ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাগেরহাটের ১৩ রাজাকারের অভিযোগ আমলে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪১ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
বাগেরহাটের ১৩ রাজাকারের অভিযোগ আমলে

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাগেরহাটের কচুয়া ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৩ রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আগামী ০৭ আগস্ট এ মামলায় পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।

একই মামলার আসামি ওই ১৩ রাজাকার হলেন- খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, শেখ মো. উকিল উদ্দিন, শেখ  ইদ্রিস আলী, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার, মো. হাশেম আলী শেখ, মো. আজাহার আলী শিকদার ও মো. মকবুল মোল্লা।


 
তাদের মধ্যে খাঁন আকরাম হোসেন, ইদ্রিস আলী মোল্লা, শেখ মো. উকিল উদ্দিন ও মকবুল মোল্লা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
 
এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন ১৪ জন। তাদের মধ্যে মো. আব্দুল আলী মোল্লা গ্রেফতারের পর কারাবন্দি অবস্থায় মারা যাওয়ায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
 
বুধবার (৩১ মে ) চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে দাখিল করা সাতটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আমলে নেন।
 
গত ২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।
 
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ২০১৫ সালের ৪ জুন থেকে গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্তকাজ সম্পন্ন করে সাতটি ভলিউমে মোট এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন।

মোট ৬১ জন সাক্ষী দেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ৫৭ জন ঘটনার সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং তিনজন জব্দ তালিকার সাক্ষী।

গত বছরের ২৬ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ওই ১৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই সন্ধ্যায় বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আসামিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ
এক নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৬ মে  রাজাকার খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, উকিল শেখ, ইদ্রিস আলী শেখ এবং শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যকে নিয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলার চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালান। তারা ৪০/৫০টি বাড়ির সমস্ত মালামাল লুণ্ঠন, বাড়ি-ঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস, দু’জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করেন।

দুই নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ০৭ জুলাই রাজাকার কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান, রাজাকার সদস্য মো. হাশেম আলী শেখ, মো. আজাহার আলী শিকদার এবং মো. মকবুল মোল্লা বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালান। তারা অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেন।          

তিন নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর রাজাকার খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, উকিল শেখ, ইদ্রিস আলী শেখ এবং শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দু’জন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করেন।

চার নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর রাজাকার খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, উকিল শেখ, ইদ্রিস আলী শেখ এবং শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাজাকার কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান, রাজাকার মো. হাশেম আলী শেখ, মো. আজাহার আলী শিকদার এবং মো. মকবুল মোল্লা কচুয়া উপজেলার বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালান। তারা চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন।

পাঁচ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর রাজাকার খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, উকিল শেখ, ইদ্রিস আলী শেখ, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাজাকার কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান, মো. হাশেম আলী শেখ, মো. আজাহার আলী শিকদার এবং মো. মকবুল মোল্লা কচুয়া উপজেলার বিলকুল গ্রাম থেকে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায় আটক ও অপহরণ করেন। পরে মোরেলগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাঁটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করেন।

ছয় নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর রাজাকার কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান, মো. হাশেম আলী শেখ, মো. আজাহার আলী শিকদার, মো. মকবুল মোল্লা এবং আব্দুল আলী মোল্লা আরও ৭/৮ রাজাকারকে নিয়ে কচুয়া উপজেলার উদানখালী গ্রামে হামলা চালান। তারা স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করেন এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।

আসামিরাসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পের আসামি রাজাকার খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, উকিল শেখ, ইদ্রিস আলী শেখ এবং শেখ রফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল দীর্ঘদিন অবৈধভাবে তাসলিমাসহ চারজনকে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

সাত নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে রাজাকার কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান, মো. হাশেম আলী শেখ, মো. আজাহার আলী শিকদার, মো. মকবুল মোল্লা এবং আব্দুল আলী মোল্লা আরও ৭/৮ জন রাজাকারকে নিয়ে কচুয়া উপজেলার গজালিয়া বাজারে হামলা চালান। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকেন। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানী কর্মকারকে জোরপূর্বক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকে রাখেন।

আসামিরাসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পের খাঁন আশরাফ আলী, খাঁন আকরাম হোসেন, সুলতান আলী খাঁন, রুস্তম আলী মোল্লা, ইদ্রিস আলী মোল্লা, মকছেদ আলী দিদার, উকিল শেখ, ইদ্রিস আলী শেখ এবং শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, কমলা রানী কর্মকারসহ চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। প্রায় একমাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।