অভাব, শংকা ও অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির যে চেষ্টা তা থেকে মানব সভ্যতার শুরু। এসবের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের সৃষ্টি যা ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই সম্পর্কই কালক্রমে মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে পারস্পরিক দাবি ও দায়িত্ব। একজন দাবি উত্থাপন করছে এবং আরেকজন তা পূরণ করছে। পারস্পরিক এ দাবি ও দায়িত্বের সংমিশ্রনেই তৈরি হয়েছে অধিকার।
অধিকারের ধারণা অতি প্রাচীন এবং এটা অনেক আগে থেকেই কোনো না কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত। রাষ্ট্র চিন্তার উদ্ভব হলে সময়ের সাথে সাথে ক্ষুদ্র পরিসরের স্বীকৃতি দানকারী ব্যক্তি বা পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র হয়ে ওঠে অধিকারের স্বীকৃতিদাতা।
কল্যাণমুলক প্রতিটি রাষ্ট্রের কর্তব্যই হচ্ছে তার জনগণের অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করা আর কোনো ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হলে আইনানুযায়ী প্রতিকার পাওয়া তার অধিকার।
রাষ্ট্রে বসবাসরত কোনো ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হলে সেই ব্যক্তি দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রতিকার লাভের অধিকারী। প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘনের উপযুক্ত প্রতিকার পাওয়ার এই সাধারণ ধারণাটিই বিচার পাওয়ার অধিকার।
বিচার পাওয়ার অধিকার বলতে বোঝায় সমতা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় কোনো কাঠামোর পরিচালনা এবং যে কাঠামোর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যাক্তির আইনের দৃষ্টিতে সমান ও নিরপেক্ষ আচরণের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাওয়া। এটাকে যদি অন্যভাবে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দাঁড়ায় আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আর এগুলোর বাস্তব প্রয়োগ ঘটে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইন ও নীতিমালায়।
রাষ্ট্রীয় এই ব্যবস্থাপনায় সকল নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং সকলে যেন এসব অধিকার বাধাহীনভাবে ভোগ করতে পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
১৯৭০ এর দশকে Italian Jurist Mauro Cappelletti একটি রিসার্চে বলেন, কার্যকর Access to Justice এর উদ্ভব হয় নতুন নতুন সামাজিক অধিকারের সাথে। কার্যকর বা ফলপ্রসূ Access to Justice দেখা যায় মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে, মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে যা আইনগত অধিকার নিশ্চিত করে।
১৯৪৮ সালের Universal Declaration of Human Rights (UDHR)-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, সকল মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং কোনো বৈষম্য ব্যতিরেকে প্রত্যেকেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। উক্ত ঘোষণায় আরো বলা হয়েছে, কাউকে খেয়াল খুশিমত গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না এবং নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য শুনানীর মাধ্যমে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির থাকবে।
এই ঘোষণায় আরো বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দোষ ব্যক্তির ন্যায় আচরণ পাওয়ার অধিকারী হবে।
এছাড়া নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দলিলে বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী অভিযোগ উত্থাপিত হলে আদালতে বা ট্রাইবুনালে বিচার পাওয়ার জন্য সকল মানুষ সমানভাবে বিবেচিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর উপস্থিতিতে বিচার পাওয়ার অধিকারী এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সকলের থাকবে।
উক্ত চুক্তিতে ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য বিনামূল্যে আইনী সহাযতা দানের কথাও বলা আছে।
Commonwealth of Independent States Conventions on Human Rights and Fundamental Freedoms ১৯৯৫ অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক মানুষ সমান এবং প্রত্যেকেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে ন্যায় প্রতিকার পাওয়ার অধিকারী। এর অর্থ এই যে, আন্তর্জাতিক আইনে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য আইনগত সহায়তা প্রদানের বিষয়টি স্বীকৃত এবং এসব বিধান বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। এছাড়া, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ দ্বারা সকল নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে প্রত্যেকেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। অনুচ্ছেদ ৩১ উক্ত বিধানকে আরো শক্তিশালী করেছে এবং ৩৩ অনুচ্ছেদ ফৌজদারী বিষয়ে জনগণের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে।
অতএব, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বাংলাদেশ সংবিধান সর্বোত্তমভাবে প্রত্যেক জনগণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে।
দেওয়ানী ও ফৌজদারী কার্যবিধি:
ন্যায় বিচার প্রাপ্তির এই ধারণা থেকে দেওয়ানী কার্যবিধিতে আইনী সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সন্নিবেশিত হয় ১৯০৮ সালেই। আদেশ-৩৩ এ নিঃস্ব ব্যক্তির মামলায় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
একই ভাবে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩৪০ (১) এ কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্র বা পুলিশ বা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক সহযোগিতা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০
সংবিধানে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা, যেখানে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। তাই ন্যায় বিচার প্রাপ্তি অর্জনের উপায় বা মাধ্যম হিসেবে আর্বিভূত হয় লিগ্যাল এইড এর ধারণা। লিগ্যাল এইড প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনের সমতা ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা।
এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে The Legal Aid Act ২০০০ সংসদে পাশ হয় এবং ২৮ এপ্রিল ২০০০ থেকে কার্যকর করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০০১ ও ২০১১ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি অনেকটা নিশ্চিত করা সম্ভব। আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
এই আইনের ২ নং ধারা অনুযায়ী আইনগত সহায়তা বলতে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচার প্রার্থীকে আইনগত পরামর্শ প্রদান, আইনজীবীর ফিস প্রদান ও মামলার খরচ প্রদানসহ অন্য যে কোন সহায়তা প্রদান বুঝাবে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা প্রতিষ্ঠাঃ
সরকার এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। সংস্থার প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকবে এবং সরকারের অনুমোদনক্রমে যে কোন স্থানে শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে।
জাতীয় পরিচালনা বোর্ড
জাতীয় পরিচালনা বোর্ড নিম্নলিখিত সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে-
ক) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে নিয়োজিত মন্ত্রী,
খ) জাতীয় সংসদের স্পীকার কর্তৃক মনোনীত সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় ২ জন সংসদ সদস্য,
গ) বাংলাদেশের এ্যার্টনী জেনারেল,
ঘ) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব,
ঙ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব,
চ) সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব,
ছ) মহা পুলিশ পরিদর্শক,
জ) মহা কারা পরিদর্শক,
ঝ) বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান,
ঞ) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি,
ট) জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান,
ঠ) সরকার কর্তৃক মনোনীত আইন ও মানবাধিকার সম্পর্কিত বেসরকারী সংস্থার তিনজন প্রতিনিধি এবং
ঢ) পরিচালক, যিনি সদস্য সচিব হবেন।
সংস্থার দায়িত্ব ও কার্যাবলী:
ক) আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচার
প্রার্থীগণের আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা নিরুপন ও উহা প্রদান সম্পর্কিত বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন
করা। খ) আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে স্কীম প্রণয়ন করা। গ) শিক্ষা ও গবেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও
পরিচালনা করা। ঘ) জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা। ঙ) জেলা কমিটি
কর্তৃক প্রত্যাখাত আবেদন বা দরখাস্ত বিবেচনা করা। চ) জেলা কমিটির কার্যাবলী তদারক ও নিয়ন্ত্রণ এবং
সরেজমিনে পরিদর্শন করা। ছ) আইনী তথ্য সম্বলিত ক্ষুদ্র পুস্তিকা ইত্যাদি প্রকাশ, সেমিনার ও কর্মশালার
মাধ্যমে আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।
জেলা কমিটি:
প্রত্যেক জেলায় সংস্থার একটি জেলা কমিটি থাকবে নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবেঃ
-জেলা ও দায়রা জজ (এই কমিটির চেয়ারম্যান)
- জেলা পুলিশ সুপারিনডেন্ট
-জেলার সমাজ কল্যাণ বিষয়ক কর্মকর্তা
-জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কমিটির চেয়ারম্যান
-জেলার সরকারী উকিল
-জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর
-জেলার বেসরকারী সেচ্ছাসেবী সংস্থার একজন প্রতিনিধি ক্স জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট
-জেলার জেল সুপারিনটেনডেন্ট
-জেলার মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা
- জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি
-জেলার বেসরকারী কারখানা পরিদর্শক
-জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক
-জেলার মেট্ট্রোপলিটন শহরের চীফ মেট্ট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট
জেলা কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলী:
ক) সংস্থা কর্তৃক নিরুপিত যোগ্যতা ও প্রনীত নীতিমালা অনুসারে আর্থিকভাবে অসচ্ছল,সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচার প্রাথীগণের আবেদন বা দরখাস্ত বিবেচনাক্রমে যতদুর সম্ভব আইনগত সহায়তা প্রদান করা।
খ) মজুরকৃত আবেদন বা দরখাস্তের ক্ষেত্রে আবেদন বা দরখাস্তকারীকে প্রদত্ত আইনগত সহায়তার ধরণ ও শর্ত নির্ধারণ করা।
গ) আইনগত সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করা। ঘ) জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।
ঙ) বোর্ড কর্তৃক অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা।
উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি:
সংস্থা সরকারের অনুমোদনক্রমে উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে পারবে। উপজেলা কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটি একজন চেয়ারম্যান ও চৌদ্দজন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে।
আইনজীবীগণের তালিকা:
বোর্ড বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে দায়েরযোগ্য বা দায়েরকৃত মামলার পরামর্শ প্রদান ও মামলা পরিচালনার জন্য সুপ্রীমকোর্টের মামলা পরিচালনায় ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবীদের মধ্য থেকে একটি তালিকা প্রণয়ন করবে। প্রত্যেক জেলা কমিটি জেলার আদালতে মামলা পরিচালনায় ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবীদের মধ্য থেকে একটি তালিকা প্রণয়ন করবে। প্রত্যেক তালিকায় একজন মহিলা আইনজীবী রাখা হবে। কোনো বিচার প্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হলে বোর্ড বা জেলা কমিটির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত কোনো আইনজীবীকে নিযুক্ত করবে।
আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন:
সকল আবেদন বোর্ড বা জেলা কমিটির নিকট পেশ করতে হবে।
জেলা কমিটি কর্তৃক কোনো আবেদন অগ্রাহ্য হলে সংক্ষুদ্ধ বিচারপ্রার্থী সেটি মঞ্জুরীর জন্য ঐ সিদ্ধান্তের তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বোর্ডের নিকট আপীল পেশ করবেন। এইক্ষেত্রে বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
দলিলপত্র কাগজাদি ও ইত্যাদির কপি সরবরাহ:
আদালত কোর্ট ফি ছাড়া আইনগত সহায়তার সাথে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচার প্রার্থীর মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট কাগজাদি, দলিলপত্র, ইত্যাদির কপি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। আইনগত সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত আইনজীবী সংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনার জন্য আবেদনকারীর নিকট থেকে কোন ফিস্ বা খরচ দাবী করতে পারবে না।
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা
প্রবিধানমালায় যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- এই আনুযায়ী আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা, আইনগত সহায়তার জন্য আবেদনের নিয়ম, কোথায় আবেদন করতে হবে, আবেদন প্রাপ্তির পর করণীয়, আইনজীবী মনোনয়ন, আইনজীবীর করণীয়, মোকদ্দমার বিভিন্ন স্তরে আইনজীবীর প্রাপ্য ফিস্ এর হার, জেলা কমিটি কর্তৃক প্রচার-প্রচারণার ব্যয় নির্বাহ ইত্যাদি।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করা, দরিদ্র মানুষকে আইনী সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা, জনগণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে বেশ কিছু NGO নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), BLAST, BNWLA, মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন, ব্র্যাক প্রভৃতি এনজিও জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখছে।
কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসাবে সকল নাগরিকের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ, উপলব্ধি করতে পেরেছে ন্যায় বিচার পাওয়া কারো দয়ার উপর নির্ভরশীলতা নয়-ব্যাক্তির অধিকার এবং রাষ্ট্রকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যেতে হবে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী, পুরুষ, ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে জনগণ যদি আইন আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে না পারে তাহলে সেক্ষেত্রে আইনের শাসন অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর তাই জনগণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনগত সহায়তা কার্যক্রম জোড়ালো করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক লিগ্যাল সার্ভিস কোর্ডিনেটর, পিএইচআর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪