ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আলবদর আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ০১ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর ) চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ও রেজিয়া সুলতানা চমন। অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ।
গত ১৮ মে একই মামলার ওই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। আসামি দু’জনই পলাতক।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে একাত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক ইউনিয়ন রাজাকার কমান্ডার সে সময়কার মুসলিম লীগ নেতা মো. লিয়াকত আলী ও অষ্টগ্রাম থানার আলবদর কমান্ডার রজব আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুটপাটের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা দু’জনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাশাপাশি তিন থানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এসব অপরাধ সংঘটিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে লাখাইয়ের কৃষ্ণপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফান্দাউকে নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগ।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওইদিনই এ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউশন।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নূর হোসেন ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন।
ঘটনার ২৭ জন ও জব্দ তালিকার ২ জনসহ মোট ২৯ জন সাক্ষী ২ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন দুই আসামির বিরুদ্ধে।
১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ও মুসলিম লীগের নেতা লিয়াকত আলী ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন তিনি। পরে এলাকায় ফিরে একসময় লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন।
অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের রজব আলী ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ইসলামী ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে রজব আলী এলাকায় আলবদর বাহিনী গঠন করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলা হয় এবং ওইসব মামলার বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর তিনি ‘আমি আলবদর বলছি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
ইএস/এএসআর