহলে তিনি নতুন চার্জশিট দিতে পারে। তবে এখানে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন করে তদন্তে পাঠানো হয়। এই তদন্তের দ্বিতীয় চার্জশিট আসার পর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট এটা আমালে নেননি। এটা সরাসরি ১৯৩ ধারায় বিচারিক আদালত আমলে নিয়েছেন।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, দ্বিতীয় একটি চার্জশিট এসেছে। তবে আমরা এটা আমলে নিতে পারছি না। কারণ, এই মামলায় সেকেন্ড চার্জশিটের ক্ষেত্রে ১৯১বি প্রযোজ্য হয়নি। ফলে দ্বিতীয় চার্জশিট হাইলি ইলিগ্যাল। এটা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয় চার্জশিটও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটা শুধুমাত্র মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছিল।

এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আরও বলেন, ২২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট বাদে একজনও বলেননি, গ্রেনেড মারতে দেখেছি বলেছে। এমন কোনো সাক্ষ্য নেই। অথবা কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এমন কেউ বলেনি, যে আমি গ্রেনেড মেরেছি, বা আমি গ্রেনেড মারতে দেখেছি। ফলে এখানে ৩০২ ধারা কার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে? প্রকৃত খুনি কে, সেটা স্পষ্ট করা নেই।

অপরাধের গুরুত্ব বা নৃশংসতা যতই হোক না কেন, আসামিকে যদি একটি মামলায় আনতে হয়, তার সংশ্লিষ্টতা কতটুকু সেটা দেখতে হবে। ২১ আগস্টে এই ঘটনাটা হয়েছে, এই ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এই মামলার তদন্ত হয়ে যে অভিযোগপত্র এলো গত ১৬ বছর যে ট্রায়াল আমরা দেখলাম, তাতে হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস করে দিয়েছেন। আদালত রায়ে তারেক রহমান, কাজী কায়কোবাদসহ যারা আপিল করেননি এমন আসামিদেরও খালাস করে দিয়েছেন। আমারা কোর্টের কাছের কৃতজ্ঞ। আমাদের মফস্বল কোর্টে একটা কথা আছে নথি শুদ্ধ খালাস। আজকে আমাদের ডিফেন্স টিমের কাছে সবচেয়ে আনন্দ লাগছে, ১৬ বছরের পরিশ্রম সফল হয়েছে। মামলাটি নথি শুদ্ধ খালাস হয়েছে।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যে ট্রায়াল (বিচার) করা হয়েছিল, সেটি ছিল অবৈধ। কারণ, আইনের ভিত্তিতে সেই ট্রায়াল হয়নি। একইসঙ্গে আদালত বলেছেন, কোনো সাক্ষীর সঙ্গে কোনো সাক্ষীর কোনো কোলাবরেশন নেই। শোনা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সেজন্য সকলের আপিল নিয়ে ডেথ রেফারেন্স রিজেক্ট করে সবাইকেই বেকুসুর খালাস দিয়েছেন। তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সবাইকে বেকুসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

আদালত কোনো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এই বলে, এ ধরনের মামলায় পরস্পর কেউ দেখেছেন, কেউ স্বচক্ষে দেখেছেন, এই মর্মে কোনো এভিডেন্স নেই। যাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে, তাদের টর্চার করে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে মুফতি হান্নান দুটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম, ৪০০ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বিতীয় জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়ার নজির নেই। আজ আদালত বললেন, দ্বিতীয় জবানবন্দি তিনি যেটি করেছিলেন, সেটিও পরে তিনি প্রত্যাহার করেন। এজন্য এ জবানবন্দির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।