ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে না পারা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
‘নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে না পারা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা’ বক্তব‌্য দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা /ছবি দীপু মালাকার

নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে না পারা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশে ৫ বছর শাসন করতে পারলে স্বাধীন-নিরপেক্ষ নির্বাচন কেন দিতে পারবে না? এটি রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা।

ঢাকা: নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে না পারা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশে ৫ বছর শাসন করতে পারলে স্বাধীন-নিরপেক্ষ নির্বাচন কেন দিতে পারবে না? এটি রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা।

এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পরে, যখনই ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়, তখনই বিচার বিভাগের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অথবা প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি, তাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নেওয়ার জন্য আলোচনার একটি খোরাক হয়ে যায়। বিচারপতিদেরকে নিয়ে আলোচনা আরম্ভ হয়ে যায়’।

‘আমরা শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখতে হলে বিচারপতিদের নিয়ে যদি আলোচনা হয়, তিনি নিরপেক্ষ, তিনি অনিরপেক্ষ। সাবেক প্রধান বিচারপতি যদি নিরপেক্ষ না হন, তিনি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিরপেক্ষ না হন, তাহলে তিনি যেসব রায় প্রদান করেছেন প্রত্যেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। সে আলোকে আমরা আলোচনা করে বললাম, এ আইনটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) দিয়ে নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা বজায় রাখা যাবে না। এখন সময়ের ব্যাপার’।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা তাদের নিরপেক্ষ নির্বাচন, তারা করতে পারেন কি-না, তারা দেখবেন। এটি আমাদের বিচার বিভাগের দায়িত্ব না’।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

দুই দিনব্যাপী বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন’ এরও উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।

সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, অ্যার্টনি জেনারেল, জেলা পর্যায়ের সকল স্তরের বিচারকরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমানে আপিল বিভাগে ৯ জন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৯ জন বিচারকের মধ্যে ৩ জন বিচারক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৪ জন বিচারক গুরুতর অসুস্থ। ফলে বিভিন্ন সময় বেঞ্চ গঠনের সময় আমাকে হিমশিম খেতে হয়। বেঞ্চ গঠনে এ জটিলতা আরো প্রকট হবে’।

তিনি বলেন, গত আগস্টে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আমি ৮ জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগে সরকারকে পরামর্শ দেই। দীর্ঘ চার মাসেও এ নিয়োগ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি’।

বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, নিম্ন আদালতে ৩৮৭টি পদ শূন্য রয়েছে। এ শূন্য পদে দ্রুত বিচারক নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং নির্মাণের সময় বিচারকদেরকে জড়িত করা হয়েছে। বিল্ডিং নির্মাণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দিতে হবে। বিল্ডিং নির্মাণে সমন্বয়হীনতার ফলে নির্মাণ কাজ তেমন অগ্রসর হয়নি। একজন বিচারককে যদি টেন্ডারবাজিতে ঢোকানো হয়, তবে তিনি আর বিচারক থাকবেন না। তিনি ব্যবসায়ী কিংবা অর্থলোভী হয়ে পড়বেন। বিচারকেরা যদি বড় ধরনের কেনা-কাটার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান, তাহলে বিচারক হিসেবে তার সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়, তিনি আর বিচারক থাকেন না’।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট এবং এটুআই এর যৌথ উদ্যোগে বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে। বিচার বিভাগের জন্য মনিটরিং ড্যাস বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। উচ্চ ও নিম্ন আদালতে ই-কোর্ট ব্যবস্থা চালু, ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেকর্ড ধারণ ও সংরক্ষণ, জেলা ভিত্তিক ও কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা চালু, দেশের বিচার ব্যবস্থায় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রচলন এবং বিচারিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের তিন বছর মেয়াদি ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে বহুদূর এগিয়েছে’।

তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ৩০ লাখ মামলা আছে। বর্তমানে যে জনবল আছে, তা দিয়ে এ মামলা নিষ্পন্ন করা দূরহ ব্যাপার। আর এজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প নিয়েছি’।

তিনি বলেন, ‘গত জুলাই মাসে একনেকে এ  প্রকল্প পেশ করেছি। ১০টি জেলায় পাইলট প্রকল্প নিয়ে প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পাইলট শব্দটি উঠিয়ে দিয়ে সব জেলায় ১৪০০ কোর্ট রুমকে ই-জুডিশিয়ারির আওতায় আনতে নতুন করে প্রকল্প তৈরি করতে বলেন। সম্প্রতি নতুন করে প্রজেক্টটি প্রণয়ণ করেছি। এটির প্রস্তাবিত বাজেট দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬শ’ ৬৩ কোটি টাকা। আশা করি, এটি অল্প সময়ের মধ্যেই একনেকে উপস্থাপন করা যাবে’।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ইতোমধ্যে ২২০টি ট্যাব বিচারকদের জন্য দেওয়া হয়েছে। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায়  আরও ২০০০টি ট্যাব/ল্যাপটপ দেওয়ার চেষ্টা করবো। দেশের সব কোর্টে বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা করা হবে। ৬৪ জেলার বিচারকদের বাসভবনে সিসিটিভি স্থাপন করা হবে’।  
 

**ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে ফের আহ্বান প্রধান বিচারপতির

** চালু হলো ‘বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন’

** জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন চলছে

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬

ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।